বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চাঁদপুর পুলিশ লাইনসে কনস্টেবল পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের বরণ করে নেন জেলা পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ। প্রবা ফটো
ট্রেন দুর্ঘটনায় পা হারিয়েছিলেন তাফাজ্জল। এক পায়ে ভর করে কৃষিকাজ পেশা হিসেবে নিয়েছেন। সংসারে চার ছেলে। সবাই কৃষিকাজে নির্ভরশীল। এক মেয়ে জান্নাত। পড়াশোনা করছেন ডিগ্রিতে। পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে স্বপ্ন দেখা শুরু করেন জান্নাত। সেই স্বপ্ন তার পূরণ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। দিনশেষে সন্ধ্যায় চাঁদপুর পুলিশ লাইনসে জান্নাত ও তার বাবা তাফাজ্জলকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ। ওই অনুষ্ঠানে শুধু জান্নাতকে নয়, আরও ৯২ জনকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে জেলা পুলিশ বিভাগ। সবাইকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নেন জেলা পুলিশ সুপার।
জান্নাতের বাবা তাফাজ্জল হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘পুলিশে চাকরি পাবে মেয়ে, এটা আমাদের স্বপ্নের মতো। মাত্র ১০০ টাকায় ফরম কিনে মেয়ে চাকরি পেয়েছে।’
জান্নাত বলেন, ‘বাবা আগে কলেজঘাটে নৌকার মাঝি ছিল। তারপর ট্রেনে পা হারায়। পরিবারে শুধু আমি পড়াশোনা করেছি। দারিদ্র্য জয় করে আজ প্রথম হয়ে চাকরি পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ।’
জান্নাতদের বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড রামচন্দ্রপুর গ্রামে।
কনস্টেবল পদে উত্তীর্ণ সাইফুর রহমানের বাবা প্রবাসী। তারা দুই ভাই এক বোন। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সাইফুর বলেন, ‘পুলিশে চাকরি পেতে কাউকে এক কাপ চা ঘুষ খাওয়াতে হয়নি। নিজেও কখনও ঘুষ খাব না। পুলিশ নিয়ে মানুষের যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আছে, চাকরিজীবনে তা পাল্টে দেওয়ার ভূমিকায় কাজ করব।’
অটোরিকশা চালক রুহুল আমিন। তার ছেলে মিলন পুলিশে চাকরি পাওয়ায় খুশি। রুহুল আমিন বলেন, ‘ঘুষ ছাড়া ছেলে চাকরি পেয়েছে। পরিবারে বা বংশে এই প্রথম সরকারি চাকরি পেল কেউ।’ ঘুষ বা তদবির ছাড়া চাকরি পাওয়ায় পুলিশ বিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অভিভাবকরা।
চাকরি নয়, সেবা—এ স্লোগান সামনে রেখে চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ বছর চাঁদপুরে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগের বাছাইপর্ব শুরু হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর পুলিশ লাইনস মাঠে পুরুষ ও নারী টিআরসি পদে নিয়োগের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়।
এ বছর সাধারণ কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, পোষ্য কোটা, এতিম কোটা, আনসার কোটা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী (পুরুষ ও নারী) কোটায় ৩ হাজার ২৬ জন আবেদন করেন। আবেদনকারী পুরুষ ২ হাজার ৭৬৫ ও নারী ২৬১ জন। বৃহস্পতিবার দিনভর মৌখিক পরীক্ষা শেষে পুরুষ ৭৯ ও নারী ১৪—এ মোট ৯৩ জনকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়।
পুলিশের চাকরিতে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হওয়া ৯৩ জনকে বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশ লাইনসের মিলনায়তনে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, সদর সার্কেল ইয়াসির আরাফাত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশকান্তি রায়সহ পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
পুলিশ সুপার হিসেবে টানা তিনবার নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে শেষ করেছেন বলে জানিয়ে মিলন মাহমুদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘১৭০ জন মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। সেখান থেকে মেধার মূল্যায়ন করে ৯৩ জনকে নির্বাচিত করা হয়।’ চাঁদপুরে টানা তিনবার পুলিশে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন মিলন মাহমুদ। স্বচ্ছতার সঙ্গে যোগ্যদের নিয়োগ দিতে পেরেছেন বলে মনে করেন জেলা পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.