সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ
চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩ ১৮:৩০ পিএম
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৩ ১৯:০১ পিএম
মরদেহ শনাক্তের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন সেলিম রিচিলের পরিবারের সদস্যরা। প্রবা ফটো
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ‘সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেড’-এর কারখানায় নিহত ছয়জনের মধ্যে সর্বশেষ ব্যক্তিরও পরিচয় মিলেছে। সেলিম রিচিল নামে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার এই ব্যক্তি ওই কারখানার একজন কর্মী ছিলেন। বিস্ফোরণে তার মুখমণ্ডল পুরোটাই বিকৃত হয়ে যাওয়ায় চেনার কোনো উপায় ছিল না। রবিবার (৫ মার্চ) ভোরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে এসে তার স্ত্রী লিলি মারাথ পরনের শার্ট দেখে তাকে শনাক্ত করেন। এ সময় তিনি মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
লিলি মারাথ মরদেহ শনাক্ত করে হাসপাতালের পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে যান। তাদের লিলি বলেন, ‘ওনি আমার স্বামী। এই শার্ট পরেই তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে কারখানায় গিয়েছিলেন। মাথা ঠিক আছে। শরীরও চিনতে পেরেছি। শুধু মুখমণ্ডল বিকৃত হয়েছে।’
লিলি মারাথের ভাই মিথুন মারাথ বলেন, ‘অল্পের জন্য আমার বোন জামাই বাঁচেননি। ওনার কয়েকজন সহকর্মী বেঁচে গেছেন। কারখানা থেকে ওনার কয়েকজন সহকর্মী নাস্তা খেতে বের হওয়ার সময় সেলিমকে ডেকেছিলেন। তখন সেলিম বলেছিল, তোমরা যাও, আমি কাজ শেষ করে আসতেছি। এর পরপরই বিকট শব্দে কারখানায় বিস্ফোরণ হয়। তখন তিনি আর বের হতে পারেননি।’
নিহত সেলিম রিচিলের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়। শ্বশুরবাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ণহাট এলাকায়। কর্মসূত্রে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সীতাকুণ্ডে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।
সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণের খবর পেয়েই শনিবার সন্ধ্যায় লিলি মারাথের বাবা অজয় মারাথ ফটিকছড়ি থেকে চমেক হাসপাতালে ছুটে আসেন। প্রথমে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে আহতদের মধ্যে মেয়ের জামাতাকে খুঁজে পাননি। পরে হাসপাতালের মর্গে থাকা লাশগুলো দেখেছিলেন। কিন্তু তিনি শনাক্ত করতে পারেননি।
অজয় মারাথ বলেন, ‘আমি সেলিমকে চিনতে পারিনি। আমার মেয়ে তার পরনের শার্ট দেখে লাশ চিহ্নিত করেছে।’
হাসপাতালে অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জামশেদ আলম রানা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘নিহত ছয়জনের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। এখন ওই লাশেরও পরিচয় পাওয়া গেছে। সেলিম মারাথ নামে এই ব্যক্তির স্ত্রী এসে মরদেহ শনাক্ত করেছে।’
শনিবার (৪ মার্চ) বিকালে সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরা এলাকায় সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এতে পুরো কারখানায় আগুন লেগে ছয়জন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের চমেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে। বিস্ফোরণে কারখানার আশপাশের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে।