× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

যাবজ্জীবন সাজা শেষে কম্পিউটারের দোকান পেলেন জাহাঙ্গীর

লক্ষীপুর প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩ ১৫:৩৮ পিএম

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩ ১৭:৩৯ পিএম

নিজের কম্পিউটারের দোকানে জাহাঙ্গীর। প্রবা ফটো

নিজের কম্পিউটারের দোকানে জাহাঙ্গীর। প্রবা ফটো

কারাগার শাস্তির স্থান নয়, সংশোধনাগার। কারণ কারাগারে নতুন জীবন গঠনে বন্দিদের বিভিন্ন ধরনের কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আর কারামুক্ত হয়ে প্রশিক্ষণ অনুযায়ী কাজ করে নতুন জীবনের সূচনা করেছেন অনেকেই। আবার কারাগারে প্রশিক্ষণকালীন কাজের দক্ষতা, আচার-আচরণে মুগ্ধতা ছড়াতে পারলেই মিলছে সরকারি সহায়তা। তেমনি সরকারি সহায়তা পেয়ে কম্পিউটার দোকানে নতুন জীবনের সূচনা করেছেন লক্ষীপুরের জাহাঙ্গীর আলম। 

জাহাঙ্গীর সদর উপজেলার উত্তর মহাদেবপুর গ্রামের মো. মজিবুল হকের ছেলে। স্ত্রীকে হত্যার দায়ে তিনি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২৪ বছর আড়াই মাস কারাবন্দি ছিলেন। কারাগারে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেন। এখন তিনি জীবনকে নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করছেন। এতে সরকারও সহায়তা করেছে, তাকে একটি কম্পিউটারের দোকান উপহার দেওয়া হয়েছে। 

গত বুধবার রায়পুরের সোনাপুর ইউনিয়নের রাখালিয়া বাজারে জাহাঙ্গীরের বিছমিল্লাহ টেলিকম অ্যান্ড ফটোশপ দোকানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক নুরুল ইসলাম পাটওয়ারী, রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনজন দাশ, জেলা কারাগারের সুপার নজরুল ইসলাম, রায়পুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাসেল ইকবাল, সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইউসুফ জালাল কিসমত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর যাবজ্জীবন সাজা শেষে মিলন কামাল নামে একজনকে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের আবদুল্লাহপুর গ্রামে সেলুন উপহার দেওয়া হয়। 

জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে হত্যার দায়ে ১৯৯৮ সালের ১৬ অক্টোবর কারাগারে যান জাহাঙ্গীর। ২০০১ সালে জেলা জজ আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে উচ্চ আদালতে আপিল করলে রায় সংশোধন করে বিচারক তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তিনি ২৪ বছর আড়াই মাস কারাভোগ শেষে জানুয়ারি মাসে মুক্ত হন। 

তবে কারাগারে থাকাকালীন কম্পিউটার প্রশিক্ষণে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন জাহাঙ্গীর। প্রায় আট মাস আগে জেলা প্রশাসক কারাগার পরিদর্শনে যান। তখন গ্রাফিক্সে জাহাঙ্গীরের আঁকা পদ্মা সেতুর নকশা তার নজরে আসে। জেলা প্রশাসকের ভাষ্যমতে, পদ্মা সেতুর নকশাটি অসাধারণ হয়েছে।

পরে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক নুরুল ইসলাম পাটওয়ারীকে বিষয়টি বিবেচনার জন্য বলেন জেলা প্রশাসক। তার পরিপ্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীর কারামুক্ত হওয়ার পর সমাজসেবা অধিদপ্তরের অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির আওতায় জাহাঙ্গীরকে কম্পিউটারের দোকানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। 

জেলা সমাজসেবা কার্যালয় জানায়, অপরাধীদের সংশোধনের লক্ষ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তর বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির আওতায় জাহাঙ্গীরকে কম্পিউটারের দোকানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। 

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যেদিন বিচারক আমাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন, সেদিনই আমি মরে গেছি। আল্লাহ রহম করায় আমি বেঁচে আছি। পরে আপিল করলে উচ্চ আদালত আমাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। আমি অপরাধের সাজা পেয়েছি। কারাগারে থাকাকালীন আমি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়েছি। সরকার আমাকে একটি কম্পিউটারের দোকান উপহার দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বাকি জীবন ভালোভাবে অতিবাহিত করতে সকলের দোয়া ও সহযোগিতা প্রয়োজন। 

জেলা কারাগারের সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, কারাগারে এখন বন্দিরা নিজেদের সংশোধন করতে কাজ করছেন। লক্ষীপুরে এ নিয়ে কারামুক্ত দুই ব্যক্তিকে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে জীবনকে নতুন করে সাজানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি জাহাঙ্গীরের ভবিষ্যৎ জীবন উজ্জ্বল হবে। তবে চারপাশের মানুষকে তাকে সহযোগিতা করতে হবে। অপরাধীকে নয়, অপরাধকে ঘৃণা করতে হবে। জাহাঙ্গীরের প্রতি কেউ বৈরী আচরণ না করে সহযোগিতা করতে আহ্বান জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কারাগারে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও জীবিকা-নির্বাহের জন্য সরঞ্জমাদি দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। সমাজসেবা বিভাগের মাধ্যমে অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির মাধ্যমে বন্দিদের এ সেবা দিয়ে আসছে। জাহাঙ্গীরকে সরকারের পক্ষ থেকে উপহার দেওয়া হয়েছে। জীবনের ২৪টি বছর কারাবন্দি থেকে নিজেকে সংশোধনের চেষ্টা করেছেন তিনি। ভবিষ্যতকে সুন্দর করে সাজাতে তাকে সহযোগিতা করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান তিনি। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা