× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

টঙ্গীতে যেখানে খাসজমি সেখানেই অবৈধ স্থাপনা

টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:২১ পিএম

আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:৫৪ পিএম

টঙ্গীতে সড়ক ও জনপদ বিভাগের উচ্ছেদ অভিযান। ফাইল ফটো

টঙ্গীতে সড়ক ও জনপদ বিভাগের উচ্ছেদ অভিযান। ফাইল ফটো

টঙ্গীতে জমি দখলের যেন প্রতিযোগিতা চলছে। এক চিলতে জমিও খালি নেই, যা দখল হয়নি। যেখানেই সরকারি জমি, সেখানেই গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা। অলিগলি, রাস্তার পাশে, কলকারখানার দেয়ালের পাশে, খাসপুকুর, ডোবা, ড্রেন সর্বত্রই দখলদারদের রাজত্ব।

টঙ্গী জাকাত বোর্ড শিশু হাসপাতালের অর্ধেক জমি দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। ৭৪ জন দখলদার দেড় শতাধিক ঘর তুলে তাতে ভাড়ার ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবৈধ দখল উচ্ছেদের আবেদন জানিয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে কয়েক দফা চিঠি দিলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেননি।

হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক কামরুন্নাহার সুমী বলেছেন, ‘হাসপাতালের ৪৮ শতাংশ জমি বেদখল হয়ে গেছে। এ কারণে ২০ শয্যার এই হাসপাতালের অবকাঠামো সম্প্রসারণসহ সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’ 

টঙ্গী গ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ কেন্দ্রের (টিবিএস) দেয়াল ঘেঁষে পাশের জমি এবং মূল পাইপলাইনের ওপর সরকারি জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে টিনের তৈরি অবৈধ স্থাপনা। এসব স্থাপনায় রয়েছে কামারের দোকানসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থের গুদাম। এখানে রাখা হয় টুকরো কাপড়, কাগজ, কাঠের বাক্স, পুরোনো প্লাস্টিকসামগ্রীসহ নানা ধরনের দাহ্য ও ভাঙারি বর্জ্য। যেকোনো সময় এখানে ঘটতে পারে অগ্নিকাণ্ডসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা। ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে গ্যাস সরবরাহ কেন্দ্রটির। এই কেন্দ্র থেকে ৮০ মেগাওয়াট গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ কমপক্ষে ৪০০ কারখানায় গ্যাস সরবরাহ ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সেই কেন্দ্র এখন মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। 

টঙ্গী ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, টঙ্গীতে ৩৫৭ দশমিক শূন্য ৬ একর খাসজমি রয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকা হওয়ায় এসব খাসজমি বন্দোবস্তের নিয়ম নেই। দীর্ঘদিন ধরে এসব জমি রয়েছে অবৈধ দখলে। এমনকি ২০২২ সালে টঙ্গী তহসিল অফিস ২ দশমিক ২৬ একর জমির ওপর স্থাপিত হলেও বর্তমানে ১ দশমিক ১৯ একর ছাড়া অবশিষ্ট জমি বেদখল হয়ে গেছে। টঙ্গী ভূমি অফিসের নিজস্ব জমি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পর তা পুনরুদ্ধারে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।

এসব জমি যারা দখল করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। টঙ্গীতে ২১ দশমিক ৫৯ একর জমিজুড়ে ২৫টি খাসপুকুর রয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা দীর্ঘদিন ধরে এসব সরকারি সম্পত্তি দখল করে রেখেছেন। 

ষাটের দশকের প্রথম দিকে টঙ্গীতে শিল্পকারখানা স্থাপন শুরু হয়। শিল্পাঞ্চলের কারখানা প্লট ও রাস্তার মধ্যে বেশকিছু জমি নিরাপত্তাজনিত কারণে ফাঁকা রাখা হয়, যা বর্তমানে অবৈধ স্থাপনায় পূর্ণ হয়ে গেছে। 

চেরাগ আলী মার্কেট থেকে তিস্তা গেট ও ফাইসন্স রোড পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা ও দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। ইস্টার্ন রিগাল ইন্ডাস্ট্রিজের পেছনে, ন্যাশনাল টিউবসের পশ্চিম পাশে, সোনালী টোব্যাকো রোড, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল রোড ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আশপাশে পাঁচ শতাধিক টিনের তৈরি অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এগুলোতে গার্মেন্টস বর্জ্য ও বিভিন্ন ভাঙারি পণ্য রাখা হয়। টঙ্গী বিদ্যুৎ অফিসের দেয়ালের উত্তর পাশ-সংলগ্ন জমিতে গড়ে উঠেছে অবৈধ অটোরিকশা টার্মিনাল। এলোপাতাড়ি রিকশা অবস্থানের কারণে যান চলাচলে দেখা দিচ্ছে বিড়ম্বনা।

টঙ্গী এলাকার প্রায় প্রতিটি ড্রেনের ওপর গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাট। এতে ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে পড়েছে। জমা হয়ে থাকা মাটি ও ময়লা আবর্জনা অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে বর্ষায় পানি জমে সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

সিটি করপোরেশন থেকে কয়েক দিন পরপর মহাসড়কের পাশ থেকে অস্থায়ী সবজির দোকান অপসারণ করা হলেও স্থায়ীভাবে গড়ে তোলা স্থাপনাগুলো উচ্ছেদে কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। এ ব্যাপারে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, ’সরকারি জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অচিরেই অভিযান শুরু হবে।’

টঙ্গী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ও গাজীপুর সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা হুমায়ূন হিমু বলেন, ’সরকারি জমিতে, রাস্তার পাশে ও ড্রেনের ওপর গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনার কারণে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে, যান চলাচলে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ড্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ময়লা পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে না। এসব দখলদারকে উচ্ছেদ করে সরকারি জমি উদ্ধারে প্রশাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।’

গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, ’টঙ্গীতে জাকাত বোর্ড শিশু হাসপাতালের জমি বেদখল হয়েছে, এমন একটি চিঠি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পেয়েছি। শুনেছি ওই জমিতে নাকি একটি স্কুল রয়েছে। আসলে জমিটির মালিকানা কার তা নিশ্চিত হতে হবে। অবৈধ স্থাপনা থাকলে প্রশাসন যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা