মাদারীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১২:৩৭ পিএম
মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুরের হোসনাবাদ আনু পুস্তির বাড়ি থেকে চরনাচনা বয়াতি বাড়ি পর্যন্ত চলছে রাস্তার নির্মাণকাজ। প্রবা ফটো
প্রকল্প অনুমোদন হয়নি, আদালত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন- কিন্তু কিছুই মানছেন না মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফায়েকুজ্জামান বাবুল। জোর করে অন্যের জমির মাটি ও গাছ কেটে সড়ক সংস্কার করছেন নিজ দায়িত্বে।
কাজ বন্ধ রাখার জন্য আদালত ১৪৫ ধারা জারি করেছেন, মৌখিক ও লিখিতভাবে সদর মডেল থানার এসআই নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কারও কোনো কথারই তোয়াক্কা না করে নিজ বাড়িমুখী রাস্তার সংস্কার চালু রেখেছেন তিনি।
জানা গেছে, সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সম্প্রতি কাবিখা প্রকল্পে হোসনাবাদ আনু পুস্তির বাড়ি থেকে আবুল সত্তার মোড়লের বাড়ি হয়ে চরনাচনা বয়াতি বাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা সংস্কারের জন্য সদর উপজেলা পরিষদে চিঠি দেওয়া হয়। এর জন্য তিন লাখ টাকা খরচ হবে উল্লেখ করা হয়। প্রকল্পের জন্য পরিষদ, প্রশাসন কিংবা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কিন্তু এক্সকাভেটর মেশিন (ভেকু) দিয়ে অন্যের জমির মাটি কেটে রাস্তার কাজ শুরু করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। এই রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন নিজ বাড়িতে যাতায়াত করেন তিনি।
এলাকাবাসী জানান, জোর করে সড়ক সংস্কার করতে গিয়ে আবুল কালাম পুস্তি ও বাচ্চু পুস্তির জায়গার মাটি ও গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। এ নিয়ে মৌখিক আপত্তি না শোনায় আদালতে গিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। পরে গত ৬ মার্চ মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতিকার চেয়ে মামলা করেন তারা। আদালত কাজ বন্ধ রাখতে ১৪৫ ধারা জারি এবং থানা-পুলিশকে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে নির্দেশ দেন। পরে ১৪ মার্চ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে লিখিতভাবে নির্দেশ দেন সদর মডেল থানার এসআই মোস্তফা কামাল। এরপরও কাজ চালু রাখেন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান।
ভুক্তভোগীরা বলেন, ‘আমাদের জায়গার ওপর চেয়ারম্যান অনুমোদন হয়নি এমন প্রকল্পের নামে রাস্তা নির্মাণ শুরু করেছেন। ওই জমিতে পুরোনো বেশ কিছু গাছপালা কেটে ফেলেছেন। এ নিয়ে বারবার আপত্তি জানালেও রাস্তার কাজ থামে নাই। পরে আদালতে গিয়েছি আমরা। তাতেও তিনি থামছেন না। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কাজ চালু রেখেছেন।’
অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ফায়েকুজ্জামান বাবুল বলেন, ‘সামনে বৃষ্টি হবে তাই অগ্রিম রাস্তার কাজ করেছি। বৃষ্টি হলে রাস্তার কাজ করা সম্ভব হবে না। যদি প্রকল্পটি অনুমোদন না হয়, তাহলে ব্যক্তিগত খরচে পুরো কাজটি সমাপ্ত করব।’
মাদারীপুর সদর মডেল থানার এসআই মোস্তফা কামাল বলেন, ওই জমিতে কোনো অবস্থাতেই রাস্তা সংস্কারকাজ করা যাবে না। যদি করা হয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, প্রকল্প অনুমোদন না হলে কোনো অবস্থাতে কাজ করতে পারেন না তিনি। এ ছাড়া বিরোধপূর্ণ জমিতে প্রকল্প অনুমোদনেরও কোনো সুযোগ নেই।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। চেয়ারম্যান যদি এমন কাজে লিপ্ত হয়, তাহলে তদন্ত করে তার বিপক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জনপ্রতিনিধি হয়ে এমন কাজ করতে পারেন না।’