× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান খেলাফত

শরীফ স্বাধীন, মাগুরা

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩ ১২:২৩ পিএম

বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী খেলাফত হোসেন। প্রবা ফটো

বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী খেলাফত হোসেন। প্রবা ফটো

বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী খেলাফত হোসেনের বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামে। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েন দেশমাতৃকা রক্ষার সংগ্রামে।

পঁচাত্তর বছর বয়সে এসে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার আফসোস- তার বেশিরভাগ সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেও তার ভাগ্যে সেটি জোটেনি আজও। এই একটি স্বীকৃতির আশায় ঘুরছেন এ দপ্তর থেকে ও দপ্তরে। ঘুরতে ঘুরতে তিনি আজ ক্লান্ত। মুক্তিযুদ্ধের সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা মনে করে প্রতিনিয়ত অশ্রু ঝরাচ্ছেন তিনি।

সম্প্রতি প্রতিদিনের বাংলাদেশ কাজী খেলাফত হোসেনের খোঁজ নেয়। গ্রামের বেশকিছু বয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি এলাকায় গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত। খেলাফত হোসেন যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন, এমন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার নাম ও ঠিকানা পাওয়া যায়।

জানা যায়, খেলাফত হোসেনের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন লক্ষ্মীকোল গ্রামের খাইরুল আলম (৭০) ও হাজীপুরের মুন্সী আব্দুর রউফ (৭২)। তারা দুজনই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন এবং সনদও পেয়েছেন। সনদপ্রাপ্ত সহযোদ্ধারা সবাই খেলাফত হোসেনের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সত্যতা স্বীকার করেছেন। 

খাইরুল আলম (৭০) ও আব্দুর রউফ বলেন, ১৯৭১ সালে খেলাফতসহ তারা লিয়াকত গ্রুপে যোগদান করেন। খেলাফত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই এলাকার আলমখালী, বড়ইচারা, দারিয়াপুর, গাংনালিয়া, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন রণাঙ্গনে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। আলমখালীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদারদের সম্মুখযুদ্ধ হলে সেখানে বেশকিছু পাকিস্তানি সেনা প্রাণ হারায়। জীবন বাজি রেখে খেলাফত হোসেন সেদিন সম্মুখযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

আরেক স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম মহব্বত আলী বলেন, খেলাফত হোসেন মুজিব বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। আজও তিনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি। অথচ অনেকে মুক্তিযুদ্ধ না করেও স্বীকৃতি পেয়েছেন, নিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধার ভাতা ও রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা। এটা অত্যন্ত কষ্টের।

খেলাফতের বাড়িতে যত্নে রাখা কাগজপত্রে দেখা যায়, ২০১০ সালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সনদের জন্য আবেদন করেছিলেন। ২০১৩ সালে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় আবেদনপত্রের অনুকূলে উপজেলায় সরেজমিন তদন্ত করা হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনামূলক পত্র পাঠিয়েছিল। তারই আলোকে ২০১৯ সালে ডিএসবির এক উপপরিদর্শক ফাউজুল করিম দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৫৪ পাতার প্রতিবেদন দেন। 

প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘কাজী খেলাফত হোসেন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মুজিব বাহিনীর গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭২ সালে পুলিশ বিভাগে চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন। বিভিন্ন সময় মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রস্তুতকালে চাকরির সুবাদে জেলার বাইরে থাকায় তার নাম গেজেটে তালিকাভুক্ত হয়নি।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী খেলাফত হোসেন বলেন, তার এক ছেলে পাঁচ মেয়ে। অভাবের সংসার। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে সেদিন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুজিব বাহিনীর সক্রিয় যোদ্ধা হিসেবে থানা কমান্ডার লিয়াকত আলীর দলে যোগ দিয়েছিলেন। তার সহযোদ্ধা ছিলেন আবু খায়ের, গোলাম মোস্তফা, মশিউর, মুন্সী আ. রউফসহ অনেকে। 

খেলাফত হোসেন আরও বলেন, ‘১৯৭২ সালে আমরা ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশের চাকরিতে প্রবেশ করি। নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করে আজও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলাম না। এটাই আমার জীবনের বড় অতৃপ্তি। বর্তমান সরকারের কাছে আমার জীবনের শেষ চাওয়া, মৃত্যুর আগে আমাকে যেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।’

মাগুরা সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. জহুর-ই-আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কাজী খেলাফত হোসেন এখনও মুক্তিযোদ্ধার সনদ পাননি, এটা জতির জন্য লজ্জার। তিনি ১৯৭১ সালে সম্মুখযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তাকে আমি ওই সময় থেকেই চিনি। চাকরিকালীন সৎ জীবনযাপন করতেন। তাই তেমন কিছুই করতে পারেননি। খেলাফত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ছেলের চাকরি দিয়ে পরিবারের সচ্ছলতা ফেরানোর সুযোগ ছিল। সেটাও তার ভাগ্যে জোটেনি।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা