র্যাবের ব্রিফিং
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৪ ১৩:২২ পিএম
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৪ ১৪:১২ পিএম
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার কিশোর গ্যাংয়ের পাঁচ সদস্য। প্রবা ফটো
দুই কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্যের দ্বন্দ্বে রাজধানীর পল্লবী থানার ১১ নম্বর এলাকায় মো. ফয়সালকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। একই ঘটনায় আহত রানা ওরফে রানু নামের অপর এক তরুণ চিকিৎসাধীন।
র্যাব জানায়, মাদক কেনাবেচা, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা দ্বন্দের জেরে ‘পেপার সানী’ গ্রুপ ও ‘গালকাটা রাব্বি’ গ্রুপ নামে পৃথক গ্যাং তৈরি হয়। এরপর থেকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে বিভিন্ন সময় দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হতো। চলমান এই বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের দুজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পার্টি উদযাপন করেন একটি গ্রুপের সদস্যরা। পার্টি শেষে যখন শুনতে পান আহতদের মধ্যে একজন মারা গেছে, তখন তারা দেশের বিভিন্নস্থানে আত্মগোপনে চলে যায়।
এ ঘটনায় শুক্রবার (২২ মার্চ) নরসিংদী ও গাজীপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং লিডারসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তাররা হলেন ফয়সাল হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা মো. আকাশ ওরফে টান আকাশ, ফজলে রাব্বি ওরফে হিটার রাব্বি ওরফে গালকাটা রাব্বি, মো. ইমরান, মো. রাসেল কাজী ও মো. নয়ন। গ্রেপ্তারের পর রাব্বি ও আকাশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল সংলগ্ন একটি বাগান থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি ও একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়।
শনিবার (২৩ মার্চ) বেলা ১১টায় রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
ঘটনার বিবরণে তিনি জানান, গত ১৬ মার্চ সন্ধ্যায় পল্লবী এলাকায় দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে ফয়সাল নামে এক যুবককে হত্যা করে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে র্যাব। এর পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব-৪ ও র্যাবের -১১ যৌথ অভিযানে গাজীপুর এবং নরসিংদী থেকে মূল আসামিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাবের পরিচালক বলেন, গ্রেপ্তাররা এবং ভিকটিম একসময় মিরপুর এলাকার কিশোর গ্যাং ‘পেপার সানী’ গ্রুপের সদস্য ছিলেন। গালকাটা রাব্বি পেপার সানী গ্রুপের হিটম্যান হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু ৪-৫ মাস আগে মাদক কেনাবেচার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সিনিয়র-জুনিয়র, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের কোন্দল ঘিরে রাব্বি ওই গ্রুপ থেকে বের হয়ে ‘গালকাটা রাব্বি’ নামে পৃথক গ্রুপ তৈরি করে। এরপর থেকেই দুই গ্রুপের মধ্যে প্রায়ই মারামারি হতো। ঘটনার প্রায় ১ মাস আগে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যরা গালকাটা রাব্বিকে মারধর করে পায়ের রগ কেটে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু স্থানীয় লোকজন দেখে ফেলায় তারা রাব্বিকে উদ্ধার করে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গত ১৫ মার্চ দুই গ্রুপের মধ্যে আবার মারামারি হয়। এতে রাব্বি গ্রুপ ক্ষিপ্ত হয়ে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যদের উচিত শিক্ষার দেওয়ার পরিকল্পনা করে। এ ছাড়া ঘটনার দিন পেপার সানী গ্রুপের সদস্যরা রাব্বি গ্রুপের একজন সদস্যের বোনকে ইভটিজিং করলে রাব্বি আরও ক্ষিপ্ত হয়।
তিনি বলেন, এর মধ্যে গ্রেপ্তাররা জানতে পারে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যরা একটি ইফতার পার্টিতে গেছে। ভিকটিম ফয়সাল ও রানা স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে ইফতার পার্টি শেষে ফেরার পথে পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশীয় অস্ত্রসহ তাদের ওপর হামলা করে রাব্বি গ্রুপের সদস্যরা। এ সময় ফয়সাল ও রানাকে প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, পরে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় গ্রুপের এক সদস্যের বাসার ছাদে গিয়ে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যকে উচিত শিক্ষা দিতে পারায় পার্টি করে উদযাপন করেন। পার্টি শেষে তারা জানতে পারে ফয়সাল হাসপাতালে মারা গেছে ও রানা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গ্রেপ্তার এড়াতে তারা প্রথমে নেত্রকোণায় আত্মগোপন করে দুই দিন অবস্থান করে। পরে মুন্সীগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার রাব্বির বিরুদ্ধে ডাকাতি, মারামারি ও মাদক সংক্রান্তে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৪টি মামলা রয়েছে এবং ইতোপূর্বে একাধিক বার কারাভোগ করেছে। আকাশের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা রয়েছে, সেও একাধিকবার কারাভোগ করেছে।
এ ছাড়া, গ্রেপ্তার রাসেল, ইমরান ও নয়ন কিশোর গ্যাং ‘গালকাটা রাব্বি’ গ্রুপের সদস্য। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মারামারি ও মাদক সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাব্বি গ্রুপে ১৪-১৫ জন সদস্য রয়েছে। যাদের অধিকাংশই আগে পেপার সানী গ্রুপের সদস্য ছিল। পরে তারা সেই গ্রুপ থেকে বের হয়ে নতুন গ্রুপে যোগ দেয়। এখন পর্যন্ত তাদের ইন্ধনদাতা বা মদদদাতার তথ্য পাওয়া যায়নি। পেপার সানী গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধেও আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।