× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শিল্পনগরী গড়ার গরজ নেই, কাজে আসবে না গ্যাস

মেরিনা লাভলী, রংপুর

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩ ১০:৩৭ এএম

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৩ ১০:৩৮ এএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

জায়গাসংকটের কারণে রংপুরের উদ্যোক্তারা শিল্পকারখানা স্থাপন করতে পারছেন না। বিসিক শিল্পনগরীর প্লট ফাঁকা নেই। এ জেলায় নতুন করে আর অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিসিক কিংবা ইপিজেড গড়ে ওঠেনি।

রংপুর বিভাগের উন্নয়নে সরকার পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের কাজ শুরু করেছে। কিন্তু গ্যাসসংযোগ দেওয়া যাবে এমন স্থানে শিল্পকারখানা স্থাপনের রূপরেখা নেই। ফলে হাজার কোটি টাকার অর্থ বিনিয়োগ করে সরবরাহ করা গ্যাসের সুবিধা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিল্পমালিক-উদ্যোক্তারা। 

রংপুর বিসিক সূত্রে জানা যায়, রংপুর অঞ্চলে শিল্প সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৯৬৭ সালে ২০ দশমিক ৬৮ একর জমি নিয়ে রংপুর সিও বাজার কেল্লাবন্দে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে ওঠে। এতে ৮২টি প্লটে মাত্র ২৫টি কলকারখানা স্থাপিত হয়। এর মধ্যে বৃহৎ ৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দখলেই ৬০টি প্লট। এতে করে গত ৩০ বছরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা কোনো শিল্পকারখানা তৈরির সুযোগ পাননি। 

এদিকে ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। এরপর অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য রংপুর জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রংপুরের জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীব এসডিজির প্রধান সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চর ইচলীর ২৫৪ দশমিক ২৩ একর খাসজমি পরিদর্শন করেন।

পরবর্তী সময়ে বেজা কর্তৃপক্ষকে দেওয়া চিঠিতে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেন, ‘গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চর ইচলীতে নির্বাচন করা জমিটি খাস হওয়ায় সরকারকে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে না। শ্রমিকের সহজলভ্যতার কারণে বিনিয়োগকারীরা হালকা, মাঝারি ও ভারী শিল্প গড়ে তুলতে পারবেন। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে রংপুর অঞ্চলের ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষের। তিস্তা নদীর তীরবর্তী ওই এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে সড়ক, রেল, নৌপথের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, নেপাল, ভুটানসহ সারা দেশে সহজে পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে।’ কিন্তু পরবর্তী সময়ে রংপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, তিস্তা নদীভাঙন, বন্যার কারণে নদীশাসন না হওয়ায় গঙ্গাচড়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। 

অন্যদিকে শিল্প-উদ্যোক্তারা বলছেন, শিল্পকারখানা স্থাপনে পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি না হলে রংপুরে গ্যাস সরবরাহের সুফল পাওয়া যাবে না। চলতি বছর গ্যাস সরবরাহ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সরকার রংপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল, ইপিজেড কিংবা বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ নেয়নি। গ্যাসের স্টেশন এলাকার আশপাশে নেই সরকারি খাসজমি। ফলে ভবিষ্যতে সরকার শিল্পকারখানা স্থাপনের জমি নির্বাচন করলেও সেখানে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ কঠিন হয়ে যাবে। সরকারকে পুনরায় জমি অধিগ্রহণ, গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপনসহ বিভিন্ন খাতে অধিক অর্থ ব্যয় করতে হবে। 

গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, দেশের উত্তর জনপদে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে আর্থসামাজিক উন্নয়ন, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টিসহ বাণিজ্যিক ও অন্যান্য গ্রাহকের গ্যাসের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দেড়শ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ১ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। ‘বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পে’ ইপিসিভিত্তিতে সৈয়দপুরে একশ এমএমএসসিএফডি (মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক ফিট পার ডে) ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সিজিএস (সেন্ট্রাল গ্যাস সাপ্লাই), রংপুরের তারাগঞ্জে একটি ভালভ স্টেশন, রংপুর নগরীতে ৫০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন একটি টিবিএস (টাউন বর্ডার স্টেশন), মিঠাপুকুরে একটি ভালভ স্টেশন এবং পীরগঞ্জে ২০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতার একটি টিবিএস স্থাপন করা হচ্ছে। এর মধ্যে সৈয়দপুর সেন্ট্রাল গ্যাস সাপ্লাই পয়েন্টসহ রংপুর নগরীর তালুকদার মৌজার টাউন বর্ডার স্টেশন ও পীরগঞ্জ সদরের টাউন বর্ডার স্টেশন থেকে প্রাথমিকভাবে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। ভবিষ্যতে চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তারাগঞ্জ ও মিঠাপুকুর ভালভ স্টেশন থেকে গ্যাস সরবরাহ করবে কর্তৃপক্ষ। 

বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এসএম আমির হোসেন বলেন, ‘পাইপলাইনে স্থাপনের কাজ প্রায় শেষের পথে। বগুড়া থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত গ্যাসের লাইন স্থাপনে ৬টি নদী পড়েছে। এর মধ্যে ঘাঘট-১ ও করতোয়া-২-এর পাইপলাইন নিয়ে যাওয়ার কাজ বাকি আছে। এ ছাড়া এলসি জটিলতায় বিদেশ থেকে গ্যাসস্টেশনের জন্য সরঞ্জমাদি আনতে পারছেন না ঠিকাদাররা। তাই স্টেশনগুলো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। তবে আশা করছি প্রকল্পের মেয়াদেই আমরা বগুড়া থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করতে পারব।’ 

রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী রংপুরে ইপিজেড স্থাপনের অনুমোদন দিলেও তা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গাইবান্ধায়। এ ছাড়া রংপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল কিংবা বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনে তেমন দৃশ্যমান উন্নয়ন নেই। প্রধানমন্ত্রী রংপুরে গ্যাস দিচ্ছেন। আমি আশা করি দ্রুত অর্থনৈতিক অঞ্চল, ইপিজেড ও বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনেরও উদ্যোগ নেবেন তিনি। এটি না হলে রংপুরে গ্যাস কোনো উপকারে আসবে না।’ 

রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বলেন, ‘রংপুর হয়ে গ্যাস নীলফামারীতে যাচ্ছে। কিন্তু রংপুরের উদ্যোক্তা কিংবা বাইরের বিনিয়োগকারীরা কীভাবে শিল্পকারখানা গড়ে তুলবেন, তার রূপরেখা তৈরি হয়নি। ফলে আমরা গ্যাস সরবরাহ নিয়ে এখনই তেমন সন্তুষ্ট হতে পারছি না। এ ছাড়া যেসব স্থানে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে সেখানে গ্যাস সরবরাহ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। গ্যাস সরবরাহ করতে হলে সরকারকে একটি আলাদা প্রকল্প তৈরি করে কাজ করতে হবে। এতে সরকারের অনেক অর্থ ব্যয় হবে এবং উদ্যোক্তারা গ্যাস আসার পরও শিগগিরই শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে পারবেন না। ফলে উত্তরাঞ্চলে যে বেকার সমস্যা রয়েছে, সেটির দ্রুত সমাধান হচ্ছে না।’ 

এ ব্যাপারে রংপুর জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘রংপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনোটিরই অনুমোদন হয়নি। রংপুরে দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের মাধ্যমে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত-করণভিত্তিক শিল্পকারখানা চালুর ওপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেছেন। এ ছাড়া যেসব স্থানে শিল্পনগরী গড়ে তোলা হবে, সেখানে গ্যাস সরবরাহ করা হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা