চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৩ ১৮:৫৫ পিএম
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৩ ২০:০১ পিএম
সীমা অক্সিজেনে বিস্ফোরণ। ফাইল ফটো
সীমা অক্সিজেনে বিস্ফোরণ মামলায় নিহত একজন শ্রমিকের স্ত্রী মামলায় অভিযোগ করেছেন, অনভিজ্ঞ লোকবল দিয়ে কারখানা চালানোর কারণে সেখানে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে। প্ল্যান্টে যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়নি। নিহত আব্দুল কাদেরের স্ত্রী রোকেয়া বেগম সোমবার (৬ মার্চ) এই মামলা করেন। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির তিন মালিকসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়। এখনও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সীতাকুণ্ডু মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, ১০ থেকে ১৫ দিন আগে নিহত আব্দুল কাদের তার স্ত্রীকে (মামলার বাদী) বলেছিলেন, অর্থের অভাবে মালিকপক্ষ অনেক অভিজ্ঞ ও দক্ষ শ্রমিক-কর্মচারীকে ছাঁটাই করেছে। বর্তমানে যারা কাজ করছেন তারা প্রায় অনভিজ্ঞ এবং অদক্ষ। আল্লাহই জানে কখন কী দুর্ঘটনা ঘটে! এ কথা শুনে কাদের খুব চিন্তিত ছিলেন। এর কয়েকদিন পরই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামিরা তাদের প্রতিষ্ঠানে যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বিপজ্জনকভাবে গ্যাস উৎপাদন করেছেন; নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণ করেনি; দুর্ঘটনা মোকাবিলা করার মতো প্রশিক্ষিত জনবলের ব্যবস্থা রাখেনি—এসব কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মামুন উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে বন্ধ পাওয়া গেছে।
মামলার আসামিরা হলেন, সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মামুন উদ্দিন, পরিচালক পারভেজ হোসেন সন্টু, আশরাফ উদ্দিন বাপ্পি, ব্যবস্থাপক আব্দুল আলীম, প্ল্যান্ট অপারেটর ইনচার্জ সামসুজ্জামান শিকদার, অপারেটর খুরশিদ আলম, সেলিম জাহান, নির্বাহী পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন, অ্যাডমিন অফিসার গোলাম কিবরিয়া, অফিসার সামিউল, শান্তুনু রায়, সুপারভাইজার ইদ্রিস আলী, সানা উল্লাহ, সিরাজ উদ-দৌলা, রাকিবুল এবং রাজীব। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৩৭/৩৩৮/৩০৪-ক/৪২৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে আধা কিলোমিটার পূর্বে সীতাকুণ্ডুর সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কদমরসুল এলাকার কেশবপুরে সীমা অক্সিজেন লিমিটেড প্ল্যান্ট। শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সেখানে বিস্ফোরণে সাতজন নিহত হন। আহত হন আরও অন্তত ১৯ জন। তাদের মধ্যে দুজন চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন। অন্য ১৭ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আহতদের অভিযোগ, ঘটনার পর থেকে মালিকপক্ষ তাদের কোনো খোঁজখবর নিচ্ছে না। এখন পর্যন্ত মালিকপক্ষের কাছ থেকে তারা কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি।
বিস্ফোরণে নিহত ফরিদের ছোট ভাই মো. বাবলু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ’ঘটনার পর থেকে সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের কেউ এখন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। মালিকপক্ষের কাছ থেকে তারা এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তাও পাননি। তবে শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে সরকারের দেওয়া দুই লাখ টাকা এবং ঘটনার দিন জেলা প্রশাসন থেকে ২৫ হাজার টাকা সহায়তা পেয়েছেন।’
একই অভিযোগ করেছেন নিহত লাল শর্মার ছোট ভাই শায়ন লাল শর্মা। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও কোনো সহায়তা পাইনি। বিস্ফোরণের পর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ওইদিন জেলা প্রশাসন কিছু সহযোগিতা করেছে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের খোঁজখবর নেয়নি।’
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মো. সোলায়মানের ছেলে রাবিক হাসান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেছেন, ‘মালিকপক্ষের লোকজন হাসপাতালে এসে খোঁজখবর নিচ্ছেন। তারা খোঁজখবর নিলেও এখন পর্যন্ত মালিকের কাছ থেকে আমরা কোনো টাকা-পয়সা পাইনি।’
মামলার এজাহারেও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হতাহতদের খোঁজখবর না নেওয়া এবং সহায়তা না করার অভিযোগ আনা হয়।