বরিশাল সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ ২৩:৩৮ পিএম
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:৪৮ পিএম
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় বাসর ঘরে একা বসে আছেন নববধূ নার্গিস খানম। ছবি: প্রবা
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগদা গ্রামের ইরান খানের গায়ে শেরওয়ানি, মাথায় টোকরসহ বিয়ের সাজ। তার পাশেই নববধূ নার্গিস খানম হাতে মেহেদি আলপনা, চুরি, কপালে টিপ, গায়ের জড়ানো বিভিন্ন অলঙ্কারসহ বিয়ের শাড়িতে মোড়ানো। বিয়ের পরে তাদের বাসর করার কথা ছিল।
তবে পুলিশের কারণে জীবনের প্রথম স্মৃতিময় রোমাঞ্চকর রাতটি একসঙ্গে পার করতে পারেননি তারা। বিয়ের রাতেই ইরান খান ও তার ছোট ভাইকে গ্রেপ্তার করতে পুরো বাড়ি ঘিরে রেখেছিল পুলিশ।
যুবদল নেতার শ্যালক ইরান ও তার ভাই একটি মামলার আসামি হওয়ায় পুলিশ ওই বাড়িতে আসে তাদের গ্রেপ্তার করতে। পুলিশ আসার খবর পেয়েই ইরান বাসর রাত না কাটিয়ে কৌশলে ঘর থেকে বের হয়ে যান। গত সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) উপজেলার মৃর্ধা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিয়ে আগৈলঝাড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম বলছেন, ‘অপরাধী ধরতে পুলিশ যে কোনো সময়ে যেকোনো স্থানে যেতে পারে।’
স্থানীয়রা জানান, সোমবার ইরান খানের সঙ্গে পাশের আমবৌলা গ্রামের নার্গিস খানমের বিয়ে হয়। বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে নববধূকে নিয়ে বাড়ি যান ইরান খান। বরযাত্রী ছিলেন ছিলেন ইরানের বড় বোনের জামাতা ও বরিশাল জেলা উত্তর যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল মোল্লা।
ওইদিন তিনি বাগধা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল খানের সাথে পশ্চিমপাড় বাজারে বসে কথা বলেন। বিষয়টি দেখে এমদাদুলকে মারধর করেন বাগধা ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান তালুকদার। বিষয়টি জানতে পেরে আবুল মোল্লা এমদাদুলকে মারধরের কারণ জানতে চান যুবলীগ নেতা মশিউর রহমানের কাছে।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যুবদল নেতা আবুল মোল্লার শ্বশুর বাড়ি (বিয়ে বাড়ি) গিয়ে তাকে খুঁজতে থাকেন। এসময় আবুল মোল্লা শ্বশুরবাড়ি থেকে গোপনে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ ওই রাতেই যুবদল ও ছাত্রদলের তিন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে বাগধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোকলেসুর রহমান বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে আগৈলঝাড়া থানায় মামলা করেন। মামলায় নববিবাহিতা ইরান খান এবং তার ভাই মিরান খানকেও আসামি করা হয়।
মামলার খবর শুনে নববধূকে বাড়িতে রেখেই বাড়ি ছেড়েছেন ইরান খান।
নববধূ নার্গিস খানম বলেন, ‘বাজারের ঘটনায় আমার স্বামী কিছুতেই জড়িত নন। তিনি তখন বর সেজে আমাকে নিয়ে আসছিলেন। অথচ তাকে আসামি করা হয়েছে। আমাকে বাসর ঘরে রেখে তাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এমন হয়রানির আমি ন্যায়বিচার চাই।’
মামলার বাদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোকলেসুর রহমান বলেন, ‘বিএনপি-যুবদলের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর অর্তকিতে হামলা চালায়। এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছি। মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
ঘটনার বিষয়ে যুবদল নেতা আবুল মোল্লা বলেন, ‘বাজারে ওদের সাথে তেমন কোনো কথা হয়নি। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল খানে সাথে আমার কথা হয়েছে। আমার সাথে কেন কথা বলেছে এই প্রশ্ন তুলে এমদাদুলকে মারধর করে। আমি ওদের গিয়ে বলেছি শুধু, বিয়ের দিনে মারধর করা উচিত হয়নি। এরপরই বিকালে শুনি আমাদের নামে মামলা হয়েছে। প্রশাসন নূন্যতম তদন্তও করল না।’
আগৈলঝাড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘মারামারির ঘটনায় মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। এজাহারে নাম থাকা তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোন আসামির বিয়ে হচ্ছে বা হবে সেটি দেখার বিষয় আমাদের না। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’