বেড়া (পাবনা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩ ১৪:৫৭ পিএম
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩ ১৫:৫৫ পিএম
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে তাঁত বুনছেন কেরামত আলী। প্রবা ফটো
‘আগে আমার এক টাহাও আছিল না, এ্যাহন তাউ কিছু অইছে। মানষির বাড়িতে কাম করছি, এ্যাহন আমি আমার বাড়িত কাম করি। খ্যায়া আবার কিছু রাহি। আগের থ্যা ম্যালা বালো আছি।’ কথাগুলো বলছিলেন পাবনার বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা কেরামত আলী। সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করেছে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লাখো মানুষ। দিন বদলের গল্প শোনা যাচ্ছে অনেক পরিবারে।
একটা সময় মানুষের করুণার পাত্র হয়ে বেঁচে থাকলেও বর্তমানে ভূমিসহ ঘরের মালিক হয়েছেন অনেকেই। পাশাপাশি আয় দিয়ে নানা কাজে সম্পৃক্ত হয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নও বুনছেন। তাদের একজন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা কেরামত আলী। তিনি ঘরের বারান্দায় হস্তচালিত তাঁত বসিয়ে তৈরি করছেন লুঙ্গি। এ থেকে ভালো আয় করেন। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি লুঙ্গি তৈরি করেন। যার প্রতিটির পাইকারি মূল্য ৩০০ টাকা। পরিবার নিয়ে এবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তিনি। অভাব অনটনের সংসারে তার এমন কাজ দেখে অনেকে স্বপ্ন দেখছেন ঘুরে দাঁড়ানোর।
কেরামত আলী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আগে মানুষের কারখানায় কাজ করতাম। যে পারিশ্রমিক পেতাম তা দিয়ে টেনেটুনে চলত। নিজের কোনো জায়গা-জমি ছিল না। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছি, বারান্দায় একটা তাঁত বসিয়ে কাজ করছি, আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি।’
কেরামত আলীর স্ত্রী ছবি খাতুন বলেন, ‘চার সন্তান নিয়ে বাস্তুহারা ছিলাম, মাথা গোঁজার মতো ব্যবস্থা ছিল না। আমার স্বামী আগে বাইরে বাইরে কাজ করেছে। এখন বাড়িতেই কাজ করেন। আমরা অনেক শান্তিতে আছি। ছেলেরাও নগড়বাড়ি ঘাটে বিভিন্ন কাজ করছে ‘
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুর আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে শুধু ভূমিসহ একটি করে ঘরই দেননি, তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছেন। হাটুরিয়া-নাকালিয়ায় ৩৩টি ভূমিহীন পরিবার রয়েছে। তাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তাদের একজন তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন। খুব সুন্দরভাবে জীবন যাপন করছেন। মূল স্রোতে কিন্তু ফিরে এসেছে। আর্থিক সচ্ছলতার ভেতর দিয়ে জীবন যাপন করছেন।
ইউএনও বলেন, ‘বেড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে সব সময় আমরা তাদের তদারকি করছি। যারা তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে চান, তাদের আমরা চরকা কিনে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। এর মাধ্যমে তাঁত শিল্পকে আমরা ধরে রাখতে পারছি। আবার কর্মহীন মানুষকে সচ্ছলতার এনে দিতে পারছি।’