পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৩ ১৭:২৩ পিএম
আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৩ ১৮:১০ পিএম
জহির উদ্দিনকে আটক করেছে র্যাব। প্রবা ফটো
সৌদি আরবপ্রবাসী জহির উদ্দিন দুই সন্তানের জনক। গত পাঁচ মাস আগে দেশে এসেছেন ছুটিতে। এসে কক্সবাজারে এক এনজিও কর্মীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। দেখা করতে গিয়ে ওই তরুণীর মোবাইল থেকে নিজের বাপ-মাকে দেখানোর কথা বলে কিছু ছবি নেন। ছবি মোবাইলে নেওয়ার সময় ওই তরুণীর কিছু ব্যক্তিগত ছবিও হাতিয়ে নেন জহির।
তারপর ওই রাতেই ভিকটিম তরুণীকে ভিডিও কল করেন তিনি। তরুণী সাড়া দেওয়ার পর জহিরের আসল চেহারা প্রকাশ পায়। জহির তরুণীকে কিছু আপত্তিকর প্রস্তাব দেন। পরে তরুণী রাজি না হলে তার মোবাইল থেকে দুপুরে সরিয়ে নেওয়া ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ভাইরালের হুমকি দেন।
নিজের একান্ত ছবি হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে তরুণী জহিরের কথায় রাজি হন। কিন্তু জহির পেতে রাখেন আরেক ফাঁদ- ভিডিও রেকর্ড করা।
ব্যক্তিগত ছবি ভাইরালের ভয়ে এবার সেই তরুণী শিকারে পরিণত হন ভিডিও ভাইরালের। জহির তার আরেক সহযোগী সরোয়ারের সহায়তায় ভিডিও কলের দৃশ্য রেকর্ড করে তৈরি করেন ভিডিও। সেই ভিডিও সরোয়ারের মাধ্যমে জহির পাঠান ভিকটিম তরুণীর মোবাইলে। মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে তরুণীকে হুমকি দেন, প্রস্তাব দেন কক্সবাজারে হোটেলে রাত কাটানোর! তরুণী রাজি না হওয়ায় সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করার পাশাপাশি তার অফিস বস এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছেও পাঠানোর হুমকি দেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৫টায় র্যাব-৭-এর চান্দগাঁওস্থ মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের উপঅধিনায়ক মেজর মো. রেজওয়ানুর রহমান। এ সময় র্যাব-৭-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ‘ভিকটিম তরুণী একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করে উচ্চ বেতনে একটি এনজিওতে কক্সবাজারে চাকরি করছেন। তার পরিবারও তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাত্র খুঁজছেন। অপর দিকে ‘সাইবার অপরাধী’ জহির নিজেকে সেনাবাহিনীর নন-কমিশন্ড কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিয়ের আলাপ করেন। এতে আগ্রহী হয়ে সেই তরুণী জহিরের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টায় তার জীবনে নেমে আসে একটি কালো ছায়া। তিনি রক্ষা পেতে র্যাবের দ্বারস্থ হন। আমরা তদন্তে সত্যতা পেয়ে জহিরকে আটক করেছি। সঙ্গে তার সহযোগী সরোয়ারকেও।’
তিনি আরও বলেন, ‘জহিরকে আটক করে দেখি তার অপরাধের তালিকা আরও লম্বা। জহির তার সব ধরনের নিকটাত্মীয়কে এভাবে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়েছেন। যুবতীদের পাশাপাশি দাদির বয়সি নারীও তার শিকারে পরিণত হয়েছেন।’
সহকারী পরিচালক নূরুল আবছার জানান, জহিরের মুঠোফোন তল্লাশি করে অসংখ্য তরুণীর ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি, ভিডিও পাওয়া গেছে, যাদের কাছ থেকে তিনি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অনেকের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিংবা তাদের নিকটাত্মীয়দের কাছেও ছড়িয়ে দিয়েছেন।
জহির কক্সবাজার জেলার পেকুয়া রাজাখালীর আমিনুল হকের ছেলে। তার সংসারে দুটি সন্তান রয়েছে। তার সহযোগী সরোয়ার পেকুয়া মিয়ারপাড়ার বাসিন্দা। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তাদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানায় র্যাব।