নড়াইল প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৫৩ পিএম
গ্রামটিতে ফকির ও মোল্যা গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে দ্বন্দ্ব-সংঘাত। প্রবা ফটো
এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের কয়েক দফা সংঘর্ষের পর বাড়িসহ হাটবাজারে যেতে পারছে না নড়াইলের কালিয়া উপজেলার ফুলদাহ গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবার। থমকে আছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। অনেকে সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে না পেরে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
গ্রামটিতে ফকির ও মোল্যা গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে দ্বন্দ্ব-সংঘাত।
এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হলেও যে কোনো সময় আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফকির গ্রুপের নেতৃত্বে দিচ্ছেন সেলিম ফকির এবং মোল্যা গ্রুপের নেতৃত্বে দিচ্ছেন ফসিয়ার মোল্যা।
গত ১৪ জানুয়ারি ফকির গ্রুপের বিপ্লব ফকির চাচুড়ি বাজারে গেলে তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে প্রতিপক্ষরা। পরদিন ১৫ জানুয়ারি রিংকু ফকিরকে আবারও মারধর করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ সময় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১০-১৫ জন আহত হয়। ভাংচুর করা হয় ৮-১০টি বাড়িঘর। এসব ঘটনায় উভয় পক্ষের লোকজন থানায় মামলা দায়ের করেন, সকলেই বর্তমানে আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। গত ২৭ জানুয়ারি আবারও হামলার ঘটনা ঘটে।
সরেজমিন ফুলদাহ গ্রামে রবিবার (২৯ জানুয়ারি) গেলে দেখা যায়, ফকির গ্রুপের লোকজন আতঙ্কে রয়েছে। এলাকায় গত ১৪ জানুয়ারি থেকে দিন-রাত পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। ফকির গ্রুপের লোকজন বলছেন তারা এক প্রকার প্রতিপক্ষের দ্বারা অবরুদ্ধ। হাট-বাজারে যেতে পারছে না, ক্ষেতে পানি দিতে পারছে না, অনেকে জমিতে বোরো আবাদ করতে পারেনি। ঘেরে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, এমনকি ঘের ও মাঠের জমিতে পানি দেওয়ার মেশিন পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে।
মুসলিমা বেগম অভিযোগ করেন, ‘আমাদের বাড়িতে এসে সবাইকে হুমকি-ধামকি দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিয়ে আমার কোলের ছোট বাচ্চারে টানে ফেলে দিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।’
জনি খানম বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন এসে আমাদের বাড়ি-ঘর কুপিয়ে নষ্ট করেছে। ঘরের মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে।
জামিরুল ইসলাম বলেন, আমরা এক প্রকার পুলিশ পাহারায় গত ১৪ জানুয়ারি থেকে এলাকায় বাস করছি।
ফকির গ্রুপের প্রধান সেলিম ফকির অভিযোগ করে বলেন, আমাদের লোকদের উপর একাধিকবার হামলা চালিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন। প্রতিরাতে আমাদের লোকদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে। অনেক বাড়িতে শুধু মহিলারা রয়েছে। তাদেরও বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা একপ্রকার অবরুদ্ধ হয়ে আছি। আমাদের লোকজন মাঠে-ঘাটে, হাটবাজারে যেতে পারছে না।
মোল্যা গ্রুপের ফসিয়ার মোল্যার ছেলে সবুজ মোল্যা প্রতিপক্ষের সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের লোকজন নয় বরং ফকির গ্রুপের লোকজন আমাদের লোকজনের উপর হামলা করে বাড়িঘর ভাংচুর করেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত কালিয়া থানার উপপরিদর্শক(এসআই) টিপু সুলতান বলেন, সম্প্রতি এই এলাকায় দুইটি গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ সুপার ও কালিয়া থানার ওসি স্যারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিন-রাত এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আমরা দায়িত্ব পালন করছি।
প্রতিপক্ষের হুমকিতে লোকজন হাট-বাজারে যেতে পারছে না এমন অভিযোগের বিষয়ে এসআই বলেন, আমাদের কাছে এমন কোনো অভিযোগ কেউ জানায়নি। জানালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলেও দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাসনীম আলম বলেন, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ উভয় পক্ষের রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলেও জানান তিনি।