নোয়াখালী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩ ০৯:০৭ এএম
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১১:৩২ এএম
বিস্ফোরণস্থলে আলামত সংগ্রহ র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের। প্রবা ফটো
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মডেল মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ব্যাগে থাকা বডি স্প্রে থেকে ঘটেছে ধারণা করছে র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। বুধবার (২৩ মার্চ) রাতে বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন শেষে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সহকারী পরিচালক মেজর মো. মশিউর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে নোয়াখালী এসেছি। খতিয়ে দেখেছি যে, এখানে কোনো নাশকতামূলক কিছু ঘটেছে কিনা। আমরা এমন কিছুই পাইনি। প্রাথমিকভাবে আমরা বুঝেছি, ব্যাগে থাকা বডি স্প্রে থেকে মসজিদে বিস্ফোরণ হয়েছে।’
গত মঙ্গলবার রাত সোয়া ১১টার দিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদের দ্বিতীয় তলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মসজিদের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষের দুটি দরজা, দুটি জানালা, মেঝে ও সিলিংয়ের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে বিস্ফোরণে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
বিস্ফোরণের ঘটনায় গতকাল বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে যান জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ও পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলামসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এরপর সেখানে যান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
খবর পেয়ে বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনে যায় র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটও। পরিদর্শন শেষে বিস্ফোরণস্থলে নাশকতামূলক কোনো আলামত পাওয়া যায়নি দাবি করেন ইউনিটের সহকারী পরিচালক মেজর মশিউর রহমান, ‘বোম্ব ডিসপোজাল টিম, ফরেনসিক টিম ও গোয়েন্দা টিম আমরা একযোগে কাজ করেছি। এক্সপ্রোসিভ ডিটেকশনের জন্য অত্যাধুনিক এক্সপ্রোসিভ পোর্টেবল ট্রেস এবং ভ্যাপার ট্রেসের জন্য ভ্যাপার ডিটেকশন আমরা ব্যবহার করেছি। আমাদের কাছে অত্যাধুনিক ফিঙ্গার প্রিন্ট ক্যাপচারিং এবং স্ক্যানিং সিস্টেম রয়েছে। আমরা আলামতগুলো দেখছি, কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালালে আমরা ধরতে পারব। আপাতত দৃষ্টিতে এমন কোনো কিছুই আমরা পাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, এখানে স্বল্প পরিসরে ছোট একটা বিস্ফোরণ হয়েছে। তবে সেটা বডি স্প্রে থেকে হয়েছে বলে ধারণা করছি। ব্যাগের মধ্যে বডি স্প্রে ছিল। সেখান থেকে এমন বিস্ফোরণ হয়েছে।’
জানা গেছে, বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর এলাকায় নির্মিত উপজেলা মডেল মসজিদের দ্বিতীয় তলায় মুয়াজ্জিন ও খাদেমের থাকার কক্ষে ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই সময় কক্ষটিতে মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের কেউ ছিলেন না।
সরেজমিনে দেখা যায়, দ্বিতীয় তলার বিস্ফোরণের কক্ষটির মাঝামাঝি স্থানে আগুনে পোড়া জিনিসপত্রের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত জানালার কাচ পড়ে আছে মেঝেতে। বিস্ফোরণের কারণে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে পুরো কক্ষটি ধোঁয়ায় বিবর্ণ হয়ে গেছে। বিস্ফোরণস্থলটিকে ইট দিয়ে চারপাশ ঘিরে রেখেছে পুলিশ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বেগমগঞ্জ মডেল মসজিদের দায়িত্বে থাকা ফিল্ড সুপারভাইজার আবদুল হালিম বলেন, ‘রাত ১১টার পর বিস্ফোরণের শব্দ পাই। ঘটনার সময় আমি মসজিদের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে অন্য কর্মচারীদের নিয়ে আসবাব গোছাচ্ছিলাম। এ সময় আশপাশের লোকজন আগুন বলে চিৎকার করলে আমি দ্রুত মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাই। পরে আবার এসে দেখি দ্বিতীয় তলায় খাদেম ও মুয়াজ্জিনদের থাকার কক্ষে আগুন জ্বলছে। বিষয়টি দ্রুত ইউএনওকে জানাই।’
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুয়াজ্জিন ও খাদেমকে থানায় নেওয়া হয়েছে। কাউকে আটক করা হয় নাই। আমরাও ধারণা করেছিলাম বডি স্প্রে থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে।’
ব্রিফিংয়ে র্যাব-১১ সিপিসি-৩ নোয়াখালীর কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার মাহমুদুল হাসান, চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র খালেদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।