ফরিদপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩ ১৭:০২ পিএম
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩ ১৯:৩১ পিএম
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় স্কুলের শ্রেণিকক্ষে আটকে রেখে এক কিশোর ও তার বাবাকে নির্যাতন। প্রবা ফটো
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় স্কুলের শ্রেণিকক্ষে আটকে রেখে এক কিশোর ও তার বাবাকে নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রবিবার (২৬ মার্চ) মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, গত ১৭ মার্চ দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে ১৫ বছর বয়সি ওই কিশোর ও তার বাবাকে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মো. ফয়সাল নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষে নির্যাতনের এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার ৯ দিন পর ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। নির্যাতনের শিকার ইয়ামিন মৃধা ২০ মার্চ বাদী হয়ে মো. কুতুবউদ্দিন, মো. ফয়সাল ও মো. জহিরুলের নামসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৮-১০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
মামলার পরপরই দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। তবে তারা বর্তমানে জামিন নিয়ে বাইরে রয়েছেন। ঘটনার মূল হোতা কুতুবউদ্দিন পলাতক থাকলেও রবিবার ফয়সাল নামে অপর আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের সালামতপুর গ্রামের বাসিন্দা ইয়ামিন মৃধা ছেলে রাজন মৃধা ও মেয়ে ইভাকে নিয়ে মাঝকান্দি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।
নির্যাতনের শিকার ওই কিশোর ও তার বাবা আলাদা জুট মিলে শ্রমিকের কাজ করেন। কিশোরের মা প্রবাসী ও সৎ বোন দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। বাবা-ছেলে মিলে দ্বিতীয় শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতন করেছেন এমন অভিযোগের সূত্র ধরে ১৭ মার্চ তাদের আটক করে কয়েকজন যুবক ও নারী। তারা স্কুলের শ্রেণিকক্ষে আটকে রেখে বাবা-ছেলের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায়।
নির্যাতনের শিকার ইয়ামিন মৃধা বলেন, ‘আমার মেয়ে ইভাকে আড়ুয়াকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করার পর থেকেই ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক লিপি আক্তার নিঃসন্তান হওয়ায় ইভাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তার বাড়িতে পালিত সন্তান হিসেবে নেওয়ার পাঁয়তারা চালায়। দুই মাস আগে ইভাকে ওই শিক্ষক আমাকে না বলে তার বাড়িতে প্রায় সপ্তাহ খানেক রাখে। নির্যাতনের ঘটনার তিনদিন আগে ইভাকে আবার তার বাড়িতে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে শিক্ষক লিপি আক্তারকে ফোন দিলে তিনি শুক্রবার (১৭ মার্চ) আমাকে ও ছেলেকে স্কুলে যেতে বলে। প্রথমে আমি ছেলেকে স্কুলে পাঠালে তাকে আটকিয়ে রেখে আমাকে যেতে বলে। আমার যাওয়ার পরেই কুতুবউদ্দিনসহ আসামিরা মেয়েকে স্ট্যাম্পে লিখে দিতে বলে। তাদের কথায় রাজি না হওয়ায় আমাদের বাবা-ছেলের ওপর তারা নির্যাতন চালায়।’
তবে সহকারী শিক্ষক লিপি আক্তার তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দশোরাত চন্দ্র দাস বলেন, ‘ওইদিন ছিল জাতীয় শিশু দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। এতো বড় একটা ঘটনা ঘটলো তা প্রধান শিক্ষক এ পর্যন্ত আমাকে বলেননি। লোক মারফত জানতে পেরেছি। তবে বাবা-ছেলেকে স্কুলের ভেতর মারধরের একটি ভিডিও আমি দেখেছি। এ রকম খারাপ কাজ যারা করেছে তাদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হোক।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কবিরুজ্জামান বলেন, ‘মেয়েটি এই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তো। ঘটনাটি জানাজানি হলে প্রথমদিকে লিখিত দিয়ে মেয়েটিকে তার বাবা একবার নিয়ে যায়। তবে বাবা-ছেলেকে পেটানোর ঘটনা জানার পর আমি দ্রুত পুলিশকে খবর দেই। আগে থেকে জানতাম না যে, আমার স্কুল কক্ষে এ রকম ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে।’
এ ব্যাপারে মধুখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘খুব শিগগিরই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বা শিক্ষকরা জড়িত আছে কি-না সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলেছি।’