বরিশাল প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩ ২৩:০৯ পিএম
আল আমিন গাজী। প্রবা ফটো
বরিশাল থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকে কাজ করতেন আল-আমিন গাজী। কিন্তু সেখান থেকে পাওয়া বেতন দিয়ে নিজের পকেট খরচই উঠতো না। তাই নিজের ও পরিবারের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেন বিদেশ যাওয়ার। দালালের মাধ্যমে একটি কোম্পানিতে যোগ দিতে গত শনিবার পাড়ি জমান সৌদি আরবে। এজন্য দালালকে দিতে হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা।
তবে চাকরি দেওয়ার নাম করে তাকে আসলে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। গত পাঁচদিন ধরে তিনি রিয়াদের একটি ভবনের একটি কক্ষে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। এমনটাই জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। বরিশাল নগরীর ১০ নং ওয়ার্ডের আব্দুর রাজ্জাক স্মৃতি কলোনীর বাসিন্দা আল-আমিন গাজী। সৌদি আরবের বন্দিদশা থেকে তাকে উদ্ধার করে দেশে ফেরানোর আকুতি জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রাতে কোতোয়ালী মডেল থানায় (বরিশাল মেট্রোপলিটন) লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আল-আমিনের স্ত্রী সানজিদা আক্তার মিম। অভিযোগ পেয়ে এক সময় সৌদিতে থাকা মো. সুমন হাওলাদার নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) আরাফাত হাসান জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। তিনি একই এলাকার জাহাঙ্গীর হাওলাদারের ছেলে সুমন হাওলাদার।
ভিকটিমের স্ত্রী সানজিদা আক্তার মিম বলেন, আলামিন গাজী প্রতিবেশী সুমন হাওলাদারের মাধ্যমে ১৮ মার্চ সৌদি আরবে যান। এতে খরচ বাবদ সুমনকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
মিম বলেন, বড় কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলা হলেও সৌদি বিমানবন্দরে গিয়ে এক ভিন্ন বাস্তবতার মুখোমুখি হন আলামিন। বিমানবন্দর থেকে তাকে রিয়াদের একটি ভবনের কক্ষে নিয়ে নিয়ে আটকে রাখেন সেখানকার দালাল। ওই কক্ষে ৭০ থেকে ৮০ জনের মতো লোক আছে। তারাও দালালের খপ্পড়ে পড়ে।
আল-আমিনের স্ত্রী বলেন, সুমনকে জানানো হলে তিনি উল্টো বিভিন্ন হুমকি ধামকি দেন। পরে থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর বলেছেন, চাইলে আমার স্বামীকে দেশে ফিরিয়ে এনে দেবেন। কিন্তু আমাদের যে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে তার এক টাকাও ফেরত দেওয়া হবে না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মিম বলেন, নিজেকে ও পরিবারকে ভালো রাখতে স্বামীকে বিদেশ পাঠিয়েছি। কিন্তু দালালরা তাকে পণ্য করে ফেলেছে। তাদের হাত থেকে স্বামীকে বাঁচতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
এদিকে ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন আল-আমিন। বুধবার (২২ মার্চ) তিনি লিখেছেন, ‘আমি বোকা বোকাই রয়ে গেলাম। কেন যে মানুষকে অল্পতেই ভালোবাসি! নিজের জমানো সঞ্চয় ও ধার করা টাকা সব শেষ। আল্লাহ তুমি আমাকে সাহায্য কর, যেন মানুষের সব টাকা পরিশোধ করে আমার মৃত্যু হয়। টাকার প্রয়োজন নেই। বেঁচে থাকলে সব একদিন হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ এই বিপদ থেকে আমাকে রক্ষা কর। আমি দেশে ফিরতে চাই।’ আরেক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘সৌদিতে সাপ্লাই ভিসার ফাঁদে পড়েছি। জানি না কিভাবে দেশে ফিরতে পারবো? আল্লাহ সৎভাবে বাঁচতে চেয়েছি।’
বরিশাল পুলিশ জানিয়েছে, এই মুহূর্তে তারা আল-আমিন গাজীকে নিরাপদে উদ্ধারের ওপর জোর দিচ্ছে। অভিযুক্ত সুমন হাওলাদারকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে।
ভুক্তভোগীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে পরিবারের সদস্যদের। তারা বলেন, অনেক মানুষকে সেখানে আটকে রাখা হয়েছে। বড় কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নিয়ে এসে এভাবে আটকে রাখা হয়। তাদের পাসপোর্ট ভিসা রেখে দিয়ে দালালরা অন্য কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়।