মানিকগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১২:২৭ পিএম
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১২:২৮ পিএম
নন্দ দুলাল গোস্বামী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নন্দ দুলাল গোস্বামী। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ সরাসরি শুনেছেন তিনি। সেই অগ্নিঝরা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক নূরুল আফসার খান স্যারের অনুপ্রেরণায় যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
বাবার গচ্ছিত টাকা থেকে কিছু টাকা নিয়ে তাদের চিঠি লিখে মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার লড়াইয়ে যান এই বীরসেনানী। দীর্ঘ সংগ্রামে বাংলাদেশকে পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত করেছেন। পরবর্তী পরিস্থিতিতে এমনও সময় গেছে তাকে মুক্তিযুদ্ধের সনদ লুকিয়ে রাখতে হয়েছে। সেই সময়টা বর্তমানে পাল্টে গেছে, এখন সম্মানী বাড়ায় অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা সাজতে চায়।
এভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও এর পরবর্তী সময়ের স্মৃতিচারণ করেন জাতির মুক্তিসেনানী নন্দ দুলাল। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘যুদ্ধের বছর আমার বালিয়াটী ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিল। ওই বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক নূরুল আফসার খান স্যারের অনুপ্রেরণা ও ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শোনার পর আমি সিদ্ধান্ত নেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেব। ওই সময় নূরুল স্যার আমাদের ব্যাচ থেকে ১৪ জন ছাত্রের একটি তালিকা করে দেন। আমি সেপ্টেম্বরে বাবার গচ্ছিত ১৫০ টাকা থেকে ৫০ টাকা চুরি করে মা-বাবাকে চিঠি লিখে যুদ্ধে চলে যাই। টাঙ্গাইলের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বাহিনীতে রিক্রুট হয়ে নাগরপুর উপজেলার লাউহাটি মাঠে ২১ দিন ট্রেনিং শেষে যুদ্ধে যাই। সে সময়ে বেশ কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেই।’
যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে কেমন দিন কেটেছে সে সম্পর্কে বীর মুক্তিযোদ্ধা নন্দ দুলাল গোস্বামী জানান, ‘অনেক ত্যাগ, রক্তের বিনিময়ে পাকহানাদার বাহিনীর কাছ থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলাম। যুদ্ধের পরেই আমরা অস্ত্র জমা দিয়ে দেই। জিয়ার আমলে আমাদের থানা থেকে ধরে নিয়ে বলা হতো অস্ত্র কোথায় রেখেছেন? অস্ত্রতো জমা দিয়েছি এমন কথা বললে, থানা থেকে বলা হতো রসিদ কোথায়? মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে নিয়ে অস্ত্রের জমা দেওয়ার রসিদ চেয়ে চাপ দিলে আমরা তখন মুক্তিযোদ্ধার সনদ লুকিয়ে রাখতাম। তখন এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু ছিল না।’
তিনি আরও জানান, ‘শেখ হাসিনা সরকার ৯৬ সালে প্রথমে ৩০০ টাকা করে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী নির্ধারণ করেন। বর্তমানে ২০ হাজার টাকা করে দিচ্ছেন, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। যখন শুনি এত যাচাই-বাছাইয়ের পরও দেশে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্ত হয় তখন খুব কষ্ট হয়। সরকারের কাছে দাবি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে দ্রুত বাদ দেওয়া হোক। এ ছাড়া, অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন, যারা এখনও তালিকাভুক্ত হননি তাদের যেন শিগগিরই তালিকাভুক্ত করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমার মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হবে- সেটি ভাবলেই আলাদা রকম শান্তি কাজ করে মনের মধ্যে।’
নন্দ দুলাল গোস্বামী আরও একটি দাবি করেন, উপজেলার সাটুরিয়া থানার পশ্চিম পাশে একটি গণকবর রয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও সেটি উদ্ধার করা হয়নি। শুনেছি এটি উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে। এটি যেন সামনে বিজয় দিবসের আগেই উদ্ধার করা হয়, তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করি।