কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৩ ২৩:১১ পিএম
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৩ ০০:২৪ এএম
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। বয়স ১০ বছর। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে ছোট সে। কিন্তু অন্যসব পরিবারের ছোট সন্তানদের মতো হেসে-খেলে তার জীবন কাটছে না। এমনকি অন্য আট-দশটা শিশুর মতো মুক্ত থেকেও নয়, বরং বন্দী। চার দেয়ালের মধ্যে নয়, লোহার শিকলে, গত তিন বছর ধরে। তার অপরাধ ‘দুরন্তপনা’! এই শিকলবন্দী অবস্থায়ই চলছে তার খাওয়া, গোসল, ঘুমসহ নানান দৈনন্দিন কাজ। তার মা-বাবার ভাষ্য অনুযায়ী একটু ‘দুষ্ট প্রকৃতি’র হওয়ায় তাকে এভাবে শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের ঝরঝরি পাড়া এলাকার বাসিন্দা ফরিদ আহমদ ও নুর বানু। এ দম্পতির সন্তান আবদুল্লাহ। বিষয়টি নানা মাধ্যমে নজরে আসার পর দুরন্তপনা এ শিশুর সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বপ্রণোদিত এক আদেশে বিচারক মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী বলেছেন, ‘তিন বছর ধরে শিকলবন্দী শিশু আবদুল্লাহর বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ১০ বছরের শিশু আবদুল্লাহকে দুরন্তপনার কারণে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। যা অমানবিক এবং বেআইনি মর্মে অত্র আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে।’
এমন পরিস্থিতিতে শিশু আবদুল্লাহর সাথে কথা বলতে চান তিনি। এ জন্য ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত বুধবার দুপুরে আদালতের নোটিশ পাওয়ার কথা জানিয়ে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাসান মাসুদ বলেন, ‘আমাদের মাঠ কর্মীরা বেশ কয়েকবার আবদুল্লাহর বাসায় গিয়েছে। গত বুধবার সকালে তার পায়ে ও কোমরে মোড়ানো শিকল খুলে দেওয়া হয়। এরপর রাত পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার (গতকাল) সকালে শিশুটি ঘরে ফিরেছে বলে পরিবার থেকে জনানো হয়। তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে।’ সদর মডেল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আদালতের নোটিশ পেয়েছি। সমাজ সেবা কর্মকর্তার সাথে কথা হয়েছে। শিশুটিকে আদালতে আনার প্রক্রিয়া চলছে।’
এর আগে আবদুল্লাহর পিতা ফরিদ আহমেদ বলেছিলেন, 'সে সারাদিন ঘরের বাইরে থাকে। প্রতিদিন তার নামে বিচার আসে। মানুষের কাছে মানসম্মান বলতে আর কিছু নেই। মানুষের কথা থেকে রেহাই পেতে অতিষ্ঠ হয়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি।’
মা নুর বানু বলেন, ‘বর্তমানে সহায় সম্পদ বলতে তেমন কিছুই নেই। মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে জীবিকা নির্বাহ করি। আবদুল্লাহর বড় আরও চার ভাই আছে। তাদের বিয়ে হয়েছে, আলাদা সংসার। আবদুল্লাহকে কলাতলী দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছিলাম। কিন্তু অভাবের কারণে পড়াতে পারিনি।’
শিকলবন্দী করার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘তার (আবদুল্লাহ) নামে মানুষ বিচার দেয়। মানুষের কথায় থেকে বাঁচতে এই পথ বেঁচে নিয়েছি। অনেক খারাপ লাগে। মাঝেমধ্যে ছেলের দিকে চেয়ে জড়িয়ে ধরি। ছেলের জীবনটা চোখের সামনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এত সরকারি সহযোগিতা আছে শুনেছি, কিন্তু কেউ কোন সহযোগিতা বা পরামর্শ দেয়নি।’