× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হালদার প্রাণ ধুরুং খাল মৃতপ্রায়

ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:৩৮ পিএম

শুকিয়ে চৌচির বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীর শাখা ধুরুং। ছবিটি বেড়াজালী এলাকা থেকে শনিবার তোলা। প্রবা ফটো

শুকিয়ে চৌচির বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীর শাখা ধুরুং। ছবিটি বেড়াজালী এলাকা থেকে শনিবার তোলা। প্রবা ফটো

ধুরুং খাল। বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীর দীর্ঘতম একটি শাখা খাল। খালটিকে বলা হয় হলদা নদীর প্রাণ। প্রতিবছর ধুরুং খালের পানি দিয়ে চাষাবাদ করেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ২০ গ্রামের সহস্রাধিক চাষি। শুষ্ক মৌসুমে খালটি পরিণত হয় ধু-ধু বালুচরে। শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায় খালের তলদেশ। খালে পানি না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ, বিপন্ন হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি পাহাড় থেকে নেমে আসা ধুরুং ফটিকছড়ি উপজেলা হয়ে হালদা নদীতে মিশেছে। বছরের পর বছর বর্ষায় উজান থেকে নেমে আসা পলি ও আশপাশের ময়লা-আবর্জনায় খালের তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। খনন না হওয়ায় তলদেশের উচ্চতা বেড়ে পানির ধারণক্ষমতা কমে গেছে। এখন শুষ্ক মৌসুমে খরা আর বর্ষায় প্লাবিত হয় খালের দুকূল।

স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন হালদা নদীর শাখা খালটি খনন না হওয়ায় এটি এখন মৃতপ্রায়। খালে পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ড্রেজিংব্যবস্থাসহ নানামুখী কাজের কথা থাকলেও বাস্তবে কার্যক্রমশূন্য।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফটিকছড়ি-লক্ষ্মীছড়ি সীমান্তবর্তী কাঞ্চননগর ইউনিয়নের চমুরহাট থেকে পাইন্দং ইউনিয়নের শ্বেতকুয়া এলাকা পর্যন্ত খালের ১৫ কিলোমিটার অংশে পানি নেই। কিছু স্থানে খালের তলদেশ শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। কিছু স্থানে কৃষকরা খালের পানি ধরে রাখতে নিজেরাই খাল খনন করে ফসল বাঁচাতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কয়েকজন কৃষক খালের নিচু স্থান থেকে পানি বালতিতে ভরে ক্ষেতে সেচ দিতে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ-বা খালের বিভিন্ন গর্তের পানি শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে নিচ্ছেন।

এলাকার বাসিন্দারা জানান, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে খালটি পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ থাকে। তখন উজানের পানিতে ডুবে যায় ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। বাকি সময় খালে কোনো পানি থাকে না। এই পরিস্থিতি এলাকার বাসিন্দাদের জন্য চরম দুর্দশার।

খালের পাড়ের ধুরুং, পশ্চিম কাঞ্চননগর, কাজীপাড়া, কাঞ্চননগর চমুরহাট, বেড়াজালি, বিবিরহাট, শ্বেতকুয়া, রক্তছড়িরখুল, কচিরাপাড়াসহ ২০ গ্রামের সহস্রাধিক চাষির বোরো চাষে একমাত্র পানির ভরসা ধুরুং খাল। কৃষকের বীজতলায় ধানের চারা তৈরি হয়ে গেলেও পানি না থাকায় তা রোপণ করতে পারছেন না। এর ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শত শত হেক্টর ফসলি জমিতে বোরো আবাদ।

ফটিকছড়ি পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের চাষি জাকির হোসেন জানান, পাঁচ বছর আগেও ধুরুং খালে শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকত। তখন বিভিন্ন জাতের মাছ ধরা যেত। এখন সে ধুরুং ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। কাঞ্চননগর কাজিপাড়ার চাষি ইউসুফ হোসেন বলেন, ‘দুই কানি জমিতে বোরো ধান চাষের জন্য চারা তৈরি করেছি। কিন্তু খালে পানি না থাকায় রোপণ করতে পারছি না।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ধুরুং খালের অববাহিকা কৃষির জন্য অনেক গুরুত্বপুর্ণ। এর দুই তীরের চরের মাটিগুলো কৃষির জন্য অনেক উপকারী। হালদার মতো এই খালটি ফটিকছড়ির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। খালে পানি না থাকায় ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাঘাত ঘটছে।

হালদা গবেষক ও পরিবেশবিদ ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, হালদার প্রাণ হচ্ছে তার শাখা খাল। ধুরুং খাল হালদার অন্যতম ও দীর্ঘতম শাখা খাল। বর্ষায় খালে পলি জমে সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে গেছে। বলা যায়, খালটি গভীরতা ও নাব্য হারিয়ে এখন মৃতপ্রায়। পানির ধারণক্ষমতা কমার ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পার্শ্ববর্তী এলাকার ফসলি জমিতে। পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে খালটির জলজ বাস্তুতন্ত্রে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বিচরণ ও প্রজননক্ষেত্র।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাব্বির রাহমান সানি বলেন, এ বিষয়ে অবগত ছিলেন না। এটি নিয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পেলে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি জানান।

পাউবোর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, ‘ধুরুং খাল নিয়ে আমাদের একটি কেস স্টাডি হয়েছে। যে রিপোর্টটি আমরা কয়েকদিন আগে হাতে পেয়েছি। ধুরুং খালে যে স্লুইসগেট আছে, তা ভেঙে নতুনভাবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্লুইসগেটে পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে খালে ড্রেজিং করা হবে। পাশাপাশি ধুরুংয়ের মুখের ২২ কিলোমিটার পাকা করে দেওয়া হবে। এ নিয়ে আমরা বিস্তারিত পরিকল্পনা করছি।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা