চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৩ ১৮:১৩ পিএম
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৩ ১৮:৪৩ পিএম
মা আয়েশা বেগমের সঙ্গে মাহিন ইকবাল। প্রবা ফেটো
নীল রঙের টি-শার্টের বুকে লেখা ‘চলো স্বপ্ন ছুঁই’। স্বপ্ন ছুঁয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিন ইকবাল। পেয়েছেন চেষ্টা ও অধ্যবসায়ের ফল। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্বপ্নপূরণের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন তিনি। স্বপ্নপূরণের পথে আর্থিক অনটন বাধা হলেও দমাতে পারেনি তাকে। ভর্তি পরীক্ষায় ৫৯০তম হয়ে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন মাহিন।
তবে পথটা সহজ ছিল না জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি- তিন পরীক্ষাতেই গোল্ডেন এ-প্লাস পাওয়া মাহিনের। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের দাদনচক গ্রামের মীর হোসেন ও আয়েশা বেগমের সন্তান মাহিন। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে আগে থেকেই পরিবার থেকে দূরে। মা আয়েশা অন্যের বাড়ি কাজ করে চালান সংসার ও ছেলের লেখাপড়ার খরচ। আর্থিক অনটনের মধ্যেও ছেলেকে তিনি এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। মাহিনের এমন সাফল্যে মা আয়েশা খুশি হলেও ছেলেকে ডাক্তার বানাতে পারবেন কি-না জানেন না।
মা আয়েশার মতো মাহিনের দাদি মনোয়ারা বেগমেরও স্বপ্ন নাতি একদিন ডাক্তার হবে। মানুষের সেবা করবে। তবে এখন শঙ্কা নাতির পড়ার খরচ নিয়ে।
নাতির এমন সাফল্যের ব্যাপারে অনুভূতির কথা জিজ্ঞেস করতেই আনন্দে কেঁদে ফেলেন মাহিনের দাদি। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘মাহিনের দাদা বলত, মাহিন একদিন ডাক্তার হবে। ৫ বছর আগে তিনি মারা গেছেন। আমার মাহিন দাদার স্বপ্নপূরণ করতে পারায় আনন্দে ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। দাদার স্বপ্নপূরণ করেছে আমার মাহিন।’
দাদা কফিল উদ্দীন ও মায়ের স্বপ্নপূরণ করতে পেরে খুশি মাহিন ইকবাল। তবে দরিদ্র পরিবার ভর্তির টাকা ও পড়াশোনার খরচ জোগান দিতে পারবে কি-না, তা নিয়েই চিন্তিত মাহিন। পরিবারের প্রত্যাশা, মাহিনের ভর্তি ও লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যেতে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবেন।
দাদনচক এইচ এম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহা. গোলাম রাব্বানী বলেন, ’দরিদ্র পরিবারের সন্তান মাহিন খুবই মেধাবী। আমি ও তার কলেজের শিক্ষকরা যতখানি পেরেছি সহায়তা করেছি। মাহিন সব ক্লাসেই প্রথম ছিল। আদিনা ফজলুল হক সরকারী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও মাহিন ইকবাল গোল্ডেন এ-প্লাস পেয়েছে।’
মাহিন ইকবাল বলেন, ‘ডাক্তার হয়ে অসহায় মানুষদের সাধ্যমতো চিকিৎসা প্রদান করতে সব সময় চেষ্টা করব।’
মাহিনের মা বলেন, ‘যতই কষ্ট হোক, ছেলের জন্য চেষ্টা করব। মাহিনের পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা করব।’