× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ মামলা

ঝুঁকিতে সীমা গ্রুপে হাজার কোটি টাকার ব্যাংকঋণ

এস এম রানা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩ ১৩:৪৬ পিএম

সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ। প্রবা ফটো

সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ। প্রবা ফটো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সীমা গ্রুপের সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে সাতজনের মৃত্যু ও ২৫ জন আহত হওয়ার ঘটনার পর মালিক তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেই মামলায় মালিকদের একজন পারভেজ উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গ্রুপের তিন মালিকের অপর দুই ভাই এখনও আত্মগোপনে আছেন।

বিস্ফোরণের পর জেলা প্রশাসন কমিটি গঠিত তদন্ত কমিটিতে বিস্ফোরণের বিষয়ে মালিক পক্ষের গাফিলাতির প্রমাণ পেয়েছে। গত মঙ্গলবার বিকালে কমিটি জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর রাতেই পারভেজ গ্রেপ্তার হন। 

যদিও বিস্ফোরণ ঘটনার আগে থেকেই রুগ্‌ণ গ্রুপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল সীমা গ্রুপ। এই গ্রুপের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। সেই ঋণ ফিরে পাওয়া নিয়ে এখন ব্যাংকগুলোর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। গ্রুপটি যিনি তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলেন সেই ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শফির মৃত্যুর পর তার তিন ছেলে পরিচালক হিসেবে গ্রুপটির হাল ধরেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা গ্রুপটি আদৌ টিকিয়ে রাখতে পারবেন কি না, সেই বিষয়ে ব্যাংকারদের মধ্যেই সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে পাঁচটি ব্যাংক ঋণ ফেরত নিয়েও শঙ্কায় পড়েছে।

গত ৪ মার্চ বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত আবদুল কাদেরের স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে তিন পরিচালকসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

বিস্ফোরণ ঘটনার পর থেকেই সীমা গ্রুপে লগ্নি করা ব্যাংকাররা ঋণ ফেরত পাবেন কি না এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। অথচ চট্টগ্রামে এমএস রডের কারখানা সম্প্রসারণে শুরুর দিকেই নেতৃত্ব দিয়েছিল গ্রুপটি। সীমা অটোমেটিক রি-রোলিং মিলস লিমিটেড, শিপ ব্রেকিং ও অক্সিজেন খাতে ব্যবসা ছিল গ্রুপটির।

১৯৯০-এর দশকের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শফি শিপইয়ার্ড ব্যবসা শুরু করেছিলেন। শিপ ব্যবসায়ী সাফল্য পাওয়ার পর গড়ে তোলেন সীমা স্টিল মিলস। এরপর ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রামে বেসরকারি পর্যায়ে প্রথম অক্সিজেন কারখানা গড়ে তোলেন তিনি। সেখানেও সাফল্য পাওয়ায় ২০০০ সালে অটোমেটিক রি-রোলিং মিলস স্থাপন করেন। সীমা গ্রুপ নামে পরবর্তী সময়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন। চট্টগ্রামের স্থানীয় বাজারে দখলে এগিয়ে সীমা রি-রোলিং মিলের এমএস রডের চাহিদা ছিল বেশি। 

ধারাবাহিক ব্যবসা করলেও ২০১২ সালে ইস্পাত শিল্পে দামের উত্থান-পতনে সীমা গ্রুপ ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই সময়ে স্থানীয় বাজারে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে যাওয়া এবং ২০১৯ সালে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে শিল্পোদ্যোক্তা মোহাম্মদ শফির মৃত্যুর পর থেকেই সীমা গ্রুপ রুগ্‌ণ হতে শুরু করে। 

মোহাম্মদ শফির মৃত্যুর পর তার তিন ছেলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মামুন উদ্দিন, পরিচালক পারভেজ উদ্দিন সান্টু ও আশরাফ উদ্দিন বাপ্পি। তারা চেষ্টা করেও বাবার মতো করে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেননি। ধীরে ধীরে রুগ্‌ণ হয়ে যাওয়া গ্রুপের ২০২০ সালে সীমা স্টিলের তিনটি ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে যায়। এখন সীমা অটোমেটিক রি রোলিং মিল চালু আছে। তবে উৎপাদন নামে মাত্র। 

একসময়ের স্বনামধন্য গ্রুপের বেশিরভাগ কোম্পানি এখন লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এখন কোম্পানির কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ অন্তত এক হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে গ্রুপটি ৪০ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে।

ঋণদাতা পাঁচ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ইস্পাত খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যাংকঋণ রয়েছে। এর মধ্যে পূবালী ব্যাংক শেখ মুজিব রোড শাখার ৪১০ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক অক্সিজেন শাখার ২৫০ কোটি টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ওআর নিজাম রোড শাখার ২৫০ কোটি টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা ৮০ কোটি টাকা ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক ওআর নিজাম রোড শাখার ৪০ কোটি টাকা দিয়েছে। 

পূবালী ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৪ সাল থেকে পূবালী ব্যাংক শেখ মুজিব রোড শাখার সঙ্গে সীমা গ্রুপের লেনদেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে স্ক্র্যাপ আমদানির জন্য ১০০ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা নেয় গ্রুপটি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত গ্রুপটির কাছে ঋণ ছিল ৩৮০ কোটি টাকা। ব্যাংকের টাকায় কাঁচামাল আমদানি এবং তা রড বানিয়ে বাজারে বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ ফেরত দেয়নি। বর্তমানে গ্রুপটির কাছে ব্যাংকটির পাওনা প্রায় ৪১০ কোটি টাকা। ৪১০ কোটি টাকা পাওনা থাকলেও ব্যাংকের কাছে গ্রুপটির সম্পদ বন্ধক আছে মাত্র ২০০ কোটি টাকার। এই কারণে ঋণঝুঁকিতে আছে। 

এই বিষয়ে পূবালী ব্যাংকের এজিএম ও সাধারণ বীমা ভবন শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহেদ আলী বলেন, ইস্পাত, শিপ ব্রেকিং ও অক্সিজেন খাতে ভালো ব্যবসা ছিল সীমা স্টিলের। ইস্পাত খাতে স্থানীয় বাজারে ভালো দখল ছিল সীমা স্টিলের। ফলে সহজে বড় অঙ্কের ঋণ পেয়েছে। কিন্তু গ্রুপটির কর্ণধার মারা যাওয়ার পর এই ঋণ আদায় নিয়ে বড় শঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

একইভাবে সীমা গ্রুপের কাছে ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বড় ঝুঁকিতে পড়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। কারণ ব্যাংকটির কাছে কোনো কোলাটেরাল সিকিউরিটি নেই। এই বিষয়ে ব্যাংকটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং হেড অব হোলসেল ব্যাংকিং ডিভিশন (চট্টগ্রাম) ছৈয়দ মাহমুদ আকতার বলেন, ২০১০ সাল থেকে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসা করছে ব্যাংকটি। আগে ভালো ব্যবসা করলেও ২০১৯ সাল থেকে টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করছে। ২০২০ সাল থেকে কিস্তি অনুযায়ী ঋণের টাকা ফেরত দিচ্ছে না সীমা গ্রুপ। এখনও প্রায় ২০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে ব্যাংকটির। 

অন্য দিকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ৪০ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়ায় গ্রুপটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির ওআর নিজাম রোড শাখা চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে এই মামলা দায়ের করে।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সীমা স্টিল এবং সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ঋণ দিয়েছে ব্যাংকটি। এখন সীমা গ্রুপের কাছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে ব্যাংকটির। এর বিপরীতে ১০ কোটি টাকার জমি বন্ধক রয়েছে।

তবে সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের ব্যবস্থাপক ইফতেখার উদ্দিন জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর ঝামেলা এড়াতে মালিকরা মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন। এই ঘটনায় হতাহতের আইনি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। আহতদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। কারখানাটি মেরামত করা হচ্ছে। পুনরায় উৎপাদনে যাওয়ার চেষ্টা করছে মালিকপক্ষ।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা