ঠাকুরগাঁও প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৩ ১৪:৫২ পিএম
বালিয়াডাঙ্গীর বেংরোল এলাকার কৃষকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে সোলার পাম্পের মাধ্যমে সেচ পদ্ধতি।প্রবা ফটো
‘বোরো ধান চাষে হামার অনেক খরচ হয়। আগত ডিজেলের লিটার ছিল ৬৫ টাকা। আর এলা লিটার ১০৯ টাকা। সারের দাম আগে কম ছিল এখন ডাবল, বিদ্যুতের দাম বেশি। বিদ্যুৎ চলে যাছে, ওই তানে সোলার দিয়া পানি দেছি। খরচ অনেক কম হচ্ছে।’ এভাবেই ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর বেংরোল এলাকার কৃষক নাজমুল ইসলাম তার নিজের অনুভূতি তুলে ধরেন।
সময়ের বিবর্তনে আধুনিক হয়েছে সবকিছু। পাশাপাশি আধুনিক হয়েছে ফসল উৎপাদন পদ্ধতি ও ব্যবহার। বর্তমানে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি ও লোডশেডিংয়ের কারণে বিকল্প পদ্ধতিতে সেচ সুবিধা নিচ্ছেন কৃষকরা। বেড়েছে সোলার সেচ পাম্পের। রবি মৌসুমে বোরো ফসল উৎপাদনে সেচ একটি অন্যতম বিষয়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও লোডশেডিংয়ের কারণ সৌর সোলার সেচ পাম্পে অল্প খরচে জমিতে সেচ সুবিধায় খুশি ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা।
সদর কালমেঘ এলাকার উপকারভোগী কৃষক বরকতুল্লাহ বলেন, এক একর জমিতে তেল বা বিদ্যুৎ দিয়ে মোটর চালিয়ে সেচ দিতে খরচ হয় ৮ হাজার টাকা, আর সোলার সেচে খরচ হয় ৩ হাজার টাকা। এই সোলার সেচে বোরো চাষে আমাদের অনেক খরচ কম হচ্ছে। আশা করি আমরা কৃষকরা লাভবান হব।
পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার কৃষক পুলক রায় বলেন, সোলার সূর্যের আলোয় চলে, বিদ্যুৎ-তেল লাগে না। লোডশেডিং অথবা তেল শেষ হওয়ার চিন্তা করতে হয় না। আমাদের অনেক উপকার হইছে এই সোলার সেচ দিয়ে।
সদর মোলানি এলাকার কৃষক মান্নান আলী বলেন, বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম অনেক বেশি। তাই চাষাবাদে বাড়তি খরচের দুশ্চিন্তা থাকে। বর্তমানে সোলার পদ্ধতিতে সেচে এক একর জমিতে মাত্র ২ হাজার টাকায় ইচ্ছামতো সেচ সুবিধা পাচ্ছি। স্থানীয় সোলেমান আলীর কাছে সোলার ভাড়া পাওয়া যায়।
স্থানীয় কৃষকদের মাঝে সোলার প্যানেল ভাড়ার সঙ্গে জড়িত সদর মোলানি গ্রামের বাসিন্দা সোলেমান আলী বলেন, আমি সাইকেল মেকার ছিলাম। ১৯৯৮ সালে মেকারি ছেড়ে এলজিইডির কাছ থেকে সৌরবিদ্যুতের ৭৫ ওয়াটের একটি প্যানেল ও ব্যাটারি কিনে গবেষণা শুরু করি। ২০১৪ সালে ব্যাটারিবিহীন ভ্রাম্যমাণ ৩০০ ওয়াটের সোলার পাওয়ার তৈরি করতে সক্ষম হই। বর্তমানে আমার কাছে ১৩টি ব্যাটারিবিহীন ভ্রাম্যমাণ সোলার আছে।
তিনি আরও বলেন, সোলারের কারণে বর্তমানে অল্প খরচে বোরো ধান রোপণ করা যাচ্ছে। শ্যালো মেশিনের তেল, মেশিন চুরি, নষ্টের ভয় থাকে, শব্দদূষণ হয়। সোলারের কারণে এখন আর এসব নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। আমার কাছ থেকে অনেকে সোলার পাম্প ভাড়া ও ক্রয় করে নিয়ে যান।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল আজিজ বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলার প্রায় ৭ হাজার কৃষক এখন সোলার পাম্পের মাধ্যমে সেচ সুবিধা নিচ্ছেন। সোলার পাম্পের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিয়ে ডিজেল ও বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীলতা কমার পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমেছে।
চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ে বোরো ধানের চাষ হয়েছে ৬০ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে ১৪১টি সৌরশক্তিচালিত সেচ পাম্পের সুবিধা নিচ্ছেন কৃষকরা।