ভাষাশহীদ আবুল বরকতের মায়ের কবরের পাশে ভাতিজা আলাউদ্দিন বরকত। প্রবা ফটো
প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি ঘটা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয় অথচ ভাষাশহীদ পরিবারের খোঁজ কেউ রাখে না। এমনকি শহীদ পরিবারের কোনো সদস্যকেই একুশে বইমেলার কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয় না বাংলা একাডেমি।
রাষ্ট্রীয়ভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার অনুষ্ঠানেও তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় না। আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলেন ভাষাশহীদ আবুল বরকতের ভাতিজা আলাউদ্দিন বরকত।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বরকতের মায়ের কবরের পাশে কথা হয় আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার চাচা ভাষাশহীদ আবুল বরকতই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নামে কোনো হল নেই। আমাদের আশা ও দাবি, যারা মাতৃভাষার জন্য জীবন দিলেন তাদের স্মরণে আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন। ভাষাশহীদদের ২০০০ সালে মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বীকৃতি ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ জোটেনি ভাষাশহীদদের ভাগ্যে।’
জানা গেছে, ১৯৬৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নতুন জাতীয় শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন ভাষাশহীদ বরকতের মা হাসিনা বেগম। প্রথিতযশা এ রত্নগর্ভার সমাধিসৌধ গাজীপুরের চান্দনা এলাকার ঢাকা-জয়দেবপুর সড়কের পাশে। কবরের চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি লাগানো হয়েছে কিছু শীতকালীন ফুল। সারা বছর অবহেলায় সবার মনোযোগ ও দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকলেও ফেব্রুয়ারিতে অনেকেই খোঁজখবর নেন।
বরকতের বাবা শামসুজ্জোহা ভুলু মিয়া ভারতে মারা যান। এর পরে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ থেকে আংশিক সম্পত্তি বিনিময়ে দুই ছেলে ও চার মেয়েকে নিয়ে এ দেশে চলে আসেন হাসিনা বেগম। নিবাস গাড়েন গাজীপুর মহানগরের চান্দানাতে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন বরকত। তাকে ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। বরকতের একমাত্র ভাই আবুল হাসনাত রোগাক্রান্ত হয়ে ১৯৬৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মারা যান। হাসিনা বেগম মারা যান ১৯৮২ সালের ২১ এপ্রিল। বরকতের সব বোনই মারা গেছেন ইতোমধ্যে। তবে বরকত ও তার মা এবং ভাইয়ের মৃত্যু যেন একই সূত্রে গাঁথা। এদের সবাই মারা গেছেন বিভিন্ন বছরের বিভিন্ন মাসের ২১ তারিখে। এখন বরকতের ছোট ভাই আবুল হাসনাতের সন্তানরাই আঁকড়ে ধরে আছেন শহীদের ব্যক্তিগত সব স্মৃতি।
গাজীপুরে মায়ের কবর, একটি স্টেডিয়াম ছাড়া তেমন কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই বরকতের। এ ছাড়া প্রচার ও প্রকাশের অভাবে গাজীপুরের অধিকাংশ মানুষ জানেন না কে এই বরকত।
বরকতের ভাতিজা আলাউদ্দিন জানান, এখনও বরকতের পাঁচটি পরিবার রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি পরিবার খুবই দরিদ্র। এদের পাশেও রাষ্ট্রের দাঁড়ানো উচিত ছিল।
গাজীপুরের কাজী আজিমউদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থী হৃদয় হোসেন বলেন, ‘দুই বছর ধরে প্রায় প্রতিদিন এখান দিয়ে কলেজে যাই। অথচ গত সপ্তাহে জানলাম শহীদ বরকতের মায়ের কবর এখানে। পরে বন্ধুদের নিয়ে দেখতে এসেছি। মাতৃভাষার জন্য জীবন দেওয়া শহীদের মায়ের কবর আরও পরিষ্কার ও সমৃদ্ধ থাকা প্রয়োজন ছিল।’
আলাউদ্দিন বরকত জানান, হাসিনা বেগমের কবরের পাশে ৯ শতাংশ জায়গার মধ্যে একটি মসজিদ তৈরি করেছি। প্রতিবছর এখানে ২শ থেকে ৩শ লোক খাওয়ানো হয়। এর ব্যয়ভর আমরা নিজেরাই বহন করি। তবে আমরা চাই কবরের পাশে মসজিদ নির্মাণে সরকার সহযোগিতা করুক। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও দুপুরে দোয়ার আয়োজন রয়েছে। জেলা প্রশাসক, ইউএনও দোয়া মাহফিলে যোগ দেন এবং কবর ও মসজিদ করার আশ্বাস দিয়ে যান কিন্তু তা আর বাস্তবায়ন হয় না।
সার্বিক বিষয় নিয়ে গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ মোরাদ আলী বলেন, মসজিদের বিষয়টি তিনি জানেন না। নতুন এসেছেন। আজকের কর্মসূচিতে যাবেন। সেখানে এ নিয়ে কথা বলবেন। পরে ঊর্ধ্বতনকে জানাবেন।
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.