সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:২৬ পিএম
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৪৪ পিএম
মহাসড়কের কাঁচপুর বিসিক এলাকায় অবাধে ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। প্রবা ফটো
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার এলাকার অন্তত ৯টি স্থানে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। এতে পথচারী ও যানবাহনের যাত্রীদের দুর্গন্ধ সহ্য করে ওই এলাকা পার হতে হয়। দূষিত হচ্ছে আশেপাশের পরিবেশ। তা ছাড়া ময়লার স্তূপের কারণে সড়ক সরু হয়ে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
রবিবারে (১৫ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা গেছে, কাঁচপুর বিসিক শিল্পনগরী এলাকার ২০০ গজ সামনে রয়েছে ওমর আলী হাই স্কুল। শিক্ষার্থীরা নাকমুখে কাপড় চেপে স্কুলে আসা-যাওয়া করছে। তা ছাড়া আবর্জনার স্তূপে ফুটপাত দখল হওয়ায় মহাসড়ক দিয়েই চলাচল করছে পথচারীরা। এতে মহাসড়কে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় নানান দুর্ঘটনা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় কাঁচপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও বিসিক শিল্পনগরী অঞ্চলের শিল্পবর্জ্য ও গৃহস্থালি ময়লা-আবর্জনা মহাসড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া মোগরাপাড়া ইউনিয়ন ও পিরোজপুর ইউনিয়নেরও ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।
কাঁচপুর বিসিক এলাকার পারভেজ মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিনই ভ্যানে করে বিসিক শিল্পনগরী ও আবাসিক এলাকার ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। দিন দিন ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পাহাড় সমান স্তূপ হচ্ছে।’
ময়লা ফেলতে আসা ভ্যানচালক আফজাল ও সাদ্দাম নামে দুই সহোদর বলেন, ‘আমরা মাসিক টাকার বিনিময়ে বাসাবাড়ি ও বাজারের ময়লা-আবর্জনা মহাসড়কের পাশেই ফেলে থাকি। তবে কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত স্থান করে দিলে সেখানেই ফেলব।’ কবির হোসেন নামে মোগরাপাড়া এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় বাধ্য হয়েই মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে হচ্ছে।
কামাল হোসেন নামে একজন পথচারী বলেন, ‘মহাসড়কে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় একদিকে যেমন বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে মহাসড়ক সরু হয়ে যাওয়ায় যানজট বাড়ছে। মহাসড়কের ফুটপাতে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় আমরা বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করছি।’
আমিরুল ইসলাম নামে একজন বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ অপসারণে কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। ময়লা যাতে মহাসড়কে না ফেলা হয় সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথের (সওজ) কর্মকর্তারা কাউকে কখনও নিষেধ করেননি। ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য নির্ধারিত একটি স্থান করে দেওয়া উচিত।
জানতে চাইলে কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ ওমর বলেন, ‘স্থানীয় দশ-বারোজন যুবক মিলে টাকার বিনিময়ে বিসিক ও আবাসিক এলাকার ময়লা-আবর্জনা মহাসড়কের পাশে ফেলছে। ইউনিয়নের ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্ধারিত কোনো জায়গা বা ডাম্পিং স্টেশন নেই। বিষয়টি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে কয়েকবার জানানো হয়েছে।’
পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান মাসুম বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে নিষেধ করা হয়েছে। ময়লা-আবর্জনা রিসাইকেলিং করে জৈবসার তৈরির একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে শিল্প-কারখানা ও আবাসিক এলাকার বর্জ্য থেকে দূষণরোধ পাবে। পাশাপাশি জৈবসারও উৎপাদন করা যাবে।’
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজওয়ান উল ইসলাম বলেন, ‘মহাসড়কে দীর্ঘদিন ধরে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (সওজ) শাহানা ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকবার এক্সকাভেটর (ভেকু) দিয়ে ময়লা অপসারণ করেছি। কিন্তু আবার তারা ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভাগাড় বানিয়ে ফেলছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে এখানে ময়লা ফেলার কোনো সুযোগ নেই।’