× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পাকিস্তানি ট্যাংক অকেজো করতে গিয়েই গুলিবিদ্ধ হন ইলিয়াস

যশোর প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৩ ২২:৩০ পিএম

বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুল কাদির ইলিয়াস। ছবি : প্রবা

বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুল কাদির ইলিয়াস। ছবি : প্রবা

আনিসুল কাদির ইলিয়াস যখন দশম শ্রেণির ছাত্র, তখন স্বাধিকার নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বাঙালিদের লড়াইয়ে উত্তপ্ত রাজনীতি। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ সবাইকে সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। সেই ঘোষণায় অধিকারের লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ হন এদেশের আবালবৃদ্ধবনিতা। এর কয়েক দিনের মধ্যেই বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাণ্ডবলীলা চালাতে শুরু করে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। স্থানীয়দের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় তারা, নির্বিচারে চলে হত্যা-নির্যাতন। এ পরিস্থিতিতে কেউ প্রশিক্ষণ নিয়ে আবার কেউ কেউ যা ছিল তাই নিয়ে হানাদার বাহিনীকে রুখতে প্রতিরোধে নেমে পড়েন। ইলিয়াসও চুপ থাকতে পারেননি। তিনি ভারতে চলে যান প্রশিক্ষণ নিতে। ফিরে নামেন মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে।

সিলেটের যুদ্ধক্ষেত্রে নেমেই শত্রুসেনাদের ঘায়েলের লক্ষ্যে তাদের ট্যাংক অকেজো করার মিশনে নামেন ইলিয়াসসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। সে সময়ে পাকিস্তানি ট্যাংকের চেইন নষ্ট করার জন্য গুলির নিশানা করেন এই তরুণ মুক্তিযোদ্ধা। সেই মুহূর্তে হানাদার বাহিনীর গুলি লাগে তার পায়ে। সঙ্গে সঙ্গে লুটিয়ে পড়েন তিনি। কয়েক মাস চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন এই অদম্য দেশপ্রেমিক।

প্রতিদিনের বাংলাদেশের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই জানিয়েছেন যশোরের ঝিকরগাছার বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুল কাদির ইলিয়াস। যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও রণাঙ্গনে পায়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার গল্প তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তখন আমি দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলাম। এরই মধ্যে চারদিক থেকে খবর আসে হানাদার বাহিনী এলাকার লোকজনকে ধরে নিয়ে হত্যা করছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শোনার পর চার বন্ধু পরিকল্পনা করি দেশের হয়ে যুদ্ধ করব। যেই সিদ্ধান্ত, সেই কাজ। আমি তিন বন্ধু জাবেদ আলী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহাব্বত আলী ও আব্দুর রাজ্জাককে সঙ্গে নিয়ে চলে যাই ভারতের ৫ নম্বর টালিখোলাতে যুদ্ধের জন্য ট্রেনিং নিতে। সেখানে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিয়ার রহমানের অধীনে চার দিনের যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেই। এরপর সেখানে আসেন মেজর হাফিজুর রহমান। অধিকতর ট্রেনিংয়ের জন্য তিনি কাঁঠালবাগানে নিয়ে যান। সেখানে কিছুদিন ট্রেনিং করানোর পর আমাদেরকে সিলেটের ভারতীয় সীমান্তের সিলিংয়ে নিয়ে যান। সেখানে পরে আসেন অ্যাডজুটেন্ট ওয়াকার। তিনি চার নম্বর সেক্টরে আমাদেরকে সংযুক্ত করে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে কিছুদিন মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধ করি। এরপর সিলেটের মেজর জেনারেল ওসমানীর নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করি। সেখানে যুদ্ধ করতে গিয়ে পায়ে গুলিবিদ্ধ হই। তখন আমার সঙ্গে থাকা মোহাম্মদ আলী নামে এক সৈনিক আমাকে প্রথম চিকিৎসা দিয়ে সিলিংয়ের হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পরে আমাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের গোহাটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের দেখতে হাসপাতালে আসেন। দুই মাস চিকিৎসার পর আমি পুরোপুরি সুস্থ হই। সেখান থেকে আমরা কয়েক বন্ধু মিলে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে যশোর পৌঁছাই। বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে দেখা করে ঢাকার সিএমএসে যাই। সেখানে আমাদেরকে বলা হয়, সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে। কিন্তু আমি বলি আমরা তো এখনও ছাত্র। আমরা তো শুধু দেশরক্ষার জন্যই যুদ্ধে নেমেছিলাম। তখন সেখান থেকে ছাড়পত্রে স্বাক্ষর করে আমাদেরকে বলা হয়, বাড়িতে ফিরে যেতে। সেখান থেকে বলা হয়, যুদ্ধে যাওয়ার যাবতীয় কাগজপত্র মুক্তিযোদ্ধার কল্যাণ ট্রাস্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এরপর আমি ঢাকা থেকে বাড়িতে ফিরে আসি।’ 

ঝিকরগাছা উপজেলার ডেপুটি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহাজান বলেন, ঝিকরগাছার কীর্তিপুর এলাকার আনিসুল কাদির ইলিয়াস যুদ্ধে প্রচণ্ড সাহসী ছিলেন। তিনি ভারতে ট্রেনিং নিয়ে সিলেটের এলাকায় যুদ্ধ করেন। যুদ্ধ করার সময়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।

মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসজুড়ে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেন স্বাধীনতাকামী যোদ্ধারা। এর মধ্যে যশোরে কয়েক দফায় বড় বড় যুদ্ধ হয়েছে। প্রায় ক্ষেত্রে সফলতার সঙ্গে শত্রুসেনাদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন মুক্তিসেনারা। অবশেষে ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় যশোর। এর মাধ্যমে প্রথম হানাদারমুক্ত জেলা শহর হওয়ার গৌরব অর্জন করে যশোর।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা