× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো নিয়ে কয়েক স্থানে সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:৩৩ পিএম

আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:১০ পিএম

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে প্রভাতফেরিতে গিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ। প্রবা ফটো

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে প্রভাতফেরিতে গিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ। প্রবা ফটো

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসে শ্রদ্ধা জানানোকে কেন্দ্র করে দেশের কয়েকটি জেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ঝিনাইদহে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের, মানিকগঞ্জে শ্রমিক লীগের সঙ্গে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। 

এ ছাড়া ফেনীতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার পর ফুল কেড়ে নিয়ে ফেলে দিয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম ও লক্ষ্মীপুরেও সংঘর্ষ হয়েছে। সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে সংঘর্ষের ঘটনাগুলো ঘটেছে। 

ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ছাত্রলীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন পথচারীসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৬ জন। তাদের মধ্যে ২ জনকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত ছাত্রলীগ কর্মী ইরফান রাজা রুকুকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। 

স্থানীয়রা জানায়, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শহরের সরকারি মাহাতাব উদ্দিন কলেজের শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিএনপি। কর্মী-সমর্থকরা কলেজ থেকে বের হওয়ার সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা পেছন থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বলে বিএনপির অভিযোগ। তখন দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। 

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম মোল্লা জানান, সামান্য ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। তবে তা দ্রুতই নিয়ন্ত্রণে আসে। 

কালীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল আলম দাবি করেন, ছাত্রলীগের ওপর পরিকল্পিতভাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা করেছে। তবে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজের দাবি, তাদের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় পেছন থেকে ছাত্রলীগ হামলা করে। 

মানিকগঞ্জ

শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানোকে কেন্দ্র করে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে মানিকগঞ্জে। এতে ছয় নেতাকর্মী আহত হন। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাঁধলে জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ও পুলিশের হস্তক্ষেপে আধাঘণ্টার মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা জানানোর পর মাইকে শ্রমিক লীগের এক পক্ষের নাম ঘোষণা করলে অন্য পক্ষ বাধা দেয়। পরে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে শ্রমিক লীগের দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে পরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগও জড়িয়ে পড়ে। 

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল রউফ সরকার বলেন, ’বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে কোনো পক্ষ অভিযোগ করেনি।’

ফেনী

ফেনীর সোনাগাজীতে শহীদ দিবসে ফুল দিতে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের হামলায় বিএনপির ১২ কর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার রাতে পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপির নিয়ে যাওয়া শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ফুলের তোড়া কেড়ে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয় বলে দাবি করে দলটির নেতারা। 

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি খালেদ হোসেন বলেন, ’হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মুখোমুখি হলে কথা কাটাকাটি হয়। পুলিশ তাৎক্ষণিক উপস্থিত হয়ে দুই পক্ষকে সরিয়ে দেয়।’ 

পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ফুল দিতে যাওয়ার পথে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে কি না জানি না। কারা হামলা করেছে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারব।’

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরীতে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর সময় ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ করেছে বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। হামলার জন্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগ ও কোতোয়ালি থানা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করছেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা। এ ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়নের ১২ কর্মীকে মারধর করা হয়েছে বলে দাবি তাদের। 

সকালে নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অস্থায়ী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। 

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ্যানি সেন বলেন, ‘আমরা শৃঙ্খলা মেনে সারিবদ্ধভাবেই শহীদ মিনারের সামনে পৌঁছাই। মহিলা লীগের নেতাকর্মীরা প্রথমে পেছন থেকে এসে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে যায়। আমরা কিছু বলিনি, শুধু একুশ নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলাম। এরপর দক্ষিণ জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা এসে আমাদের সামনে দিয়ে শহীদ মিনারে উঠে যায়। তাদের অনেকের পায়ে জুতা ছিল। আমরা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে জুতা পায়ে শহীদ মিনারে ওঠার প্রতিবাদ করি। এ সময় তারা আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা স্বৈরাচারবিরোধী স্লোগান কেন দিচ্ছি- এমন কথা বলে মারধর শুরু করে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল আলম বলেন, ‘ছাত্র ইউনিয়ন তাদের মতো করে ফুল দিয়েছে। আমরা তো এর আগেই সেখান থেকে চলে গেছি। জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি মফিজ ভাই (মফিজুর রহমান) ছিলেন। ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের কোনো ঝামেলা হয়নি। সেখানে ভিড়ের মধ্যে একটু হইচই হয়েছে। আমি বরং আমাদের ছেলেদের বলেছি কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না করতে। এরপর সবাই চুপ হয়ে যায়।’

জানতে চাইলে শহীদ মিনারে থাকা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতিক আহমেদ বলেন, ‘ভিড়ের মধ্যে একটু হট্টগোল হয়েছে। মারামারি, হামলা এমন কিছু হয়নি। আমি নিজে ছিলাম। যখন বেশি ভিড় হয়েছিল তখন পুলিশ শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে বিশৃঙ্খলা রোধ করে।’

লক্ষ্মীপুর

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে প্রভাতফেরিতে গিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। বিএনপির সাবেক এমপি এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মীর আক্তার হোসেন বাচ্চুর অনুসারীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকজনের হাতে ছেনিসহ দেশীয় ধারালো অস্ত্র দেখা যায়।

সকাল ৭টার দিকে উপজেলার রামগতি বাজার এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

আহতরা হলেন, চরগাজী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, যুবদল নেতা মো. ইসমাইল, নুরুল আমিন নোমান, মাহবুবুর রহমান নয়ন, মো. হৃদয়, ছাত্রদল নেতা ফরহাদ হোসেন, আরিফ হোসেন ও বিএনপি কর্মী মো. জুয়েলসহ ১০ জন। এরমধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় সাইফুলকে নোয়াখালীর একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, ঘটনার সময় রামগতির চরগাজী ইউনিয়নের বানী ভবানী রায় কামেশ্বরী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে থাকা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যায় নেতাকর্মীরা। এ সময় সাবেক এমপি নিজান ও বিএনপি নেতা বাচ্চুর সমর্থকরা বিভক্ত হয়ে পড়ে। পরে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। একপর্যায়ে বিদ্যালয় এলাকার বাইরে রামগতি বাজার এলাকায় এলে বাচ্চুর সমর্থকরা নিজানের লোকজনের ওপর হামলা করে। এতে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। 

অভিযুক্ত বাচ্চু চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি। 

রামগতি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জামাল হোসেন বলেন, ‘টানা দুবার বাচ্চু আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে জাতীয় নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন। এতে তাকে নতুন কমিটিতে রাখা হয়নি। এ কারণেই দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে তিনি আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছেন। এতে আমাদের ৭ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে সাইফুলের হাত ভেঙে গেছে। তাকে নোয়াখালী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন বাচ্চু বলেন, ‘আমি উপজেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলাম। কিন্তু বর্তমান কমিটিতে আমাকে সদস্যও রাখা হয়নি। আশরাফ উদ্দিন নিজানের অনুসারী না হওয়ায় আমাকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সকালে প্রভাতফেরিতে গেলে আমার লোকজনের সঙ্গে নিজানের কর্মীদের হাতাহাতি হয়। আমি উপস্থিত হয়ে সবাইকে বুঝিয়ে নিয়ে এসেছি। বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে দিইনি। ওই পক্ষ মামলা করলে আমিও মামলা করব।‘ 

রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। কিন্তু কোনো পক্ষই লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা