নওগাঁ থেকে নাগরিক সাংবাদিক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২২ ১৬:৪৯ পিএম
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২২ ২০:০৩ পিএম
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, উৎসব ও আনন্দে উদযাপিত হলো আদিবাসীদের জীবন, জীবিকা ও সাংস্কৃতিক মেলা
দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, উৎসব ও আনন্দে উদযাপিত হলো আদিবাসীদের জীবন, জীবিকা ও সাংস্কৃতিক মেলা ২০২২। ভার্চুয়ালি মেলার উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। গত ২৩ নভেম্বর (বুধবার) নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর সরকারি মডেল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই আয়োজন করা হয়। সমতলের আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সমাজের মূলধারার মানুষকে সংবেদনশীল করার লক্ষ্যে মূলত দিনব্যাপী এই মেলার আয়োজন করা হয়।
দাতা সংস্থা হেক্সস/ইপারের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাব্রতী সংগঠন ডাসকো ফাউন্ডেশন রিভাইভ প্রকল্পের আওতায় মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী নারী প্লাটফর্মের সভানেত্রী সাগরিকা বিশ্বাস। এ ছাড়াও নিয়ামতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ আহম্মেদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফারুক সুফিয়ান, হেক্সস/ইপার বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ডোরা চৌধুরী, ডাসকো ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী অফিসার মো. আকরামুল হক প্রধানসহ স্থানীয় আদিবাসী নেতা উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে মেলার উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাড়ৈ সম্প্রদায়ের নেত্রী পারুল বাড়ৈ।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আদিবাসীদের মিলনমেলা হলো আজ। এরকম আয়োজন সবসময় দেখা যায় না। ব্যতিক্রমধর্মী এই আয়োজনগুলো বেশি বেশি হওয়ার প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, একটি কুচক্রী মহল আদিবাসীদের ঐক্য নষ্ট করতে চায়। এই ব্যাপারে আদিবাসীদের সোচ্চার থাকতে হবে।
আদিবাসী নারী প্লাটফর্মের সভানেত্রী সাগরিকা বিশ্বাস বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নানা সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ ও যুবারা মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং তাদের নিজ নিজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছেন। সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ও মৌলিকত্ব মানুষের অন্যতম অধিকার। সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সকল জাতিসত্ত্বার সংস্কৃতি, ঐতিহ্যগত প্রথা, জীবনাচার টিকিয়ে রাখতেই আমাদের এই সম্মিলিত প্রয়াস।
এ ছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তা বলেন, দিন যতই গড়াচ্ছে, ততই আধুনিকতা ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আদিবাসীর সংস্কৃতি ও তাদের জীবন-জীবিকার ধরন পাল্টাচ্ছে। আদিবাসীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে, তাদের চিরায়ত সংস্কৃতি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে আদিবাসীরা তাদের শেকড়কে ভুলে যাচ্ছে। ফলে আদিবাসীর ভাষা, সংস্কৃতি ও প্রাণ-প্রকৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে।
আদিবাসীদের এই মেলায় নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচটি উপজেলা থেকে প্রায় সহস্রাধিক ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। সাঁওতাল, ওরাওঁ, মুণ্ডা, বাড়ৈ, পাহাড়িয়া, রবিদাস, রাজবংশী, মাহাতো, শিং, মাহালী ও রাজোয়ারসহ প্রায় এগারটি সম্প্রদায় মেলায় তাদের হারিয়ে যাওয়া কৃষ্টি প্রদর্শন করেছেন। আদিবাসীদের প্রাণের দাবি প্রত্যেক বছর যেন এরকম মেলার আয়োজন করা হয়।
মেলার প্রধান আকষর্ণ ছিল নৃতাত্ত্বিক জাদুঘরের মতো সারি সারি সাজানো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের স্টল। যেখানে স্থান পেয়েছিল আদিবাসীদের ব্যবহার্য বিলুপ্তপ্রায় জিনিসপত্র, যেমন—তীর, ধনুক, বর্শা, বল্লম, মাদুলি, পায়েরী, খংস, বাজুসহ নানা ধরনের তৈজসপত্র।
আদিবাসী সম্প্রদায়গুলো তাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে। এ ছাড়াও আদিবাসীদের নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাওয়াপুড়া ফুটবল একাদশ ও নওগাঁ জেলার আদিবাসী তেরুপ ফুটবল একাদশের মধ্যে একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।