× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শরণখোলায় প্রাণপণ লড়াই করি আমরা

মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৩ ২২:২৫ পিএম

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী খান। ছবি: প্রবা

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী খান। ছবি: প্রবা

বিশ শতকে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এটি জাতির অহংকার ও গর্বের বিষয়। তবে স্বাধীনতা অর্জনে এ জাতিকে অনেক ত্যাগ-তিথিক্ষা সহ্য করতে হয়েছে। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর লাখো নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এ মুক্তি। এ স্বাধীনতা অর্জন করতে সম্মুখসমরে লড়েছেন অনেকেই, পরিচয় দিয়েছেন বীরত্বপূর্ণ সাহসিকতার। তাদের একজন হলেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী খান। আজ শোনাব তার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও লড়াইয়ের গল্প। 

মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টরের সুন্দরবন সাব-সেক্টরের তৎকালীন স্টুডেন্ট কমান্ডার ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী খান যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে মূলত স্বাধীনতা যুদ্ধের ডামাঢোল বেজে ওঠে। তারই নির্দেশ পালন করতে দক্ষিণ বাংলার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু ১৯৭০-এর পার্লামেন্টের এমএলএ শেখ আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে খুলনা জেলা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। তখন আমার বয়স ২২ বছর। সদ্য এইচএসসি পাস করে বেরিয়েছি। তখনকার থানা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।

সাবেক এই স্টুডেন্ট কমান্ডার বলেন, থানা ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকায় শেখ আব্দুল আজিজের নির্দেশে আমিসহ ১২ জন ছাত্র মুক্তিযোদ্ধার প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য প্রথমে বাগেরহাটের নাগেরবাড়ী ক্যাম্পে যোগ দিই ১৯৭১ সালের এপ্রিলে। ওখানে প্রশিক্ষণের পর অস্ত্র নিয়ে সর্বপ্রথম যাত্রাপুর এলাকায় পাকিস্তানি হানাদারদের প্রতিরোধ করি। পরে অস্ত্র গোলাবারুদ নিয়ে মোরেলগঞ্জে ফিরে হাসপাতালে ঘাঁটি তৈরি করি। ওখান থেকেই তৎপরতা শুরু। লোকবল কম থাকায় খুঁজে খুঁজে পুলিশ, আর্মি, বিডিআর সদস্যদের তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করি। এরই একপর্যায়ে ছুটিতে বাড়ি আসা সেনা সদস্য স ম কবির আহম্মেদ মধুর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাকে পেয়ে আরও উৎসাহিত হই। তাকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংগঠিত ও প্রশিক্ষণ নেওয়ার আহ্বান জানালে হাজারো ছাত্র-জনতা স্থানীয় গোডাউন মাঠে উপস্থিত হন।

তিনি বলেন, প্রথমে কুঠিবাড়ি, পরে সেরেস্তাদার বাড়িতে অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করা হয়। পরে হঠাৎ শুনি মাওলানা একেএম ইউসুফের নেতৃত্বে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩০০ রাজাকার বারইখালী ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থান নিয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের। ১৯৭১ সালের ১৩ মে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে ভোরে ওই ক্যাম্পে আক্রমণ করলাম। আমরা ৩০ জন ত্রিমুখী অবস্থান নিয়ে আক্রমণ শুরু করি। তারা আকস্মিক আক্রমণে সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত ছিল। আমরা তিনদিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমণ চালাই। প্রায় ২ ঘণ্টার তুমুল লড়াইয়ে সকাল হয়ে যায়। একপর্যায়ে ককটেল নিক্ষেপ করলে আগুন ধরে যায়। ওইদিন সেখান থেকে ফিরে আসার পথে রাজাকারদের গুলিতে কাঁঠালতলা গ্রামের আবুবকর সিদ্দিক তালুকদার প্রথম শহীদ হন।

পরে কয়েকবার আমাদের ক্যাম্প স্থানান্তর করা হয়েছে। শেষের দিকে সুন্দরবনে ক্যাম্প নেওয়ার প্রস্তুতি নিই। আমাদের কাছে অস্ত্র ছিল, তবে একপর্যায় গোলাবারুদ ও গুলি না থাকায় নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সুন্দরবনে ঘাঁটি করি। ওখান থেকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ভারতে গিয়ে ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ জলিলের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৪ দিনের মাথায় গোলাবারুদ নিয়ে আবার ফিরে আসি। 

ভারতে যাওয়ার আগে আমাদের সঙ্গে একত্র হন মেজর জিয়াউদ্দিন। ওনাকে পেয়ে আমরা আরও পূর্ণোদ্যমে একের পর এক যুদ্ধের পরিকল্পনা করি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দৈবজ্ঞহাটীর যুদ্ধ, ধানসাগরের পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ, ঘষিয়াখালী নদীতে শত্রুসেনাদের লঞ্চ ডুবিয়ে দেওয়া পরবর্তীতে আমরা সংঘটিত হয়ে মোরেলগঞ্জের রাজাকার এবং তাদের তিনটি ক্যাম্প আক্রমণ করি। সেখানে প্রাণপণ লড়াই করি। এতে ৩২ রাজাকার নিহত হয়। পরে তাদের গণকবর দেওয়া হয়। সেদিনের সে যুদ্ধে আমাদের তিন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত নজরুল ইসলাম মুকুলকে ভারতে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর পথে হানাদার বাহিনীর আক্রমণে শহীদ হন।

এরপর শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের সামনে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে আমাদের লড়াই হয়। সর্বশেষ ১১ ডিসেম্বর রায়েন্দা বাজারে রাজাকারদের ক্যাম্পে আক্রমণ করি মেজর জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে। ওইদিন রাত ৪টার দিকে আক্রমণ শুরু হয়। রাত পেরিয়ে পরের দিনভর যুদ্ধ চলে। একপর্যায়ে রাজাকাররা আত্মসমর্পণের ঘোষণা দেয়। তবে মুক্তিযোদ্ধারা ওই ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হলে তাদের গুলিতে আসাদুজ্জামান, আলাউদ্দিনসহ পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়। পরে দখল করা হয় ওই ক্যাম্প।

৭৬ বছর বয়সি এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে মোরেলগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ব্যক্তিগত জীবনে তার রয়েছে চার মেয়ে ও এক ছেলে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা