বরিশাল অফিস
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:০৮ পিএম
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:৫৬ পিএম
প্রায় অর্ধশত শহীদ মিনার তৈরি করেছে ওই মহল্লায় বসবাসকারী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিশু শিক্ষার্থী। ছবি : প্রবা
২১ ফেব্রুয়ারি এলেই বরিশাল নগরীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলপুর কলোনিটি আবৃত করা হয় শহীদ মিনার দিয়ে। এবারও প্রায় অর্ধশত শহীদ মিনার তৈরি করেছে ওই মহল্লায় বসবাসকারী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিশু শিক্ষার্থী। মাটি, ইট, বাঁশ দিয়ে বানানো শহীদ মিনারে মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) একুশের সকালে ফুল দিয়ে ভাষাসংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। জমানোর টাকা দিয়ে যে শুধু শহীদ মিনারই বানিয়েছে এমনটি নয়, শিশুদের উদ্যোগেই চাল-ডাল কিনে খিচুড়ি ও মিষ্টি বিতরণও করা হয়েছে। পাশাপাশি শহীদ মিনার নির্মাণ প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণের আয়োজন ছিল।
জানা গেছে, কীর্তনখোলা নদীর তীরে রসুলপুর কলোনি এলাকায় কোনো শহীদ মিনার না থাকায় এক যুগ ধরে শিশুরা স্কুলের টিফিনের টাকা জমিয়ে ছোট ছোট শহীদ মিনার তৈরি করে আসছে।
২০১১ সালে শহীদ মিনার নির্মাণের এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই থেকে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুযারি রসুলপুর কলোনির শিশুরা নিজেদের হাতে শহীদ মিনার নির্মাণ করে ভাষা দিবস পালন করে। আর এ কাজে সহযোগিতা করে আসছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের তৎকালীন নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্তী। পরে পুরো আয়োজনটি শিশুকেন্দ্রিক হলেও ছোট-বড় সবাই এতে সহায়তা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মোকলেছ বলেন, ’শিশুরা শহীদ মিনার নির্মাণের এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বাবা-মার দেওয়া স্কুলে টিফিনের টাকা জমাতে শুরু করে। সেই জমানো টাকা দিয়ে শহীদ মিনার তৈরির পাশাপাশি তবারক বানিয়েও খাওয়ায়।’
সনিয়া বেগম নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘শিশুরা শুধু শহীদ মিনার বানায় এমনটা নয়, তারা শহীদদের সম্পর্কেও জানতে পারেন। আমার ছেলে তার মামার কাছ থেকে পাওয়া টাকা নিয়ে রঙিন কাগজ, রঙ ও কাঠের গুঁড়া কিনে এনে শহীদ মিনার বানিয়েছে। সে শহীদ মিনার বানাতে পেরে বেশ খুশি। তার ভালো লাগা আমাদের কাছেও আনন্দের বিষয়। এ কাজে ডা. মনীষা দি শিশুদের ব্যাপক উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি নিজে উপস্থিত থেকে প্রতিযোগিতার পুরস্কার দেন।’
মাসুদ মিয়া নামে একজন বলেন, ‘এই এলাকার বেশিরভাগ শিশুরা টিফিনের টাকা জমিয়ে শহীদ মিনার বানায়। সেই শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় তারা। বড়রাও শিশুদের বানানো শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।’
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী অহনা বলে, ‘নিজের হাতে শহীদ মিনার বানাতে গিয়ে আমরা জানতে পারছি, যারা বাংলাভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন তাদের কথা। এই এলাকায় কোনো শহীদ মিনার না থাকায় ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই আমরা নিজেরা প্রতিবছর শহীদ মিনার নির্মাণ করছি।’
সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশাল জেলা কমিটির সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহরে নানা ধরনের আয়োজন থাকে। যেখানে শহরের মানুষরাই অংশ নেন। এখানের শিশুরা তাদের নিজের হাতে শহীদ মিনারগুলো নির্মাণ করছে। আমরা তাদের সহযোগিতা করছি। আমরা বাসদের পক্ষ থেকে শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য শহীদ মিনার নির্মাণ, চিত্রাঙ্কন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছি।’ তিনি বলেন, ’রসুলপুর কলোনি বরিশাল নগরীর একটি দরিদ্র এলাকা। এখানকার শিশুরা প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে ওঠে। এখানে মাদক ও সন্ত্রাসের বিস্তার আছে। এ ছাড়া নানা ধরনের অন্ধকার জগতের হাতছানি সেখানে আছে। আমি মনে করি, এ ধরনের আয়োজন শিশুদের মানসিক বিকাশ, বেড়ে ওঠা, দেশপ্রেম সৃষ্টির লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অন্ধকারাছন্ন এ এলাকায় সরকারি উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণ জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. হারুন আর রশিদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ’কয়েক বছর ধরে রসুলপুর কলোনির শিশুরা নিজ উদ্যোগে শহীদ মিনার তৈরি করে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করছে। আমরা বিষয়টি জানি। সিটি করপোরেশনের সরকারি বরাদ্দ কম থাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। বরাদ্দ পেলে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।’