প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪ ২১:১৫ পিএম
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৪ ২১:৫২ পিএম
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনের চেয়ে বেশি ছাত্রী কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) এক জরিপ থেকে জানা গেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৭ শতাংশ, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোয় ৭৬ শতাংশ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৬ শতাংশ ও মেডিকেল কলেজে ৫৪ শতাংশ ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হন।
রবিবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ব্লাস্ট আয়োজিত 'যৌন হয়রানি নিরসনে উচ্চ আদালতের নিদের্শনা : বর্তমান অবস্থা ও বাস্তবায়নে করণীয়' শীর্ষক মতবিনিময় সভায় জরিপের ফল তুলে ধরেন ব্লাস্টের ট্রাস্টি তাহমিনা রহমান।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ সহপাঠী ও শিক্ষকদের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, হয়রানি ও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের শিকার হচ্ছেন ছাত্রীরা। তা ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৫০ শতাংশের বেশি নারী অনলাইন সহিংসতার শিকার হন।‘
তাহমিনা রহমান বলেন, ‘নিজ শ্রেণির নয়, অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরাই ছাত্রীদের বেশি হয়রানি করেন। দুই-তৃতীয়াংশ ছাত্রী তাদের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হন। আর ছেলে সহপাঠীদের মাধ্যমে ২৫ শতাংশ এবং ক্যাম্পাসে আসা অন্য পুরুষদের মাধ্যমে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ ছাত্রী হয়রানির শিকার হন। এ ছাড়া নিজেদের বিভাগ ও অন্য বিভাগের পুরুষ শিক্ষকদের মাধ্যমেও ছাত্রীরা হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। ক্লাস চলাকালীন, ক্লাস না থাকার সময়, করিডোর, খেলার মাঠ প্রভৃতি স্থানে হয়রানির ঘটনা ঘটে।’
যৌন হয়রানি প্রতিরোধে উচ্চ আদালত ১১ দফা নির্দেশনা দিলেও তার বাস্তবায়ন নেই জানিয়ে জরিপে বলা হয়, ইউজিসি অনুমোদিত ১৫৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৭টি (৬১%) বিশ্ববিদ্যালয় অভিযোগ কমিটি গঠন করেছে। এর মধ্যে সরকারি ৪০টি ও বেসরকারি ৫৭টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। ৬২টি (৩৯%) বিশ্ববিদ্যালয় অভিযোগ কমিটি গঠন করেনি। জরিপে ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয় অভিযোগ কমিটি প্রসঙ্গে তথ্য দিয়েছে বলে জানান তাহমিনা।
তিনি বলেন, ‘সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নির্দেশে রেজিস্ট্রাররা তাদের পছন্দমতো সদস্য নির্বাচন করে অভিযোগ কমিটি গঠন করেন। ৭৫ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় অভিযোগ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানেনি। এ বিষয়ে কাজের যোগ্যতা ও আগ্রহ বিবেচনা করা হয় না।’ অভিযোগ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে যৌন হয়রানি ও উচ্চ আদালতের ১১ দফা নির্দেশনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে বলে জানান তাহমিনা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলোরও দায় আছে। কমিটিগুলোকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিতে হবে। প্রত্যেক কমিটিতে একজন নারী সদস্য থাকার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু তা নেই।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি নিরসনে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও নির্দেশনা বিষয়ে সচেতনতা, জবাবদিহি ও মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে।’
সুপারিশ
যৌন হয়রানি প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ে টোল ফ্রি হটলাইন নম্বর ও অনলাইনে অভিযোগ দায়েরের ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন বলে জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি, ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণা চালানো, সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে লিঙ্গবৈষম্য ও যৌন সহিংসতা বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে বলা হয়েছে। তা ছাড়া অভিযোগ বক্স রাখার পাশাপাশি ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত উভয়েরই পরিচয় প্রকাশে গোপনীয়তা অবলম্বন, মিথ্যা অভিযোগ দায়েরের প্রমাণ পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।