গাজীপুর সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:৩৯ পিএম
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:৫৬ পিএম
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ছবি : প্রবা
গাজীপুরে মায়ের জানাজায় অংশ নিতে যাওয়া বিএনপি নেতাকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখার ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘আলী আজম একজন খাঁটি রাজনৈতিক বীরযোদ্ধা, কর্মী। যে মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে মামলার তিনি এজাহারভুক্ত আসামি নন। সবচেয়ে করুণ দৃশ্য হচ্ছে আলী আজমের মা মারা গেলেন। এরপর প্যারোলে তিনি জানাজায় এলেন, কিন্তু মায়ের কবরে নামতে পারলেন না। তিনি চোর কিংবা ডাকাত নন। তবু ডান্ডাবেড়ি পরেই মায়ের জানাজা পড়ালেন। এতে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।’
গ্রেপ্তার আলী আজম গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। তাকে একটি রাজনৈতিক মামলায় ২ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জেলে থাকা অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর তার মা মারা যান।
মায়ের মৃত্যুর খবরে এদিন তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পান ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আলী আজম। নিজ বাড়িতে নেওয়ার পর তিনি নিজেই মায়ের জানাজা পড়ান। এ সময় তার হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরানো ছিল।
এ ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। এ ঘটনায় আলী আজমের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কেন্দ্রীয় নেতারা আলী আজমের বাড়িতে যান।
এ সময় গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘আমরা অবৈধ পার্লামেন্টের বিলুপ্তি দাবি করছি। একটি সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন করার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান করছি। আপনারা শিগগরই পদত্যাগ করুন এবং মানুষের ভোটাধিকার ফেরত দিন।’
সরকারের কড়া সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এ সরকার একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে; যা দেশ-বিদেশে নিন্দনীয় হচ্ছে। সরকার নিন্দনীয় হলেও আমরা লজ্জা পাচ্ছি এ দেশের জনগণ হিসেবে। এর জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়, বাংলাদেশের জনগণ দায়ী নয়, এর জন্য ফ্যাসিবাদী সরকার দায়ী।’
আলী আজমের ছোট ভাই আতিকুর বলেন, ‘ভাইকে ধরে নেওয়ার পর মা অসুস্থ হয়ে যায়। শুধু কান্না করত, ঠিকমতো খাইত না। এরপর মা ১৮ তারিখ মারা যায়। মায়ের ইচ্ছা ছিল ভাই তার জানাজা করবে। পরে ভাইয়ের জামিন চেয়েছিলাম কিন্তু তারা তিন ঘণ্টার প্যারোলে মুক্তি দেয়। জানাজায় যখন তার হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দেয়নি তখন এলাকাবাসী কান্নায় ভেঙে পড়ে। আমার ভাই আওয়ামী লীগ-বিএনপি সবার কাছেই প্রিয় মানুষ হিসেবে পরিচিত। আমরা তার মুক্তি চাই।’
এ সময় আলী আজমের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার লিপি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তবে আমার স্বামী নির্দোষ। তার নামে কোনো মামলা-মোকদ্দমা ছিল না। আমার স্বামীর শোকে শাশুড়ি মারা গেছে। সবচেয়ে কষ্ট লেগেছে সে (আলী আজম) বাড়িতে আসার পরও কথা বলতে পারিনি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে কিন্তু মায়ের জানাজায় ডান্ডাবেড়ি এবং হাতকড়া খুলে দেওয়া হয়নি। এটা আমাদের ও এলাকাবাসীকে কষ্ট দিয়েছে। জানাজা শেষে তিনি পানি খেতে চেয়েছিলেন কিন্তু সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমরা সরকারের কাছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এই নির্দোষ মানুষটির মুক্তি চাই।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী সায়েদুল আলম, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কালিয়াকৈর পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমদ, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি আনম খলিলুর রহমান ইব্রাহিম, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান, কালিকাপুর উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদ, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান, গাজীপুর সদর উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবু তাহের মুসল্লীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।