ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৩ ১৫:৩০ পিএম
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৩ ১৬:২৯ পিএম
ঘোড়াঘাটে লালমাটি গ্রামে মহিলা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। প্রবা ফটো
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে পুকুর খননের নামে নদী থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে এক আওয়ামী লীগের নেতার বিরুদ্ধে। নদী থেকে বালু উত্তোলনের পর সেই বালু রাখার জন্য নদীর পাশেই জমি লিজ নেওয়া হয়েছে। ২০২১ সাল থেকে তোলা হচ্ছে এই বালু। তিন বছর গড়িয়ে গেলেও থামছেই না বালু উত্তোলন। আজও শেষ হয়নি এই নেতার পুকুর খনন।
ভুক্তভোগীদের দাবি, এতে তাদের বাগানের আমের মুকুল নষ্ট হচ্ছে। আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ফসলি জমি নদীতে বিলীনের। এতে ৩৫টি পরিবার ভিটেমাটি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।
ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার লালমাটি গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে চলা মহিলা নদীতে দীর্ঘদিন থেকে এই বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতে আছেন স্থানীয় সামসুজ্জামান মানিক। তিনি একই গ্রামের জামায়াত নেতা জহুরুল হকের ছেলে। তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা বলে দাবি করেন। তবে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, তিনি এবং তার পরিবার জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
এদিকে নদী থেকে টানা বালু উত্তোলনের কারণে ৩৫টি হিন্দু বসতবাড়িসহ তাদের আবাদি জমি ও ফলের বাগান নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ভূক্তভোগীরা। তারা গত ৫ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর জেলা প্রশাসক বরাবর এমন একটি অভিযোগ দেন ভূক্তভোগী ৩ হিন্দু পরিবার। সেই অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক।
অভিযোগে হিন্দু পরিবারগুলো দাবি করেন, দীর্ঘদিন আগে মানিক ও এতাউল নামের দুজন ব্যক্তি নদীর পাড়ের কিছু জমি কিনে নেয়। এরপর তারা সেই জমিতে পুকুর খননের নামে দুটি ভারী ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করে। গত বছরের জুলাই মাসে স্থানীয়রা লিখিত অভিযোগ দিলে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্দেশে সেখানে অভিযান চালিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে উপজেলা প্রশাসন। এরপর আবারও গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে বালু উত্তোলন শুরু করে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।
লিখিত অভিযোগকারী বিশ্বনাথ রায় প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘নদীর পাড়ের কিছু আবাদি জমি ও বসতভিটা ছাড়া আমাদের কিছু নেই। নদীর গভীর থেকে নিয়মিত বালু তোলা হচ্ছে। বর্ষাকালে আমাদের বাড়িঘরসহ সবকিছু নদীতে তলিয়ে যাবে। আমরা একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছি। প্রশাসন এসে বন্ধও করে দিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার জোরে মানিক আবারও বালু উত্তোলন শুরু করে। আমাদের শেষ সম্বল ভিটেমাটি রক্ষা করতে আমরা সংখ্যালঘু লোকজন প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সামসুজ্জামান মানিক বলেন, ‘আমি আমার নিজের জমিতে পুকুর খনন করছি। উপজেলা প্রশাসন থেকে আমি পুকুর খননের লিখিত আদেশ নিয়ে এসেছি। হিন্দু পরিবারের দু'একজন আমাকে নিয়ে চক্রান্ত করছে।’
ঘোড়াঘাট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘পুকুর খননের বা শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। এটি কেবলমাত্র জেলা প্রশাসক দিতে পারে। তবে এই বালু উত্তোলনের বিষয়ে আমি জানি না। এরকম কোন আভিযোগ হাতে পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’