× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি দখল করে আফসার বাহিনী

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩ ১২:০৩ পিএম

আ. মান্নান।

আ. মান্নান।

টানা ৯ মাস আফসার বাহিনীর হয়ে ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন ভালুকার মুক্তিযোদ্ধা আ. মান্নান। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর এলাকাটি হানাদারমুক্ত হয়। তবে যুদ্ধের স্মৃতি এখনও মনে আছে গোয়ারী গ্রামের বীর সন্তান আ. মান্নানের। 

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভালুকায় বিশাল এক বাহিনী গড়ে তোলা হয়। এটি গড়ে তোলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া বাঙালি সুবেদার মেজর (অব.) আফসার উদ্দিন আহমেদ। এই বাহিনীর হয়েই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন আ. মান্নান। 

৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় যুদ্ধের প্রস্তুতি। ২৫ মার্চ রাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে  নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে হানাদার বাহিনী। ওই সময়ের স্মৃতিচারণ করে আ. মান্নান বলেন, ‘২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। ১৭ এপ্রিল জানতে পারলাম, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মল্লিকবাড়ী গ্রামে আফসার উদ্দিন একটি ব্যাটালিয়ন গঠন করছেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। এই বাহিনীতে আরও ছিলেন মো. আমজাদ হোসেন, আবদুল খালেক মিঞা, নারায়ণ চন্দ্র পাল, আ. বারেক মিঞা, আবদুল মান্নান, অনিল চন্দ্র সাংমা ও মো. ছমর উদ্দিন মিয়া। তাদের মধ্যে মল্লিক বাড়ির আবদুল মান্নান ভাওয়ালিয়াবাজু যুদ্ধে এবং অনিল চন্দ্র সাংমা ডুমনিঘাট যুদ্ধে শহীদ হন।’ 

দেশমাতৃকাকে মুক্ত করতে আফসার উদ্দিনের নেতৃত্বে অস্ত্র সংগ্রহ, প্রশিক্ষণসহ নানা কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের কথা জানান আ. মান্নান। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে ছিল চাচাত ভাই আ. খালেক, করিমসহ অনেকে। শুরুর দিকে আমাদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। জানতে পারলাম ভালুকার রাজৈ গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী মো. আবদুল হামিদ মিঞার কাছে একটি রাইফেল ও ৩১ রাউন্ড গুলি আছে। ২০ জুন চানপুর এলাকায় ইপিআর সদস্যদের ফেলে যাওয়া সাতটি রাইফেল দখলে এলে আফসার বাহিনীর মনোবল আরও বেড়ে যায়। শত্রুদের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাই দিয়ে তাদের মোকাবিলা করি। আফসার বাহিনী ভালুকা, ত্রিশাল, ফুলবাড়িয়া, গফরগাঁও, শ্রীপুর, জয়দেবপুর, মীর্জাপুর, কালিয়াকৈরসহ আশপাশের বেশ কিছু এলাকায় মুক্তাঞ্চল গড়ে তুলতে সমর্থ হয়।’ 

রণাঙ্গনের এই সাহসী সৈনিক বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণশিবির গঠনের খবর ছড়িয়ে পড়লে ইপিআর-আনসার-মোজাহিদদের ভেতর থেকে বাঙালিদের অনেকেই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আফসার বাহিনীতে যোগ দিতে থাকেন। তখন আমার বয়স প্রায় ২০ বছর। আমার মতো ছাত্ররা সংখ্যায় বেশি ছিল। কিছু আনসার, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর লোকও ছিলেন। আমাদের বাহিনী পরিচালিত হয় সেনাবাহিনীর কায়দায়। আফসার বাহিনী ছিল ২৫টি কোম্পানির সমন্বয়ে। প্রতিটি কোম্পানিতে ছিল তিনটি প্লাটুন ও তিনটি সেকশন। আর প্রতি সেকশনে ছিলেন ১৫ জন করে মুক্তিযোদ্ধা। আফসার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ছিলেন মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ। সহকারী অধিনায়ক ছিলেন পাঁচজন। পাশাপাশি ১০ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ ছিল। জুনের মাঝামাঝি নাগাদ ভালুকা সদর ও মল্লিকবাড়ী বাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালু ছিল রাজৈ ইউনিয়নের খুর্দ্দ গ্রামে। আফসার বাহিনী ১৫০টি লড়াইয়ে অংশ নেয়। ২১ মে ভালুকা থানা আক্রমণ করে ১৬টি রাইফেল, ৩০টি বেয়নেট ও ১ হাজার ৬০০ রাউন্ড গুলি হস্তগত করা হয়। ২৫ জুন ভাওয়ালিয়াবাজু সম্মুখযুদ্ধে ৯৫ জন পাকিস্তানি সেনাকে খতম করি। এ যুদ্ধে ১৫ শতাধিক পাকিস্তানি সেনার একটি দল তিন ভাগ হয়ে ভালুকা থানায় ঘাঁটি করার জন্য গফরগাঁও থেকে রওনা দেয়। ৪১ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ভাওয়ালিয়াবাজু বাজার ঘাটে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে নদী পারাপারে বাধা দিই। সম্মুখযুদ্ধের মাধ্যমে তাদের প্রতিরোধ করি। আমরা মাত্র দুটি এলএমজি ও ৩৭টি রাইফেল দিয়ে যুদ্ধ শুরু করি। ৪৮ ঘণ্টা লড়াই চলে। পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তা করতে সেখানে হেলিকপ্টার থেকেও সেনা নামানো হয়।’ 

২৮ জুন ভালুকা থানায় গ্রেনেড হামলা করে হানাদার বাহিনীর সদস্যকে খতম করে আফসার বাহিনী। ১৯ জুলাই সিডস্টোর যুদ্ধে ২৩ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। এ ছাড়া ডাকাতিয়া-আংগারগাড়া বাজার, ভায়াবহ ঘাট, ভরাডোবা, ধামশুর, বাকশী নদীর ব্রিজের পাড়, বরাইদ, বান্দিয়া, তালাব, চানপুরের যুদ্ধেও বীর বিক্রমে শত্রু বাহিনীর জবাব দেন মুক্তিযোদ্ধারা। 

৬ ডিসেম্বর ভালুকা সদরে সেনা ক্যাম্প আক্রমণ করে ২০ পাকিস্তানি সেনা ও অনেক রাজাকারকে খতম করা হয়। গফরগাঁও, ত্রিশালের বিভিন্ন স্থানেও হানাদার বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে আফসার বাহিনী। ১৭ জুলাই গফরগাঁওয়ে দেউলপাড়া টহল ট্রেন আক্রমণ করা হয়। এ ছাড়া মশাখালী রেলওয়ে ফরচঙ্গী পুলের পাড়ের যুদ্ধ, শীলা নদী আক্রমণ, প্রসাদপুর যুদ্ধেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন মুক্তিযোদ্ধারা। ৯ ডিসেম্বর গফরগাঁওয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ঘাঁটিতে আক্রমণ করে তা দখলে নিয়ে নেয় আফসার বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা, কর্মদক্ষতা ও সাফল্যের জন্য আফসার উদ্দিনকে মেজর পদে অধিষ্ঠিত করেন মিত্র বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবজি। আফসার বাহিনীকে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালে মেজর আফসার বাহিনী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা