× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অবৈধ দখল ও দূষণে মুক্তেশ্বরী নদী এখন ‘মরাখাল’

যশোর সংবাদদাতা

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:৩০ পিএম

আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:১৩ পিএম

 মুক্তেশ্বরী নদী। ছবি : প্রবা

মুক্তেশ্বরী নদী। ছবি : প্রবা

যশোরের অন্যতম প্রবাহমান নদী মুক্তেশ্বরী এখন শুধুই স্মৃতি। দখল, দূষণ ও অপরিকল্পিত শাসনে স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ছোট খালে পরিণত হয়েছে নদীটি। দখলদারদের গ্রাসে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদীটি। দীর্ঘদিন ধরে নদীটি হত্যার আয়োজন সম্পন্ন করা হলেও রক্ষায় এগিয়ে আসেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে আরও বেপরোয়া হয়েছে দখলদার চক্র। 

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প পাশ হলেই নদীটি উদ্ধার ও সংস্কার করা হবে।  

নদীটি যশোরের চৌগাছা উপজেলার জগদীশপুর বাওড়ের পাশ দিয়ে সলুয়া বাজার সংলগ্ন এলাকা হয়ে সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এটি মণিরামপুর হয়ে সাতক্ষীরার কলারোয়া গিয়ে মিশেছে।

সরেজমিনে যশোর সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসংলগ্ন এলাকা, মণ্ডলগাতি, পুলেরহাট অংশ ঘুরে দেখা গেছে, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে দখলদাররা ভবন নির্মাণ, ময়লা ফেলার ভাগাড় ও মাছ চাষসহ নানা কাজে ব্যবহার করছে। কোথাও কোথাও নদীর দু’পাশ দখল করে সরু করা হয়েছে। কোথাও স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। আবার কোথাও নেটপাটা ও বাঁশের বেড়া দিয়ে নদীর প্রবাহ আটকে দিয়ে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। নদীর প্রকৃত সীমানা যেমন চিহ্নিত নেই, তেমনি কে কতটুকু দখলে রেখেছে তারও পুরোপুরি হিসাব কেউ দিতে পারেনি। ফলে এক সময়ের প্রবাহমান নদীটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এক সময় নদীতে স্রোতছিল। নদীপাড়ের লোকজন নানা অজুহাতে দখল করেছে। এখন এটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ দিনেও খনন কিংবা নদী সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে নদীর অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। 

পুলেরহাট এলাকার নজরুল ইসলাম নামে প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, প্রভাবশালীরা নদী দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে। কিন্তু নদীরক্ষার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এজন্য নদী দখলে কেউ পিছিয়ে নেই। যার যতটুকু সুযোগ আছে, সে ততোটুকু দখল করে বসে আছে। 

আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল ইসলাম বলেন, নেটপাটা দিয়ে নদীর পানি প্রবাহ আটকে রেখে মাছ চাষ করছে এলাকার কতিপয় ব্যক্তি। তারা জালিয়াতির মাধ্যমে এটিকে খাল দেখিয়ে ডিসি অফিস থেকে লিজ নিয়েছিল। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে লিজ বাতিল করে ডিসি অফিস। কিন্তু আজও অবৈধ নেটপাটা থেকে গেছে। এভাবেই মাছ চাষ চলছে। এলাকার মানুষ পানিতেও নামতে পারেনা। ঐসব প্রভাবশালীরা পানিতে নামলেই মারধর করে। 

স্থানীয় আরিফুল ইসলাম জানায়, নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় মরা খালে পরিণত হয়েছে। ছোট ছোট খাল হিসেবে যে যার মত দখল করেছে। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও খনন ছাড়া নদীকে বাঁচানো সম্ভব নয়।

দীর্ঘদিন ধরে নদী ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন জনউদ্যোগ যশোরের সদস্য রুকুনউদ্দৌলাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মূলত নদীটা যাদের দেখার কথা, সেই কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। অনৈতিক সুযোগ নিয়েই স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখল করার সুযোগ দিয়ে থাকে। নদী সংরক্ষন আইন আছে, তবে সুষ্ঠু প্রয়োগ হয় না। প্রয়োগ হয় না বলেই, শুধু মুক্তেশ্বরী নয়, যশোরের অনেকেই নদীই আজ দখল হয়ে রয়েছে। নদীগুলো মারা যাওয়ার ফলে পরিবেশ, চাষাবাদ ও জীববৈচিত্র ক্ষতি হচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসলেও কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে না বসায় কোন পরিবর্তন হচ্ছে না।’

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম বলেন, মুক্তেশ্বরী নদীর উৎপত্তিস্থল থেকে সাতক্ষীরার কলারোয়ার খর্নিয়া পর্যন্ত খনন ও দখলমুক্ত করার জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। প্রকল্প পাস হলেই নদী রক্ষার কাজ শুরু হবে।

যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তুষার কান্তি পাল বলেন, ‘নদীকে প্রবাহমান করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজ করছেন। তাছাড়া কোথাও নদী অবৈধদখলে থাকলে প্রশাসন সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।’


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা