রাজধানীর হাজারীবাগের ঝাউচর এলাকার ব্যবসায়ী হাসান মোল্লা। টিন বাঁশের দোকানে থরে থরে গুছিয়ে রেখেছিলেন নানা ধরনের ভাঙ্গারি। উদ্দেশ্যে ছিল ঈদের পরে বিক্রি করবেন। কিন্তু ঈদের দ্বিতীয় দিনে সব পুড়ে শেষ। নিজেরে চোখের সামনে ব্যবসার পুঁজি পুড়তে দেখে আহাজারি করছেন হাসান ও তার পরিবারের সদস্যরা।
হাসান বলেন, দোকানে ভাঙ্গারি, কার্টুন, পলিথিনসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। সব কিছু পুড়ে শেষ। আমার সব শেষ। আমি পথে বসে গেছি।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে লাগা আগুনে পুড়েছে সব। মাত্র ৫০ মিনিটের আগুনে মাদ্রাসা, মসজিদসহ অন্তত ১৫টি দোকান পুড়েছে। যার বেশির ভাইগই বন্ধ ছিল। ফায়ার সার্ভিসের ৭ ইউটিনের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও রক্ষা হয়নি কিছুই।
ঝাউচর মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হাজারীবাগ এলাকার বেড়িবাধ লাগোয়া জামিয়া ইসলামিয়া দারুস্ সুন্নাহ মাদ্রাসা ও এতিম খানা। একই সঙ্গে আলহাজ সামছুস হুদা জামে মসজিদ। আগুনের কারণে মাদ্রাসার সব পুড়ে গেছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুড়ে যাওয়া, কাপড়, বিছানা ও পবিত্র কুরআনসহ বিভিন্ন খাতা বই। স্থানীয়রা ছাত্রদের রেখে যাওয়া ট্রাঙ্ক সরাতে সহযোগিতা করছেন।
মসজিদের খতিব ও মাদ্রাসার শিক্ষক ফরিদ আহমেদ বলেন, ঈদের ছুটিতে মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। শুক্রবার হওয়ায় আমরা জুমা নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ পাশের একটি পলিথিন ও কার্টুনের গোডাউন থেকে আগুন লাগে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে যাওয়ায় মাদ্রাসার সব কিছু পুড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসায় ২৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী ছিল। ঈদের ছুটিতে শিক্ষার্থীরা চলে গেলেও তাদের ট্রাঙ্ক, কাপড় ও বিছানাপত্র মাদ্রাসায় ছিল। ছাত্রদের রেখে যাওয়া কুরআন, হাদিসহ অনেক বই ছিল। শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা চাল, ডালসহ সব কিছুই পুড়ে গেছে।
রান্না চলছিল কি না জানতে চাইলে ফরিদ আহমেদ বলেন, মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় কয়েকদিন ধরে কোনো ধরনের রান্না হচ্ছিল না। মাদ্রাসা কেউ নেই তাই কার জন্য রান্না হবে।
এ দিকে মসজিদের পাশে দোকানি ও বাসিন্দারা বলছেন, মাদ্রাসার ভেতর থেকে আগুন লেগেছে। এখন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ পলিথিনের গোডাউনের দায় দিচ্ছেন।
আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জোন ১ এর উপ সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, হাজারীবাগ ঝাউচরে ১২টার দিকে ভাঙ্গারি দোকানে আগুন লাগে। হাজারীবাগ ফায়ার স্টেশনসহ আশপাশের ৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতার কারণে আশপাশে আগুন ছড়াতে পারেনি। আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি।কি ধরনের স্থাপনা ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে প্লাটিকের ভাঙ্গারী দোকান ছিল। প্রচুর কাগজ ছিল। যার ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আর এখানে পানির স্বল্পতা ছিল, দূরে থেকে পানি আনতে হয়েছে। তারপরেও আমাদের প্রচেষ্টায় আগুণ ছড়িয়ে যেতে পারিনি।