× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রংপুরে শব্দদূষণ

নীরব এলাকায় সরব হর্ন

মেরিনা লাভলী, রংপুর

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:০১ পিএম

আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:৪০ পিএম

প্রবা ফটো।

প্রবা ফটো।

রংপুরে দিন দিন বেড়েই চলেছে শব্দদূষণ। এমনকি সরকারঘোষিত নীরব এলাকায়ও যানবাহনের হর্নের শব্দে কান পাতা দায়। এতে করে শ্রবণশক্তি হ্রাসসহ নানা সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ। শব্দদূষণকে নীরব ঘাতক দাবি করে দ্রুত এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা। 

সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর নগরীর মেডিকেল মোড়, ধাপ জেল রোড, বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়, কাচারী বাজার, সিটি করপোরেশন গেট, পায়রা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, শাপলা চত্বর, মডার্ন মোড়, সাতমাথা, মাহিগঞ্জ বাজার, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় সব সময় যানজট লেগে থাকে। রংপুর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ৪ হাজার অটোরিকশার লাইসেন্স অনুমোদন দিলেও নগরীতে চলে ৪০ হাজারেরও বেশি অটোরিকশা। 

সড়ক অনুযায়ী অত্যধিক অটোরিকশা চলাচল করায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে হর্ন দিয়ে যানজট এড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করে প্রত্যেকে। ফলে শব্দদূষণের তীব্রতা বাড়ছেই। এ ছাড়াও অনেকে অসচেতনতার জন্যও কোনো ধরনের প্রয়োজন ছাড়াও হর্ন বাজাতে থাকেন। মামলার ভয়ে অন্যান্য ট্রাফিক আইন মানার কিছুটা প্রবণতা থাকলেও শব্দদূষণের ক্ষেত্রে যেন চরম উদসীন চালকরা। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি-বেসরকারি কর্যকর তেমন উদ্যোগও দেখা যায়নি রংপুর নগরে। 

দুই বছর আগে রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেডিকেল মোড় পর্যন্ত এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু নীরব এলাকা হিসেবে সাধারণ জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। তাই নীরব এলাকায় দিনভর সবর থাকে যানবাহনের হর্ন। গত ৩০ জানুয়ারি বিদ্যালয়ের সামনে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। সেখানে শব্দদূষণের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সেদিকে কারও দৃষ্টি নেই। পরিবহন চালকরা যে যার মতো  হর্ন বাজিয়ে রাস্তায় চলাচল করছেন। 

রংপুর বাহার কাছনা এলাকার বাসিন্দা শামীম হোসেন বলেন, ‘রংপুর নগরীতে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। আর এই যানজটের কারণে যানবাহন চালকরা হর্ন বাজিয়ে নগরীতে শব্দদূষণ করছেন। নগরীর ফুটপাথগুলোও ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে। তাই পথচারীরা রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। এতেও যানবাহন চালকদের বাধ্য হয়ে হর্ন দিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। মহাসড়কগুলোতে দূরপাল্লার যানবাহনগুলো হাইড্রোলিক হর্ন বাজিয়ে চলে। এতে করে আমাদের কানের অনেক সমস্যা হয়।’ 

স্টেশন এলাকার শিক্ষার্থী আমির হামজা হৃদয় বলেন, মেডিকেল হাসপাতাল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকায় হর্ন বাজানো নিষেধ। অথচ পরিবহন চালকরা এসব এলাকায়  হর্ন দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। ফলে অসুস্থ রোগী কষ্ট পাচ্ছে, মুসল্লিদের ইবাদত করতে সমস্যা হয়। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগ থাকছে না। 

লাহিড়ীরহাটের আয়শা আক্তার বলেন, ‘নবজাতক শিশুদের কান ঢেকে রংপুর নগরীতে নিয়ে যাই। কারণ, বাসগুলোর হর্ন কানে আঘাত করতে পারে।’ রংপুর সদরের পাগলাপীরের হাজরা বেগম বেলী বলেন, ‘রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত করার কারণে নগরী ও নগরীর বাইরে বাসের হর্ন, অটোরিকশার হর্নের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে যাই। শব্দদূষণের কারণে আমি এখন কানে অনেক কম শুনি।’ 

রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভূমির ব্যবহার অনুযায়ী পাঁচটি ভাগে এলাকা চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে জেলা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ডিসি অফিস, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নীরব এলাকা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা অন্য কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনীত বসবাসের এলাকায় হলো আবাসিক এলাকা, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনের নির্দেশিকা অনুযায়ী নীরব ও আবাসিক এলাকার মিশ্রণে মিশ্র এলাকা, জেলা শহরের প্রধান গোলচত্বর, গুরুত্বপূর্ণ মোড় বাণিজ্যিক এলাকা ও বিসিক, জেলা শহরের কোন বড় কারখানার এলাকা হলো শিল্প এলাকা। নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ও রাতে ৭০ ডেসিবল শব্দের মাত্রা থাকবে। 

কিন্তু রংপুরের মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ডেসিবলের ওপরে এবং রাতে ৫০ ডেসিবলের ওপরে শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে। এসব শব্দদূষণের উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার হর্ন ও মোটরসাইকেলের সাইলেন্সার ব্যবহার না করে মোটরসাইকেল চালানো। সর্বশেষ গত বছরের ৫ জুন প্রচারাভিযান কর্মসূচির অংশ হিসেবে রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় গণসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে ২০২২ সালে ১৯টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৬টি বাস, ৩৮টি ট্রাক, ১টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ১০৫টি হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ করা হয়েছে। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি একটি প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা, ২৩ জানুয়ারি ৪টি বাসকে ৮ হাজার টাকা এবং ৮টি হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ করা হয়েছে। 

রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ ফরহাদ হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আমরা নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি। বিভিন্ন সময় আইনের প্রয়োগও করা হয়েছে। তবে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সবার আগে আমাদের সচেতন হতে হবে। একার পক্ষে শব্দদূষণ রোধ করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৪ জেলায় শব্দদূষণের মাত্রা নির্ণয় করা হচ্ছে। সেই ফলাফল পেলে আমরা শব্দদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারব। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সচেতন মহলের সহযোগিত প্রত্যাশা করছি।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা