শেরপুর উপজেলা ছাত্রলীগ
বগুড়া অফিস
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩ ২২:৩৪ পিএম
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৩ ০৮:৪১ এএম
শেরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সভাপতি গালিব সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ড্যানি। ছবি : সংগৃহীত
বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তিকারী ও হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামির নেতৃত্বে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নতুন কমিটির সভাপতি গালিব সরকারের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছিল এবং সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ড্যানি হত্যা মামলার আসামি।
চার মাস আগে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যায় শহরের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ কর্মীসভায় উপজেলা ছাত্রলীগের ১৩ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয়। কর্মীসভায় মৌখিকভাবে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদে গালিব সরকার ও সাধারণ সম্পাদক পদে হুমায়ুন কবির ড্যানির নাম ঘোষণা কারা হয়। এ ছাড়া সহসভাপতি রবিউল হাসান রুবেল, শাহরিয়ার মাহমুদ সম্রাট, রাফসান আল হাসান, যুগ্ম সম্পাদক পদে আনোয়ার পারভেজ, রাফিউজ্জামান সজল, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হক, নূর সাকাত জিম, মাহতিম সাকিব, মেজবাহ আল আশরাক, প্রকাশনা সম্পাদক নায়মুল হাসান ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ফারদিন আহম্মেদের নাম ঘোষণা করে জেলা ছাত্রলীগের নেতারা।
কমিটি ঘোষণার পর থেকেই দলের একাংশের নেতাকর্মী ও তাদের সমর্থকরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে। ঘোষিত কমিটিকে অবৈধ ও পকেট কমিটি আখ্যায়িত করে ছাত্রলীগ রক্ষায় অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি জানায় তারা। তাদের অভিযোগ, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে স্থানীয় ছাত্রলীগের পৌর ও দশটি ইউনিয়নের সভাপতি-সম্পাদকসহ নেতাকর্মীদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। এমনকি ওই কর্মীসভায় তাদের আমন্ত্রণও জানানো হয়নি।
সভাপিত গালিব সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে কটূক্তি করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে। ঢাকার মোহাম্মদপুরে গ্রাফিক আর্টস ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী থাকাকালে তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন। পরে তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়। এরপর গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল তাকে।
অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ড্যানিও হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। ২০২০ সালে জেলার শাজাহানপুর উপজেলার রাজারামপুর গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে খুন হন আলমগীর হোসেন। ওই ঘটনায় নিহতের ভাই মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে শাজাহানপুর থানায় মামলা করেন। সেই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ড্যানি। এমনকি ওই মামলায় বেশকিছুদিন জেলও খেটেছেন তিনি। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।
শেরপুর পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ আহম্মেদ সুমন বলেন, ‘একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, অথচ আমি নিজেই জানি না কর্মীসভার কথা। যেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বসবাস, আর সেই উপজেলায় ছাত্রলীগের এমন পরিস্থিতি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। এই কমিটি ছাত্রলীগের জন্য লজ্জার।’
কুসুম্বী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মিলন হাসান বলেন, ‘কাউকে না জানিয়ে গোপনে ওই কমিটি করা হয়। তা ছাড়া যারা কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন তারা ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন না। একজন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন, অন্যজন হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। এ ছাড়াও কমিটিতে যারা আছে তাদের অনেকেই বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সন্তান। অবিলম্বে ঘোষিত ওই কমিটি বাতিল করে ছাত্রলীগকে রক্ষার জোর দাবি জানাই।’
বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তির অভিযোগ অস্বীকার করে গালিব সরকার বলেন, ‘২০১৬ সালে যখন কলেজে পড়ি তখন প্রতিপক্ষরা ফেসবুকে আমার নাম দিয়ে ফেক আইডি খোলে। সেই আইডির মাধ্যমে আমাকে ফাঁসানোর জন্য বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আশালীন মন্তব্য করে। পরে আইসিটি আইনে মামলা হয়। কিন্তু আদালতে সেটি প্রমাণ না হওয়ায় আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এখন যেসব ছড়ানো হচ্ছে তা ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা।’
হত্যা মামলায় নাম থাকার কথা স্বীকার করে হুমায়ুন কবির ড্যানি বলেন, ‘হত্যা মামলাটির এখনও তদন্ত চলছে। আমার আত্মীয়রাই আমাকে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে ফাঁসিয়েছে। তবে আশা করছি, মামলায় আমার পক্ষে রায় আসবে।’
জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয় বলেন, ‘শেরপুরে একটি মৌখিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। যেসব অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’