খুলনা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৩ ২১:০৪ পিএম
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩ ১৩:৩৯ পিএম
খুলনা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে ভোগান্তিতে রোগীরা। ছবি : সংগৃহীত
খুলনায় চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে ও হামলাকারীকে গ্রেপ্তার দাবিতে চলমান অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসক নেতারা। শুক্রবার (৩ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) নেতাদের বৈঠক অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়। বৈঠকের পর এই কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন চিকিৎসক নেতারা। তাদের এমন ঘোষণায় বিপাকে পড়েছে রোগীরা। এদিন ডাক্তারদের কাছে গেলেও তারা চিকিৎসা পাননি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক রাশেদা সুলতানার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল খুলনায় চিকিৎসক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বেলা ৩টায় শুরু হওয়া এ বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে শেষ হয়।
বৈঠক শেষে বিএমএ খুলনা শাখার সভাপতি শেখ বাহারুল আলম বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে চিকিৎসাক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া খুলনার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের বক্তব্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
জানা গেছে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্তানের চিকিৎসার অবহেলা ও রোগীর মা নুসরাত আরা ময়নাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান নিশাত আব্দুল্লাহকে নগরীর বেসরকারি ক্লিনিক হক নার্সিং হোমে লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনায় নুসরাত আরা ও তার স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা শেখ নাইমুজ্জামানের নাম উল্লেখ করে সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেন নিশাত আব্দুল্লাহ। ওই মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার ও চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে গত মঙ্গলবার খুলনা বিএমএ সংবাদ সম্মেলন করে বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কর্মবিরতির ডাক দেন চিকিৎসক নেতারা।
পরদিন বুধবার নুসরাত আরা বেসরকারি ক্লিনিকের মালিক ও নিশাত আব্দুল্লাহর নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সোনাডাঙ্গা থানায় অপর একটি মামলা করেন। এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতি অনির্দিষ্টকাল হিসেবে ঘোষণা দেন। খুলনা বিএমএ ও বেসরকারি ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক অ্যাসোসিয়েশন মামলা প্রত্যাহার ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এ কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বিএমএ খুলনার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ শনিবার বেলা ১১টায় শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং সন্ধ্যা ৭টায় বিএমএ ভবনে জরুরি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বিএমএ খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী নেওয়াজ।
অপরদিকে শিশুসন্তানের সঠিক চিকিৎসা না পাওয়া ও হোয়াটসআপে চিকিৎসকের অনৈতিক প্রস্তাব এবং স্বামীর নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও সন্তানের সুচিকিৎসার দাবি জানিয়ে নুসরাত আরা বুধ ও বৃহস্পতিবার খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এদিকে চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করার মামলায় আসামি পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক শেখ নাইমুজ্জামানকে সাতক্ষীরা এপিবিএন (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) থেকে জেলা পুলিশে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক বলেন, চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় নিশাত আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। অপরদিকে নুসরাত আরা নামে এক নারী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নিশাত আব্দুল্লাহ ও হক নার্সিং হোমের মালিকের নামে মামলা করেছেন। মামলা ও ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলছে।