× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের ষোলঘরে বারবার দুর্ঘটনা কেন

শিহাব আহমেদ, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৩ ১১:১৩ এএম

আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৩ ১৫:৫৪ পিএম

শিবচরে বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক বা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে রেলিং ভেঙে পড়ে বাসের ১৯ যাত্রী নিহত হয়। প্রবা ফটো

শিবচরে বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক বা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে রেলিং ভেঙে পড়ে বাসের ১৯ যাত্রী নিহত হয়। প্রবা ফটো

ঢাকা-ভাঙ্গা বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের ধলেশ্বরী টোল প্লাজা থেকে পদ্মা সেতু উত্তর থানা পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জ অংশের ষোলঘর থেকে বেজগাঁও পর্যন্ত সাত কিলোমিটার এলাকা অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে উঠেছে। প্রতি সপ্তাহে এখানে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সর্বশেষ গত শুক্র ও শনিবার ষোলঘরে পৃথক দুর্ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়। একই এলাকায় বারবার দুর্ঘটনার জন্য মহাসড়কে যানবাহনগুলোর গতিসীমা না মানা, যত্রতত্র ওভারটেকিং, রাতে পর্যাপ্ত ফ্লাডলাইট না থাকা এবং পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে অনীহাকে দায়ী করছেন স্থানীয় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা।

এসব দুর্ঘটনায় বড় আঘাতজনিত আহতদের দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার লক্ষ্যে ষোলঘর বাসস্ট্যান্ড থেকে ১০ মিনিটের দূরত্বে একটি ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করা হলেও পাঁচ বছরেও তা চালু হয়নি। ফলে দুর্ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছেই।

স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস বলছে, গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জ অংশে ৬২টি দুর্ঘটনায় ১০ জনের মরদেহ এবং ১১০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

এ এলাকার বাসিন্দা কাজী শাহিন বলেন, ষোলঘর বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন খৈয়ারপার এলাকা থেকে ৫০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষকে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কের পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিমে ষোলঘর বাজার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পশু হাসপাতাল, একাধিক উচ্চ বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদে যাতায়াত করতে হয়। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও সবাই ব্যবহার করে না। স্থানীয় বাসিন্দা মো. বেল্লাল বলেন, ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়িগুলো অনেক উচু। বেশি বয়সি মানুষ সিড়ি দিয়ে উঠতে পারে না।

ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে ষোলঘর ফেমাস জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিনই যাতায়াত করেন ফার্মাসিস্ট অলক কুমার দাস। তিনি বলেন, ‘বাসস্ট্যান্ড থেকে নামার পর আধা কিলোমিটার পথ হেঁটে ফুটওভার ব্রিজে উঠতে হয়। প্রতিদিন ধৈর্য হয় না। মাঝেমধ্যেই দৌড়ে সড়ক পার হই।’

হাসাড়া হাইওয়ে থানার ওসি মোল্লা জাকির হোসেন বলছেন, বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জ অংশে প্রায় প্রতি সপ্তাহে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। শ্রীনগরের ষোলঘর অংশ বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ। আহতদের উদ্ধার, গাড়ি আটক ও সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার দায়ের করার কাজ করে থাকেন তারা।

মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলোর গতি নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিনই স্পিডগান দিয়ে গতি মেপে জরিমানা আদায় করা হয় বলে দাবি করেন ওসি।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর এক হাজারের অধিক যানবাহনের কাছ থেকে উচ্চগতির কারণে মামলা দিয়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এরপরও মহাসড়ক ফাঁকা পেলেই তারা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। ঈদ সামনে রেখে পুরোদমে মহাসড়কে নজরদারি করা হবে বলে জানান তিনি।

সিরাজদিখান থানার ওসি মিজানুল হক জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর গত ৯ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় সিরাজদিখান থানায় এখন পর্যন্ত পাঁচটি মামলা হয়েছে।

তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের ধলেশ্বরী টোল প্লাজা থেকে চালতিপাড়া পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সিরাজদিখান থানায় পড়েছে। এরপর থেকে শ্রীনগর থানা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এই এলাকাটি ততটা দুর্ঘটনাপ্রবণ নয়। শ্রীনগর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, প্রতি সপ্তাহে দুইটি মামলা হচ্ছে। 

যানবাহনের উচ্চগতি ও সাধারণ মানুষের অসচেতনতা এর জন্য দায়ী বলে তিনি মনে করেন। শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের গুদাম পরিদর্শক মো. মাহফুজ রিবেন বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর গত ৯ মাসে ধলেশ্বরী টোল প্লাজা থেকে পদ্মা সেতু উত্তর থানা পর্যন্ত অংশে ৬২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জনের মরদেহ ও ১১০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।

তবে এটি প্রকৃত চিত্র নয়। কারণ অনেক দুর্ঘটনায় শুধু পুলিশই উদ্ধারকাজ চালায়। পুলিশ যখন অবস্থা বেগতিক দেখে তখন ফায়ার সার্ভিসকে জানায়। তিনি বলেন, ধলেশ্বরী টোল প্লাজা থেকে পদ্মা সেতু উত্তর থানা পর্যন্ত পুরোটাই রেড জোন। সড়কের কোনো সমস্যা নেই। যাত্রী ও চালকদের মাঝে আইন মানার প্রবণতা কম, সচেতনতার অভাব, এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।


১৩ বছরেও চালু হয়নি ট্রমা সেন্টার

বঙ্গবন্ধু মহাসড়কসহ অভ্যন্তরীণ সড়ক দুর্ঘটনায় বড় আঘাতজনিত আহতদের দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার লক্ষ্যে ষোলঘরে ২০১০ সালে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ শয্যার ট্রমা সেন্টার নির্মাণকাজ শুরু হয়। দুই দফায় কাজ শেষে ২০১৮ সালে দৃশ্যত নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনও আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর হয়নি।

প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও লোকবল-সংকটের কারণে সেন্টারটি চালু করা সম্ভব হয়নি বলে দাবি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের। ফলে মহাসড়কে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত রোগীদের নিতে হয় ষোলঘর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। যাওয়ার পথে মারা যান অধীকাংশ রোগী।

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জন মঞ্জুরুল আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি খুব দ্রুত পরিদর্শনে আসবেন।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বাড়ায় ট্রমা সেন্টারটি চালু করতে তাদের জোর চেষ্টা রয়েছে বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা