যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৫৫ পিএম
আলোচনা সভা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রবা ফটো
যশোরের যশ খেজুরের রস; এমন ঐহিত্য ধরে রাখতে জেলায় আয়োজন করা হয়েছে দুই দিনব্যাপী খেজুর গুড়ের মেলা। চৌগাছা উপজেলায় মঙ্গলবার শেষ হয়েছে দুই দিনের এই আয়োজন। এ উপলক্ষে এক আলোচনা সভা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
উপজেলা চত্বরের বৈশাখী মঞ্চে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান, যশোরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) চৌগাছা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড. মোস্তানিছুর রহমান, চৌগাছার পৌর মেয়র নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল প্রমুখ। পরে মেলায় অংশ নেওয়া গাছিদের মধ্য থেকে ‘মানসম্পন্ন গুড় উৎপাদন প্রতিযোগিতা’য় তিনজনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তাদের যথাক্রমে নগদ ১০ হাজার, সাত হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা, একটি করে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।
প্রতিযোগিতায় প্রথম হন ধুলিয়ানি ইউনিয়নের কুষ্টিয়া-ফতেপুর গ্রামের মো. কিসমত আলি। দ্বিতীয় হন পাতিবিলা ইউনিয়নের হায়াতপুর গ্রামের আব্দুল গাজী। তৃতীয় পুরস্কার পান স্বরুপদাহ ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের মো. হাসান আলী।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী উপজেলার ১১ ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভায় সর্বোচ্চ খেজুর গাছ কাটা গাছিদের মধ্য থেকে তিনজন করে ৩৬ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। কম্বল বিতরণ করা হয় ছয় শতাধিক গাছির মধ্যে।
পুরস্কার জয়ের পর কিসমত আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খেজুর গাছ কাটছি। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গুড়ের মেলায় প্রথম দিন ছয় ভাঁড় (গুড় রাখার মাটির পাত্র) এবং আজ আরও ছয় ভাঁড় গুড় নিয়ে এসেছিলাম। সব বিক্রি হয়ে গেছে। আবার ১০ হাজার টাকা পুরস্কারও জিতেছি। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের সম্মানিত করা হয়েছে। এ আনন্দ বলে শেষ করার নয়।
মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস ও গুড় নিয়ে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য রচনা এবং দুই গ্রুপে কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, মেলায় দুই দিনে চার শতাধিক গাছি গুড়-পাটালি বিক্রি করেছেন। দুই দিনে প্রায় পাঁচ হাজার কেজি গুড় বিক্রি করেছেন তারা। অনেকে ফোনেও অর্ডার করেছেন।
জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, এই আয়োজন অত্যন্ত সফল হয়েছে। চেষ্টা করবো এ বছরই আরও দুএকটি উপজেলায় এমন মেলা করার। আগামীতে প্রতি বছর চৌগাছা ও যশোরে এর আয়োজন করা হবে।
তিনি বলেন, খেজুর গুড়ের ঐহিত্য ফিরিয়ে আনতে সব রকমের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে। যশোর জেলার এই ব্র্যান্ডিং পণ্যটি আগামীতে দেশে-বিদেশে আরো খ্যাতি অর্জন করবে। তবে এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে খেজুরের রস অবশ্যই ভেজালমুক্ত রাখতে হবে।