প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪ ২২:৫২ পিএম
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৪১ এএম
প্রতীকী ছবি
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি বাসায় শেকলে বেঁধে রেখে এক তরুণীকে ২৫ দিন ধরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার রাতে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ট্রিপল নাইনে অভিযোগ পেয়ে মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের ১৬ নম্বর রোডের ৩৯ নম্বর বাসার চতুর্থ তলা থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনা একই দিন চারজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। তবে অভিযুক্তদের কাউকে পুলিশ এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
মোহাম্মদপুর থানা সূত্রে জানা গেছে, ২৩ বছরের ওই তরুণী শনিবার রাতে নিজেই বাদী হয়ে চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। চার আসামি হলেন সান (২৬), হিমেল (২৭) ও রকি (২৯) এবং সহায়তাকারী সালমা ওরফে ঝুমুর (২৮)।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘ দিন আগে ওই তরুণীর মা-বাবার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। আলাদা হওয়ার পর তারা নতুন করে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। এরপর মেয়েটি তার মেজ বোনের কাছে থেকে বড় হয়। সে সময় ভগ্নিপতির মাধ্যমে এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরে ওই যুবকের মাধ্যমে প্রবাসীর স্ত্রী সালমা ওরফে ঝুমুরের সঙ্গে সখ্য হয় তরুণীর। ৫/৬ মাস আগে বোনের বাসা ছেড়ে তার (সালমা) সঙ্গে নবীনগরের ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠে ওই তরুণী।
মামলায় বলা হয়, সালমার মাধ্যমে আসামি সানের সঙ্গে পরিচয় হয় তরুণীর। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সুবাদে সানের দুই বন্ধু হিমেল ও রকির সঙ্গেও পরিচয় হয় তার। চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকালে হিমেল, সান ও রকি ওই বাসায় যায়। পরে ওই তরুণীর রুমে ঢুকে শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেয় সান। এতে তরুণী রাজি না হওয়ায় বিয়ের আশ্বাসে তাকে সান ধর্ষণ করে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময় তাকে কয়েকবার ধর্ষণ করা হয়। এক পর্যায় তরুণী মামলা করার হুমকি দিলে সান যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ৫ মার্চ দুপুরে দুই বন্ধু হিমেল ও রকিকে নিয়ে ওই বাসায় এসে সান তাকে সারপ্রাইজ দেবে জানায়। সালমা এ সময় খাবার আনার কথা বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়। সানের কথায় চোখ বন্ধ করলে তারা তিনজন মিলে তার হাত, পা ও চোখ বেঁধে ফেলে এবং মুখে কসটেপ লাগিয়ে ফেলে। পরে সালমার কথায় হিমেলকে পাহারায় রেখে অন্যরা শেকল আনার জন্য বাইরে চলে যায়। এ সময় হিমেল তাকে ধর্ষণ করে।
সেই দিন থেকে শেকল দিয়ে তার হাত ও পা বেঁধে রাখা হয় দাবি করে ওই তরুণী মামলায় অভিযোগ করেন, এক দিন পর ৭ মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে রকি বাসায় এসে তাকে ধর্ষণ করে। খাবার এবং বাথরুমে যাওয়া সময় সালমা শুধু পায়ের শেকল খুলে দিত। পরদিন ৮ মার্চ দুপুরে হিমেল ও সান বাসায় এসে তাদের মোবাইল থেকে কিছু অশ্লীল ভিডিও দেখিয়ে একই অঙ্গভঙ্গি করতে বলে। ওই দিন থেকে ২৮ মার্চ দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সান অশ্লীল কার্যকলাপ করে এবং পর্যায়ক্রমে ওই তিনজন তাকে ধর্ষণ করে এবং একে অপরে ভিডিও করে। এ সময় সালমা তাদের সহায়তা করে।
গত ৩০ মার্চ রাতে বাসায় কেউ না থাকার সুযোগে জানালা দিয়ে চিৎকার করে স্থানীয় এক পথচারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে মেয়েটি। তিনি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ ফোন করলে পুলিশ স্থানীয়দের নিয়ে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান রবিবার (৩১ মার্চ) রাতে বলেন, ওই তিন যুবক প্রায় ২৫ দিন তাকে আটকে রেখে ধর্ষণের পাশাপাশি পাশবিক যৌন নির্যাতন চালায়। শনিবার রাতে ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে তরুণীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় শেকল হাত-পা বাঁধা ওই তরুণীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।