× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

একজন শাজাহানের যুদ্ধপ্রস্তুতি

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৩ ১২:০৪ পিএম

মুক্তিযোদ্ধা মো. শাজাহান মোল্লা।

মুক্তিযোদ্ধা মো. শাজাহান মোল্লা।

‘২৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় আমরা খবর পাই পাকিস্তানি আর্মি ফেনী শহর দখল করতে আসছে। এলাকার লোকজন ঢাল-সড়কি, বন্দুক নিয়ে পাকিস্তানি আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাচ্ছে।’ বলছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মো. শাজাহান মোল্লা। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে মাদারীপুরের শিবচর থানার কমান্ডার। বর্তমানে তিনি শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

শাজাহান মোল্লার বয়ানে পাওয়া যাচ্ছে একাত্তরে গ্রামগঞ্জে কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছিল সে সময়ে তরুণ জনগোষ্ঠী; কীভাবে সাহায্য করেছিলেন সেনাসদস্য, আনসার সদস্য ও অন্যরা।

শাজাহন বলেন, ‘আমরা শিবচর সরকারি বরহামগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ ও নন্দকুমার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র মিলে শিবচর থানার হাতির বাগান জিইউসি ক্লাব মাঠে বাঁশের লাঠি দিয়ে ট্রেনিং শুরু করি। প্রশিক্ষক ছিলেন শিবচর থানার আনসার সদস্য শের আলী হাওলাদার। কিছুদিন পর মাদারীপুর শহর থেকে ক্যাপ্টেন শওকত আলী চিঠি দিয়ে চৌধুরী মুজিবর রহমান পান্না নামে এক সেনাসদস্যকে শিবচরে পাঠান। মুজিবুর আমাদের মাদারীপুর নিয়ে যান ১৬ এপ্রিল। মোসলেম উদ্দিন খান নামে এক বড় ভাই আমাদের সঙ্গে যান। তাকে নেতা বানিয়ে রওনা দিলাম। তিনি নেভির লোক ছিলেন। মাদারীপুরে নাজিমউদ্দিন কলেজ মাঠে মুক্তিযোদ্ধারা সমবেত হন। সন্ধ্যায় লেকের পাড়ে (বর্তমান পুলিশ সুপারের কার্যালয়) ক্যাপ্টেন শওকত আলী আমাদের ব্রিফ করেন। পরদিন আমরা ১৬৫ জন মুক্তিযোদ্ধা লঞ্চে করে নীলকমল যাই। নীলকমল থেকে হেঁটে অগ্রসর হতে থাকি। পরে নোয়াখালীর মাইজদী থেকে ট্রাক ও বাসে করে ফেনী যাই। ফেনীর পাঁচগাছিয়ায় থাকার ব্যবস্থা হয়। স্থানীয় এমপি খাজা আহমদ সাহেব আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করেন।’ এ সময় পাকিস্তানি আর্মি ফেনী শহর দখল করতে আসে। লোকজন ঢাল-সড়কি, বন্দুক নিয়ে তৈরি হয়।

শাজাহান বলেন, ‘হেঁটে ছাগলনাইয়া গিয়ে রাত যাপন করি। ২৫ এপ্রিল সকালে খিচুড়ি খেয়ে ট্রাকে করে রওনা দিই। পথে গ্রামের লোকজন আমাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে। আমরা ২৫ এপ্রিল বিলোনিয়া বর্ডারের কাছে ইপিআর ক্যাম্পে পৌঁছাই। দুপুরে ইপিআর ক্যাম্পে খাওয়ার ব্যবস্থা। মেজর এনাম আমাদের পাকিস্তানি আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ব্রিফ দেন। বিকাল আনুমানিক ৫টার দিকে আমরা লাইন ধরে ভারতে প্রবেশ করলাম। সোনামুড়া ক্যাম্পে ১৫ দিন ট্রেনিং নেওয়ার পর আসামের অম্পিনগর ক্যাম্পে যাই। অম্পিনগর ক্যাম্পে ভারতীয় সেনা অফিসার মেজর মানস রায় আমাদের ট্রের্নিং ইনচার্জ ছিলেন। এখানে আমাদের ৩০৩ রাইফেল, স্টেনগান, এলএমজি, গ্রেনেড প্রভৃতি অস্ত্র চালনা শিক্ষা দেওয়া হয়। আমাদের কয়েকজনকে বাছাই করে এক্সপ্লোসিভ ট্রেনিং দেওয়া হয়।’

ভারতের মাটিতেই মাদারীপুরে যুদ্ধে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সদর ও কালকিনি থানা নিয়ে ১ নং এরিয়া; শিবচর, জাজিরা ও রাজৈর থানা নিয়ে ২ নং এরিয়া; পালং, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাট থানা নিয়ে ৩ নং এরিয়া গঠিত হয় জানিয়ে শাজাহান বলেন, ‘দুই থানা কমান্ডার ও এরিয়া কমান্ডারদের জন্য তিনটি স্টেনগান এবং বাকি ১৭ জনের দলের প্রত্যেককে দুটি করে গ্রেনেড দিয়ে একজন গাইডসহ ৭ জুন আমাদের দেশে পাঠায়।’

শাজাহান বলেন, ‘আমরা শিবচরে এসে প্রথমে ডাকবাংলো অপারেশন করি। সেখান থেকে উৎরাইল নদী পার হয়ে ভাঙ্গার দিঘিরপাড় চলে যাই। উৎরাইল নদীতে পাকিস্তানি আর্মি বোঝাই লঞ্চে আক্রমণ করি। তারা তাড়া খেয়ে শিবচর চলে আসে। তৃতীয়বার জাজিরা থানা আক্রমণ করে একজন পুলিশ হত্যা করি এবং ১০টি রাইফেল ছিনিয়ে নিই। সর্বশেষ ২৫ নভেম্বর শিবচর থানা আক্রমণ করি। সেখানে কোনো আর্মি ছিল না। পুলিশের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে চারজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। কতজন পুলিশ নিহত হয়েছিল তা মনে নেই। একসময় তারা আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। একই সময় থানা ব্যারাক থেকে ১৪ জন রাজাকার ধরে নিয়ে আসি। ওই দিনই শিবচর থানা শত্রুমুক্ত হয়।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা