শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৩ ১৬:৫৪ পিএম
আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৩ ১৭:৫৩ পিএম
গাজীপুরের শ্রীপুরে চুরির অভিযোগে করা নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সংগৃহীত
গাজীপুরের শ্রীপুরে
চুরির অভিযোগে এক যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার একটি
ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে উপজেলার
প্রহলাদপুর ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের মার্কেটসংলগ্ন খানবাড়ীর সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার যুবক
আরিফুল খান দমদমা গ্রামের উসমান খানের ছেলে। তাকে স্বজনরা গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন
আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার পর ওইদিন রাত ১০টার পর বাড়িতে নিয়ে আসেন।
অভিযুক্তরা হলেন, একই
গ্রামের কাউসার বাগমার, রাসেল খান, জিয়াউর রহমান, ইজ্জত আলী খানসহ তাদের ৮-১০ জন সহযোগী।
এদের মধ্যে কাউসার প্রহলাদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য।
নির্যাতনের শিকার আরিফুল
খানের ভাই আশরাফুল আলম খান জানান, ঢাকার ডা. কাইয়ুম নামে এক ব্যক্তি প্রায় তিন-চার
বছর আগে দমদমা এলাকায় জমি কেনেন। বর্তমানে ওই জমিতে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছে।
বৃহস্পতিবার ওই ব্যক্তি তার জমি দেখার জন্য এলে গাড়ি রেখে ভেতরে যান। এ সময় কে বা কারা
ওই গাড়ির গ্লাস ভেঙে টাকা নিয়ে যায়।
তিনি জানান, এই অভিযোগে
কাউসার বাগমার, সিরাজ উদ্দিন খান, তার ছেলে ইজ্জত আলী খান আরিফুলকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে
যায়। পরে তার পায়ে দড়ি বেঁধে পা ওপরের দিকে তুলে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা
শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধর করে। তাদের নির্যাতনের কারণে আরিফুল ভাই জিহ্বা বের করে
দিলে তারা মারধর বন্ধ করে দেয়।
নির্যাতনের শিকার আরিফুল
খান বলেন, ‘আমি সকালে রুটি দিয়ে নাস্তা করে ঘরে শুয়ে ছিলাম। পরে প্রহলাদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য কাউসার আমাকে ফোন দিয়ে যেতে বলে। আমি
না গেলে সে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে দুই পা বেঁধে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে শরীরের সব জায়গায় মারধর
করে। আমি ওই গাড়ির গ্লাস ভাঙি নাই।’
প্রহলাদপুর ইউনিয়নের
৮ নম্বর সদস্য জাকির হোসেন শেখ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার পাশের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন দেখতে
গিয়েছিলাম। পরে দুপুরের দিকে আরিফকে গাছের সঙ্গে উপুড় করে ঝুলিয়ে মারার খবর আমাকে ফোন
করে জানায়। তখন স্থানীয় কয়েকজনের কাছে ফোন করলে তারা ছেড়ে দেয়। পরে বিকালে বাড়িতে গিয়ে
আরিফুল খানকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার
জন্য পাঠাই।’
তিনি বলেন, ‘চুরি করে থাকলে আইনের হাতে তুলে দেবে। এভাবে মারধর করা ঠিক হয়নি।
তবে সে চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না, এ বিষয়ে কেউ কোনো প্রমাণ দেয়নি বা যার টাকা চুরি
হয়েছে তারও কোনো অভিযোগ নেই।
অভিযুক্ত প্রহলাদপুর
ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য কাউসার মুঠোফোনে বলেন, ‘আরিফুল
চুরি করেছে। তাই তাকে মারধর করা হয়েছে। তা ছাড়া একটা চোরের বিষয়ে আপনি কেন আমাকে ফোন
দিয়েছেন? আপনি আমাকে ফোন দিতে পারেন না। আপনি ঘটনাস্থলে আসেন। সে চোর এবং চুরি করেছে।
তার বিরুদ্ধে আগেও চুরির অভিযোগ রয়েছে।’
এরপরই অপর একটি বাংলালিংক
নম্বর থেকে ফোন করেন তিনি। কথা বলার সময় বেয়াদবি করে থাকলে ক্ষমা চান এবং ওই গ্রামে
যাওয়ার দাওয়াত দেন। যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করবেন বলেও জানান কাউসার।
জমি দেখাশোনার দায়িত্বে
থাকা ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) মিশু বলেন, ‘টাকা চুরির পর মালিক কাউকে বিচার দেননি। কিছু
অতি উৎসাহী ব্যক্তি ওই যুবককে মারধর করেছে। আমাদের সাহেব মুরব্বি মানুষ। এমন ঘটনার
সঙ্গে থাকার প্রশ্নই আসে না।’
প্রহলাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম আকন্দ বলেন, ‘ওই যুবককে মারধরের একটি ভিডিও দেখেছি। আইনের ঊর্ধ্বে কেউই না। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি।’
শ্রীপুর থানার অফিসার
ইনচার্জ (তদন্ত) আজিজুর রহমান বলেন, ‘শুক্রবার দুপুরে বিষয়টি আমরা শুনেছি। ঘটনাস্থলে
পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনা জেনে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’