শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৩ ০৯:৩১ এএম
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৩ ১৪:০৩ পিএম
গাজীপুরের মাওনার সিংদীঘি (মুন্সীপাড়া) গ্রামে সস্ত্রীক নছু মিয়া ও রমিজ উদ্দিন। প্রবা ফটো
শারীরিক উচ্চতা মাত্র আড়াই ফুট, কিন্তু মনের উচ্চতায় তারা অতুলনীয়। নছু মিয়া (৬০) ও রমিজ উদ্দিন (৫০) তাদের সামাজিক ও সাংসারিক জীবনে সবার কাছে সম্মানের পাত্র। এ দুই সহোদরের সম্পর্কে প্রতিবেশীরা উচ্চ প্রশংসা করেন। অভাব-অনটনের মধ্যেও পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা সুখে আছেন।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিংদীঘি (মুন্সীপাড়া) গ্রামের মৃত চাঁন মিয়ার এ দুই ছেলে জন্ম থেকেই খর্বাকৃতির। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে তারা উচ্চতায় খাটো। দুই সহোদর প্রায় চার যুগ ধরে দাম্পত্য জীবন পরিচালনা করছেন। এর মধ্যে নছু মিয়ার দুই ছেলে। তাদের উচ্চশিক্ষিত করতে পারেননি, তবে এ নিয়ে তার কোনো আক্ষেপ নেই। ছেলেরা বিপথগামী হননি। এতেই সন্তুষ্ট নছু মিয়া।
নছু মিয়ার স্ত্রী কমলা রানী জানান, ৪০ বছর আগে নছু মিয়ার সঙ্গে সংসারজীবন শুরু করেন তিনি। সংসারে অভাব-অনটন থাকলেও তাদের মধ্যে ভালোবাসা বা সুখের কোনো অভাব নেই।
পরিবারের প্রতিবন্ধী সদস্যদের প্রতি যত্ন নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে কমলা রানী আরও বলেন, এতে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হয়। প্রতিবন্ধীরা নিজেকে অন্য দশজন মানুষের মতো ভাবতে পারেন। সুস্থ স্বাভাবিক মনোবল নিয়ে বেড়ে ওঠেন।
রমিজ উদ্দিনের স্ত্রী বলেন, বাবা-মা দেখেশুনে বিয়ে দিয়েছেন। যার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন তার সঙ্গে এখনও সংসার করছি। আমাদের মধ্যে মায়া-ভালোবাসা অটুট রয়েছে বলেই একসঙ্গে আছি। ৩৫ বছর ধরে সংসার করছি, কোনো সময় কোনো বিষয় নিয়ে আমাদের বাদানুবাদ হয়নি।
রমিজ উদ্দিন ও নছু মিয়ার ছোট ভাই চাঁন মিয়া বলেন, আমার দুই ভাই প্রতিবন্ধী। এজন্য তাদের ফেলে দেওয়া যাবে না। ভাই-বোনদের মধ্যে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। তবে বয়সের কারণে তারা এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বড় ভাইয়ের হাঁপানি রয়েছে। সমাজসেবা অফিস থেকে যে টাকা পান, তা দিয়ে ভাইদের চলতে কষ্ট হয়।
সিংদীঘি গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক সোলায়মান মোহাম্মদ বলেন, তারা দুই ভাই প্রতিবন্ধী হয়েও পরিবারকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। সন্তানদের মানুষ করেছেন। দুই ভাই প্রতিবন্ধী ভাতা পান। কিন্তু ওই ভাতায় তাদের চলতে কষ্ট হয়।
মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম খোকন বলেন, যাদের কর্ম নেই, চলাফেরা করতে পারে না এ রকম হতদরিদ্র মানুষের জন্য সরকার দোকানের অনুদান দিয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা রমিজ উদ্দিন ও নছু মিয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছি।
শ্রীপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, দুই ভাইকে আমরা প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় নিয়ে এসেছি। তারা দীর্ঘদিন ধরে ভাতা পাচ্ছেন।