প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪ ২২:১৯ পিএম
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৪ ২২:২৪ পিএম
বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে গত ফেব্রুয়ারিতে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণহানির পর রাজধানীতে রেস্তোরাঁগুলোতে অভিযান বেড়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস, কল-কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও রাজউকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিচ্ছিন্নভাবে এসব অভিযান চালায়। তাদের মধ্যে ছিল না কোনো সমন্বয়। ফলে কোথাও কোথাও অভিযানের নামে চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এখন থেকে আবাসিক ভবনের রেস্তোরাঁগুলোয় ভোক্তা অধিদপ্তরের নেতৃত্বে সমন্বিতভাবে অভিযান পরিচালনা করবে সংস্থাগুলো।
রবিবার (৩১ মার্চ) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, শুধু রাজধানীর রেস্তোরাঁয় খাদ্যের মান ও নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে সমন্বিতভাবে তদারক করবে সংস্থাগুলো। এর বাইরে আবাসিক ভবনে রেস্তোরাঁ তৈরির অনুমোদন, লাইসেন্স দেওয়া বা অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ কিনা সেসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নিজেদের মতোই কাজ করবে।
সভায় সূচনা বক্তব্যে এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ৫ মার্চ সভা হয়। পরে ২১ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হয়। সেই সভায় আবাসিক ভবনের রেস্তোরাঁয় সম্মিলিতভাবে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অভিযানের সমন্বয় করবে ভোক্তা অধিদপ্তর।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়য়ের সভায় ছয়টি কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— প্রত্যেক দপ্তর বা সংস্থার অভিযানের পর অভিযানের স্থান, তারিখ ও ফলাফল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আপলোড করবে; সংস্থা তাদের কার্যক্রমের একটি চেকলিস্ট তৈরি করে শেয়ার করবে এবং নিজ নিজ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে; ভোক্তা অধিদপ্তরের ডিজি ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা এবং রেস্তোরাঁ মালিকদের সঙ্গে সভা করে কমপ্ল্যায়েন্স বিষয়ে ধারণা দেবেন; ভোক্তা অধিদপ্তরকে খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং ট্রেড লাইসেন্সের তালিকা সরবরাহ করবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন; অভিযানে শিক্ষামূলক এবং অনুপ্রেরণামূলক লিফলেট বিতরণ করা হবে; অভিযান পরিচালনা সমন্বয়ের জন্য দুই মাস পরপর সভা করতে হবে।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, মোবাইল কোর্টের উদ্দেশ্য কি জরিমানা? এটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে অপমানজনক। আমাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা দরকার। অভিযান পরিচালনার সময় এফবিসিসিআই, রেস্তোরাঁর নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকদের রাখতে হবে। মালিকদের কেন লাইসেন্স নেই জিজ্ঞেস করে ম্যাজিস্ট্রেটরা হাতকড়া দিয়ে গাড়িতে তুলে নেন। অথচ লাইসেন্সের জন্য দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। জরিমানা না দিলে জেলে পাঠানো হয়। বিএসটিআই অভিযানের নামে চাঁদাবাজি করে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, সব রেস্তোরাঁকে সরকারি সনদ নিতে হবে। মাত্র ২০ শতাংশ রেস্তোরাঁ সমিতির সদস্য। বাকি ৮০ শতাংশের দায় তারা কেন নেবে? দেশে রেস্তোরাঁশিল্পে প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে। এটিকে তো গলাটিপে মেরে ফেলা যাবে না। যেখানে সমস্যা আছে তা সমন্বিতভাবে সমাধান করতে হবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগ) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আবু ইউসুফ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুব হাসান, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মো. নিয়াজ আলী চিশতি, ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার আঁখি শেখ, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক মো. আব্দুস সোবহান, বিএসটিআই এর উপ-পরিচালক মো. রিয়াজুল হক, কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধি ড. মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার প্রমুখ।