× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সংস্কারে নতুন রূপ শত বছরের হরিপুর জমিদার বাড়ির

ঠাকুরগাঁও থেকে নাগরিক সাংবাদিক নির্মল ব্যানার্জি

প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৩৭ পিএম

আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:৩৬ পিএম

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরের হরিপুর জমিদার বাড়ি। প্রবা ফটো

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরের হরিপুর জমিদার বাড়ি। প্রবা ফটো

ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী হরিপুর জমিদার বাড়িতে শুরু হয়েছে সংস্কার কাজ। জমিদার বাড়ির দেয়ালে ঝোলানো সাইনবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় প্রথম ধাপে হরিপুর জমিদার বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে সংস্কারের কাজ চলছে।

গত ২০ নভেম্বর থেকে শুরু হয় এ কাজ। শত বছরেরও বেশি সময়ের নীরব সাক্ষী জমিদার বাড়িটি ফিরে পাচ্ছে হারানো জৌলুশ। বাড়ির দেয়ালের শেওলা আর জঙ্গল উপড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে রঙের প্রলেপ। 

জানা গেছে, ঘনশ্যাম কুন্ডু নামে একজন কাপড় ব্যবসায়ী ব্যবসা করতে হরিপুরে আসেন। সেই সময় মেহেরুন্নেসা নামে এক বিধবা মুসলিম মহিলা হরিপুর অঞ্চলের জমিদার ছিলেন। খাজনা অনাদায়ের পড়ার কারণে মেহেরুন্নেসার জমিদারির কিছু অংশ নিলাম হয়ে গেলে ঘনশ্যাম কুন্ডু সেটি কিনে নেন। ঘনশ্যামের ছেলে রাঘবেন্দ্র রায় চৌধুরী ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে হরিপুর জমিদার বাড়ির প্রথম স্থাপনা ফলক নির্মাণ করেন।

কিন্তু তার সময়ে জমিদার বাড়ির কাজ শেষ হয়নি। রাঘবেন্দ্র রায়ের পুত্র যোগেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ১৮৯৩ খ্রীস্টাব্দে জমিদার বাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। যোগেন্দ্রনাথের ছোট ভাই নগেন্দ্রনাথ বিহারী রায় চৌধুরী জমিদার বাড়ির উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্ত বড় তরফ ও ছোট তরফে ভাগাভাগি করে নেন। পরে বড় তরফ থেকে জমিদার যোগেন্দ্র নারায়ণের দুই ছেলে জমিদারি চালান। তারা হলেন- রবীন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ও বিশ্বেন্দ নারায়ণ রায় চৌধুরী৷

তাদের আরেক ভাই নগেন্দ্র নারায়ণের দুই ছেলে রমেন্দ্র কৃষ্ণ রায় চৌধুরী ও গিরিজা বল্লভ রায় চৌধুরী জমিদার বাড়িতে বাস করতেন। তার মধ্যে রমেন্দ্র ঘরকুনে স্বভাবের হলেও গিরিজা বল্লভ রায় ছিলেন আমুদে প্রকৃতির। নাচ, গান ও ক্রীড়ানুরাগী। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় তারা ভারতে চলে যান। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে জমিদার বাড়িটি। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে জমিদার বাড়িটি সংস্কার করে বাংলাদেশ সরকার।

ঠাকুরগাঁও সদর ভুল্লি বাজার থেকে জমিদার বাড়ি দেখতে যাওয়া শাওন চৌধুরী বলেন, ‘প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূর থেকে এই জমিদার বাড়িটে দেখতে এসেছি। নতুন রূপে সেজেছে বাড়িটি। জেলা প্রশাসক ভালো একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। নতুন প্রজন্ম ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে।’ 

বালিয়াডাঙ্গী থেকে যাওয়া আব্দুল খালেক বলেন, ‘আমি ৩ বছর আগে এই জমিদার বাড়িটি দেখতে এসেছিলাম। তখন ময়লা আর দেওয়ালে শেওলা জমে ভূতুড়ে বাড়ি মনে হয়েছিল। কিন্তু এইবার বাড়িটি দেখে অনেক ভালো লেগেছে। মনে হয়েছে নতুন জমিদার বাড়ি। আশা করছি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এটা দেখতে আসবে।’

হরিপুর জমিদার বাড়ি। প্রবা ফটো

হরিপুর উপজেলা কমরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আশিক হোসেন বলেন, ‘পুরনো ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ময়লার স্তুপে থাকা জমিদার বাড়িটি করোনা মহামারির সময় নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার করে স্থানীয় শিশু, কিশোর ও যুবকরা ৷ এটি সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধনসহ শিক্ষা জীবনে বাড়িটির গুরুত্ব তুলে ধরে লিফলেটও বিতরণ করেছিল তারা। কিন্তু তখন কোনো কাজ হয়নি।

পরে গত ২০ নভেম্বর থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এটা আবার সংস্কার করে নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে। এতে করে নতুন প্রজন্ম ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। এটা একটি মহত উদ্যোগ বলে আমরা মনে করছি।’

নেকমরদ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আজিজ বলেন, ‘আমি কয়েকদিন আগে শুনলাম হরিপুরের জমিদার বাড়িটি সংস্কার হচ্ছে। তাই দেখতে আসলাম। এখন বাড়িটির নতুন রূপ দেখে সত্যি ভালো লাগছে। প্রতিদিন আমার মত অনেকে আসছে।’

হরিপুর জমিদার বাড়ি সংস্কার ও সংরক্ষণ কমিটি আহ্বায়ক সালমান ফার্সি জানান, বাড়ির পেছনের দেয়ালে হালকা নকশা। দেয়ালের ওপর জমিদার যোগেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর খোঁচিত মূর্তি। বাড়ির ভেতরে বেশ কিছু কক্ষ রয়েছে। জমিদারি পরিচালনার জন্য কাচারি, ধর্মীয় উৎসবের জন্য বিভিন্ন উপাসনালয়, বিনোদনের জন্য নাচমহলসহ বিভিন্ন কক্ষ রয়েছে।

জমিদার বাড়ির শাসনামল, সাংস্কৃতিক ইতিহাস, সংগ্রাম, প্রতিবাদ, বর্বরতা, সে সময়ের এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাপন, নৈতিকতা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা ছিল স্থানীয় যুবসমাজ ও শিক্ষার্থীদের। কারণ হরিপুরের সমাজ প্রবর্তন ইতিহাসের একমাত্র কালের স্বাক্ষী এই জমিদার বাড়ি। বর্তমানে সংস্কারের পর জমিদার বাড়ির রূপ সবাইকে মুগ্ধ করেছে। উত্তরবঙ্গের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে এটাকে গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। 

হরিপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার এ কে এম শরীফুল হক বলেন, বাড়িটি সংস্কারের জন্য প্রত্নতাত্বিক সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তারা জানায়, বাড়িটি এখনো তাদের প্রত্নতাত্বিক নথিভুক্ত হয়নি৷ গত ২০ নভেম্বর থেকে জেলা প্রশাসক মহদোয়ের দেওয়া বরাদ্দে জমিদার বাড়ির সংস্কার কাজ শুরু হয়। 

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকবার হরিপুর জমিদার বাড়িটি দর্শনে যাই। এটা সংস্কার করলে ভালো একটি পর্যটন স্থান হবে এবং নতুন প্রজন্ম ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। তাই জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এই বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা