প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৪ ২১:৪৭ পিএম
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৪ ২২:২৬ পিএম
দেড় যুগ আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে চাকরি হয় এসএম আলমগীর কবীরের। বর্তমানে প্রেষণে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে কাজ করছেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে। দেড় যুগ পর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাকরি নিতে তিনি ব্যবহার করেছেন পিএচডির ভুয়া সনদ। সনদ জালিয়াতির অভিযোগে এই কর্মকর্তার নামে মামলা করেছে দুদক।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুদকের সহকারী পরিচালক সাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ মামলাটি দায়ের করেন। আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, আসামি এসএম আলমগীর কবীর ২০০৬ সালের ২৫ মে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের পিএসসি বরাবর আবেদন করেন। সহযোগী অধ্যাপক পদে সরাসরি ১০ শতাংশ কোটায় তিনি এই আবেদন করেন। দাখিলকৃত আবেদনের সঙ্গে ক্যামডেন বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসের পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণের সনদপত্রের অনুলিপি দাখিল করেন।
দুদক অনুসন্ধানে জানা যায়, আলমগীর কবীরের পিএইচডি ডিগ্রি সনদের সঠিকতা যাচাই করে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনকে অনুরোধ জানায় দুদক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুদককে জানায়, মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে যে, তারা শুধু নিবন্ধিত বেসরকারি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য রাখে (পিএইচইডি)। তাদের সাম্প্রতিক রেকর্ডের ভিত্তিতে, ক্যামডেন বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসটি সেই দেশের উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতায় নিবন্ধিত নয়। অর্থাৎ ক্যামডেন নামের কোনো রেজিস্ট্রার্ড শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ায় নেই।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, আসামি এসএম আলমগীর কবীরের দাখিল করা পিএইচডি ডিগ্রির সনদ জাল বা ভুয়া। অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, ১০ শতাংশ সরাসরি কোটায় সহযোগী অধ্যাপক পদে চাকরির আবেদনের জন্য ন্যূনতম আট বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়। কিন্তু তার চেয়ে ২ বছর ৩ মাস ১১ দিনের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আট বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা দেখিয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের সহযোগী অধ্যাপক (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) পদে আবেদন করেন।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৬ সালের ২০ এপ্রিল বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১০ শতাংশ সরাসরি কোটায় সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান পদে জনবল নিয়োগ করা হবে মর্মে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে ডক্টরেট ডিগ্রিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতকোত্তর বা দ্বিতীয় শ্রেণির সম্মানসহ কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যূনতম আট বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ ছাড়া প্রার্থী যেসব সরকারি-বেসরকারি কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্জিত শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ডিগ্রি পর্যায়ের মর্মে অভিজ্ঞতার সনদে অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, আসামি এসএম আলমগীর কবীর বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত চাকরিপ্রার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী যোগ্যতার চেয়ে ২ বছর ৩ মাস ১১ দিনের শিক্ষকতার ঘাটতি পূরণের জন্য জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। আসামির অভিজ্ঞতার সনদ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই অভিজ্ঞতার সনদটি বিজ্ঞাপ্তির শর্তমোতাবেক যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে সংগৃহীত নয় এবং উক্ত সনদে যে শর্তাবলি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যেসব কাগজপত্র যুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক, সেসবের কোনো কিছুই উল্লেখ ছিল না।
প্রসঙ্গত, এসএম আলমগীর কবীর বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সহযোগী অধ্যাপক পদ থেকে প্রেষণে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এপিএস এবং তৎপরবর্তীতে তৃতীয় সচিব হিসেবে বাংলাদেশ হাইকমিশন, মালয়েশিয়ায় কাজ করেছেন। বর্তমানে প্রেষণে প্রকল্প পরিচালক, ইমপ্যাক্ট তৃতীয় পর্ব, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর চাকরিতে নিয়োজিত আছেন। জালিয়াতি প্রমাণ হওয়ায় তার নামে মামলা করেছে দুদক।