পিরোজপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৩ ২০:০৫ পিএম
আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৩ ২০:৩৩ পিএম
লামিয়া আক্তারকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার স্বামী তরিকুল। প্রবা ফটো
পিরোজপুরের নাজিরপুরে গৃহবধূ লামিয়া হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচনের দাবি করেছে পুলিশ
ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এর আগে সোমবার (১৩ মার্চ) নিখোঁজের
চার মাস পর বালিচাপা দেওয়া অবস্থায় তার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত লামিয়ার
স্বামী তরিকুল ইসলামকে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান পিবিআইয়ের পিরোজপুর কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. বায়েজিদ
আকন। গ্রেপ্তার তরিকুল ইসলাম জেলার নাজিরপুর উপজেলার দক্ষিণ চিথলিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
পিবিআইয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত সোমবার একটি চিরকুটের মাধ্যমে চার মাস
ধরে নিখোঁজ গৃহবধূর গলিত মরদেহ বালুর
মাঠ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় থানা পুলিশের পাশাপাশি ঘটনার রহস্য উদঘাটন
ও আসামি গ্রেপ্তারের ছায়াতদন্ত করে পিবিআই।
এতে বলে হয়, তদন্তভার প্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে ঢাকার মোহাম্মদপুরের ভাড়াবাসা থেকে ভিকটিম লামিয়া আক্তারের স্বামী তরিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামি তরিকুল ইসলাম নিজের দোষ স্বীকার করেছে।
সে জানিয়েছে, ২০১৯ সালের শেষের দিকে ভিকটিম লামিয়ার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। তখন তরিকুল ইসলাম দশম শ্রেণির ছাত্র এবং লামিয়া ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। ২০২২ সালের মের শেষের দিকে
ঈদের ছুটি শেষে যে দিন বাড়ি থেকে আসামি ঢাকায় যাবে, সেদিন ভিকটিম লামিয়া আসামির বাড়িতে এসে ওঠে। ফেসবুকে ‘তানিশা তানজিম’ নামক একটি আইডি থেকে লামিয়ার দুটি নগ্ন ছবি ছড়িয়ে পড়ার কারণে
লামিয়া তরিকুলকে দায়ী করে। স্থানীয় লোকজনের
চাপে ওইদিন সন্ধ্যায় তরিকুল লামিয়াকে বিয়ে করে।
পিবিআইয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওই বিয়েতে তরিকুলের পিতা-মাতার
অসম্মতি ছিল। তাদের বিয়ে মেনে না নেওয়ায়
বিয়ের পর লামিয়া তার বাবার বাড়িতেই থাকত। সেখানে তরিকুলের যাতায়াত ছিল। বিয়ের সাত মাস পর
লামিয়া ও তরিকুলের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর রাতে তরিকুল লামিয়ার সঙ্গে গোপনে দেখা করে। তরিকুল লামিয়ার
বাবার বাড়ি গিয়ে ঘরের বাইরে থেকে ডাক দিলে লামিয়া বাইরে এসে দেখা
করে। তারা ঘরের পাশের কলপাড়ে বসে সম্পর্কের বিচ্ছেদ নিয়ে কথা
বলে। কথা বলার একপর্যায়ে লামিয়ার মা ও নানি বাইরে থেকে বাড়িতে
চলে আসে। তখন লামিয়া বাড়ির ভেতর চলে যায়। পরে লামিয়ার মা
ও নানি ঘুমিয়ে পড়লে সে বাড়ি থেকে বের
হয়ে তরিকুলের সঙ্গে দেখা করে।
এতে বলা হয়েছে, কথা বলার একপর্যায়ে লামিয়া রাগান্বিত হয়ে বলে, ছাড়াছাড়ি হলে সে তরিকুলের
বিরুদ্ধে মামলা করবে। এরপর তারা হাঁটতে হাঁটতে হিমু খাঁর দোকানের কাছে যায়। ওইদিনই রাত ১২টার পর হিমু খাঁর দোকানে বসে কথাবার্তার একপর্যায়ে তরিকুল রাগে লামিয়ার গলা টিপে হত্যা করে। এরপর লামিয়ার লাশ খালে ফেলে টেনে বালুর মাঠে
নিয়ে যায়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মাঠের পাশের এক বাড়ির গোয়ালঘর
থেকে একটি বেলচা নিয়ে সেখানে বালু খুঁড়ে লাশ বালুচাপা দিয়ে রাখে তরিকুল। ঘটনার চার মাস পর গত ১১ মার্চ সে মানসিক পীড়ায় অতিষ্ট হয়। ভিকটিমের লাশ তার পরিবারের
দৃষ্টিগোচরে আনার জন্য নাজিরপুর বাজারের একটি দোকান থেকে দুটি গ্লাভস কেনে তরিকুল। পরে রাত ১১টার
দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে বালুর ঢিবিতে বেলচা দিয়ে খোঁড়ার পর লাশের হাত
দেখতে পায়। লাশের হাত ধরে ওঠানোর চেষ্টা করলে লাশের হাত দেহ
থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ সময় হাতটা গর্তে রেখে পুনরায় লাশ
বালুচাপা দিয়ে আসে তরিকুল। পরদিন রাতে তরিকুল একটি চিরকুট
লিখে লামিয়ার ঘরের চালে ঢিল মারে। তখন ঘর থেকে লামিয়ার খালা ও নানি বাইরে বের হয়ে
চিরকুট দেখতে পায়। আসামি তখন খালের অপর পাড়ে বসে ছিল। এরপর লামিয়ার পরিবারের লোকজন
টর্চ লাইট মারলে আসামি দৌড়ে পালিয়ে যায়। ওই রাতে কালিবাড়ির
একটি বাগানে অবস্থান করে পরদিন তরিকুল ঢাকায় তার বাবার বাসায় চলে যায়।
পিবিআই জানিয়েছে, নিখোঁজের চার মাস পর সোমবার দুপুরে জেলার নাজিরপুর উপজেলার সাতকাসেমিয়া গ্রামের মোজাহার মোল্লার বাড়ির পশ্চিম পাশে বালুর মাঠ থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় গৃহবধূ লামিয়া আক্তারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লামিয়া আক্তার জেলার নাজিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চিথলিয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের মেয়ে। গত ৬ ডিসেম্বর থেকে লামিয়া নিখোঁজ ছিল। এরপর ৭ ডিসেম্বর লামিয়ার মা রাজিয়া বেগম স্বামী তরিকুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে সাতজনের নামে ও অজ্ঞাতপরিচয় ৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন।