× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রকল্পেও খুলছে না যানজটের জট

ফয়সাল খান

প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪ ০৮:৩৬ এএম

আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৪ ১০:৪১ এএম

প্রকল্পেও খুলছে না যানজটের জট

গত এক যুগে ঢাকায় শুধু ফ্লাইওভার নির্মাণ করেই খরচ করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুক্ত হয়েছে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপেসওয়ে। চালু হওয়ার অপেক্ষায় আছে বাস র‌্যাপিট ট্রানজিট (বিআরটি)। এতকিছুর পরও যানজট থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী। ফলে এই রমজানে সৃষ্টি হয়েছে চরম দুর্ভোগ। শুধু যানজটের কারণেই অনেকে রাস্তায় ইফতার করতে বাধ্য হচ্ছেন। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘনবসতির এ নগরে ফ্লাইওভার করে যানজট নিরসন করা যাবে না। যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ফ্লাইওভার করা হয়েছে, এতেও যানজটের সমাধান দেখছেন না তারা। তাদের মতে, বিআরটি ও মেট্রোরেলের মতো ব্যবস্থা গণপরিবহনে যুক্ত হলে যানজট অনেকাংশে কমে যেতে পারে। এরই মধ্যে উত্তরা, মিরপুর, আগারগাঁও এলাকার মানুষ মেট্রোরেলের মাধ্যমে যানজটমুক্ত চলাচল করতে পারছে। তাছাড়া সার্ভিস রুট প্রশস্তকরণ, পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা, বাস ও ট্রাক টার্মিনালে শৃঙ্খলা, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থার পাশাপাশি সড়ক ও ফুটপাথ দখলমুক্ত করারও তাগিদ দিয়েছেন তারা। 

জানা গেছে, বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত নির্মিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে সরকার। এ নিয়ে সেতু কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে এবং ভ্রমণের সময় ও খরচ হ্রাস পাবে। এরই মধ্যে ঢাকার কুড়িল, বনানী, ফার্মগেট ও বিএফডিসিতে এই এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয়েছে। তবে নিচের সড়কগুলোর যানজটের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। টোল পরিশোধ করে কিছু রাস্তা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারলেও নিচের সড়কে এসে ঠিকই যানজটে আটকা পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। 

এদিকে ঢাকার ৮টি স্থানে একাধিক ফ্লাইওভার নির্মাণ হয়েছে। এসব ফ্লাইওভারে কোথাও কোথাও দুই তলা বা তিনতলায় রূপ নিয়েছে সড়কগুলো। প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার ২০১৩ সালে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। একই বছরে খুলে দেওয়া হয় প্রায় ৩০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ কুড়িল বহুমুখী ফ্লাইওভার। দীর্ঘ ভোগান্তির পর ২০১৭ সালে মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভার সাধারণের জন্য উন্মক্ত করা হয়। বহুমুখী এ ফ্লাইওভার নির্মাণে ১ হাজার ২১৮ কোটি টাকা খরচ হয়। গত বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি ১ হাজার ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৩৩৫ মিটার দীর্ঘ কালশী ফ্লাইওভার চালু করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ইসিবি স্কোয়ার থেকে কালশী পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭০ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে। তাছাড়া নগরীর মহাখালী, খিলগাঁও, বনানী, এলাকায়ও যানজট নিরসনের জন্য ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি বিআরটি প্রকল্পের অধীনে বিমানবন্দর থেকে জয়দেপুর পর্যন্ত আরও ৭টি ফ্লাইওভার চালু করা হয়েছে।

স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যালের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের পেছনে প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে।

তাছাড়া ইউটার্ন ও ইউলুপসহ ছোটখাটো বিভিন্ন প্রকল্প এবং সড়ক উন্নয়নের খরচ তো আছেই। এভাবে হাজার হাজার কোটি খরচ করেও যানজট থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর। প্রতিদিন সড়কে বসেই কয়েক লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। রমজান মাসে সেই যানজট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামছুল হক মনে করেন, যানজট কমাতে হলে গণপরিবহনে গুরুত্ব দিতে হবে। এর একটি বড় সমাধান হতে পারে মেট্রোরেল বা বিআরটি। এতে কম সময়ে অনেক মানুষ সহজেই গন্তব্যে যেতে পারবে। 

তিনি বলেন, ফ্লাইওভার করে যানজট কমানো যাবে না। বিশাল বিশাল ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে, অথচ এ থেকে বের হওয়ার পথ সরু। অনেকটা বোতলের মতো। সার্ভিস সড়কগুলো সংকীর্ণ হওয়ায় যানজট নিরসন হচ্ছে না। 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, রাজধানী ঢাকার রাস্তার সক্ষমতা যতটুকু তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি গাড়ি চলছে। উড়াল সড়ক ও এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করলেও কাজে আসবে না, যদি পরিবহনের সক্ষমতা না থাকে। এক্ষেত্রে প্রধান কাজ হলো ছোট বাহন কমিয়ে গণপরিবহন বাড়ানো। তার মতে, সবাইকে গণপরিবহনের দিকে আগ্রহী করে তুলতে হবে। 

তিনি বলেন, গণপরিবহনের সমস্যা ও যানজটের কারণে অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ির দিকে ঝুঁকছেন। রাজধানীজুড়ে মানসম্মত বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করতে পারলে যানজটের সমস্যা নিরসন সম্ভব। বড় প্রকল্প না নিয়ে ঢাকার পরিবহনকে ঢেলে সাজানো জরুরি। 

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআইআর) পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, ঢাকা অনেক আগেই সড়কের সক্ষমতা থেকে গাড়ির পরিমাণের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। নতুন নতুন গাড়ি নামলেও সড়কের পরিমাণ বাড়ছে না। সড়কের সক্ষমতার চেয়ে গাড়ির সংখ্যা বেশি হওয়ায় যানজটের পরিমাণ বাড়ছে। 

তিনি বলেন, অতিমাত্রার যানজটের পেছনে অনিয়ন্ত্রিত ছোট ছোট যান প্রধান দায়ী। বিআরটিএর এখনই উচিত এসব ছোট যানবাহনের নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ করা। ট্রাফিক পদ্ধতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অবস্থা আরও ভয়াবহ হতে পারে।

এদিকে ২০২০ সালে করা বুয়েটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার সড়কে পিক টাইমে চলাচল করা যানবাহনের গড় গতি হচ্ছে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। যা একজন সাধারণ মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কম। একজন সুস্থ মানুষ স্বাভাবিকভাবে হাঁটলে প্রতি ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার যেতে পারে। যেখানে দুই বছর আগেও পিক টাইমে গাড়ির গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার। গত চার বছরে যান চলাচলের গতি আরও কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

ঢাকার সড়ক-মহাসড়ক, অলিগলি ও ফ্লাইওভারসহ সব খানে যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে। রোজার শুরু থেকে স্বস্তির হাতিরঝিলেও যানজট তৈরি হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে বিরক্ত হচ্ছেন যাত্রীরা। প্রায় দিন গাড়িতে বসে অনেককেই ইফতার সারতে হচ্ছে। 

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইফতারের আগে রাজধানী ঢাকার বিজয় সরণি মোড়, ধানমন্ডি ২৭ ও ৩২ নম্বর, সায়েন্সল্যাব মোড়, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, শাহবাগ, গুলিস্তান, পল্টন মোড়, আজিমপুর, কামরাঙ্গীরচর, মগবাজার, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, আগারগাঁও, মিরপুর, প্রগতি সরণি, মালিবাগ, শান্তিনগরসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজট দেখা যাচ্ছে। ঈদের কেনাকাটাকে কেন্দ্র করে শপিংমলগুলোর আশপাশের সড়কেও যানজট হচ্ছে। ঈদযাত্রায়ও তীব্র যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

গত বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সচিবালয় থেকে ইফতার করতে বাসার উদ্দেশে রওনা দেন সরকারি কর্মচারী আরিফুর রহমান। দক্ষিণখান বাসায় পৌঁছার আগেই মাগরিবের আজান হয়ে যায়। ফলে ফুটপাথ থেকে খোলা খাবার কিনে ইফতার করতে হয় তাকে। আলাপকালে তিনি জানান, অফিসের কাজ শেষ করতে করতে অনেক সময় দেরি হয়ে যায়। পল্টন থেকে বাসে চড়লে দেড় ঘণ্টায়ও বিমানবন্দর পৌঁছানো যায় না। অনেকদিন বাসে বসেই ইফতার করতে হয়, নামাজ পড়তে হয়। 

শুধু বাসের যাত্রীই নয়; ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি স্কুটার, মোটরসাইকেলের যাত্রীরাও যানজটে পড়ে থাকছেন। দুই-আড়াই ঘণ্টায়ও তারা গন্তব্যে পৌঁছতে পারছেন না। সরকারি একটি সংস্থার যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, গাড়ি চলাচলের জন্য তো জায়গা লাগবে। রাস্তায় সেই জায়গাই তো নেই। তার বেশিরভাগ ভবনে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা নেই। অনেক ভবনে লেখা অতিথির গাড়ি বাইরে রাখুন। ছোট পার্কিং করে বড় বড় শপিংমল করা হয়েছে। পার্কিং ছাড়াই হাসপাতাল-ক্লিনিক করে ফেলা হচ্ছে। ফলে চাপ পড়ছে সড়কে। 

সম্প্রতি এক সমন্বয় সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যানজট নিরসনে সরকার আন্তরিক। কিন্তু গাড়ি বাড়লে যানজট হবে না, এ কথা বলা যাবে না।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা