সন্দ্বীপের উড়িরচর
চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:১৯ পিএম
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২১:০৬ পিএম
কলাগাছ দিয়ে বানানো তিনটি স্তম্ভ। ছবি : প্রবা
সবুজ ঘাসের মধ্যে কলাগাছ দিয়ে বানানো তিনটি স্তম্ভ। তাতে সাদা কাগজে বাংলা বর্ণ লিখে সাজানো। ঝুলানো হয়েছে বনফুলের মালাও। সামনে হলুদ কাপড় বিছিয়ে ওপরে রাখা একটি সাদা কাগজ। তাতে কালো রঙে বড় অক্ষরে লেখা ‘মহান ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩’। নিচে লেখা ‘উড়িরচর এ এইচ নবদিগন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।’ ওপরে ছিটিয়ে দেওয়া হলুদ রঙের নানা ফুলের পাপড়ি।
এভাবেই মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নিজেদের হাতে শহীদ মিনার বানিয়ে মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। আর শ্রদ্ধা জানানোর এ কাজ করেছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন উড়িরচরের এ এইচ নবদিগন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ। আর বিচ্ছিন্ন উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন উড়িরচর। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধায় পিছিয়ে থাকলেও দেশকে ভালোবাসায় পিছিয়ে নেই এই দ্বীপের বাসিন্দারা। তাই যেন জানান দিল এ এইচ নবদিগন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষকসহ ১৫১ জন শিক্ষার্থী।
এই ইউনিয়ন এতটাই বিচ্ছিন্ন যে সেখানে ফুলের বাণিজ্যিক ব্যবহার নেই। স্থানীয়দের বাড়ি ঘুরে শিক্ষার্থীরা সংগ্রহ করেছেন গাঁদাসহ বিভিন্ন বনফুল। এই পুরো আয়োজনে বিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষকের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন ১০ শিক্ষার্থী। সকালে প্রভাতফেরি শেষে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছিল প্রতিযোগিতামূলক আয়োজনও। অঙ্কের দৌড়, মোরগের লড়াই, চকলেট দৌড়সহ ১০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার বলেন, ‘প্রতিবারই বিভিন্নভাবে জাতীয় দিবস পালন করা হয়। তবে এবার একটু ভিন্ন আঙ্গিকে পালন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এতে অনেক খুশি হয়েছে। তাদের আনন্দ দেখে ভালো লাগছে।’
রাতে শহীদ মিনার বানানোর দায়িত্বে ছিলেন বিদ্যালয়ের চার সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, শিপন সূত্রধর, শুভ দাশ, বিমল চন্দ্র বণিক। শুভ দাশ বলেন, ‘এই ইউনিয়ন একেবারেই বিচ্ছিন্ন। পুরো ইউনিয়নে একটি শহীদ মিনার আছে। সেটাও বেশ দূরে। ভাবলাম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আমরাই প্রতীকী শহীদ মিনার বানাই। সেই ভাবনা থেকেই আয়োজনটা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ’কলাগাছ, ফুল সংগ্রহ, মালা গাঁথা সবই করেছে শিক্ষার্থীরা। এমনকি আয়োজনকে ঘিরে পুরো বিদ্যালয় তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নও করেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশাত্ববোধ জাগিয়ে তোলাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। আয়োজনে তাদের যে প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ আর উচ্ছ্বাস দেখেছি, তাতে মানসিক প্রশান্তি ও তৃপ্তি পেয়েছি।’
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইশী দাশ বলেন, ‘এভাবে কখনও একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করিনি। অনেক ভালো লাগছে।’